বাংলাদেশের নতুন কোচ: ভেঙ্কট রমন কিংবা কোনো উপমহাদেশীয়

ক্রিকেট মাঠে ও মাঠের বাইরে বাংলাদেশের সময়টা একেবারেই ভালো কাটছেনা। বিশ্বকাপের ব্যর্থতা, সিনিয়র ক্রিকেটারদের বেফাঁস কথাবার্তা তারপর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষেও সবগুলো ম্যাচে হার। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাই বড় সর একটা রদবদলের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। এছাড়া পরিবর্তন আসছে কোচিং স্টাফেও। নতুন হেড কোচ হিসেবে কারা বিবেচনায় আছেন সেই আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।

প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো যে আর বেশিদিন থাকছেন না সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে প্রশ্ন হচ্ছে কে হবেন বাংলাদেশের নতুন হেড কোচ। যে কয়টা নাম বাতাসে শোনা যাচ্ছে তাঁদের অধিকাংশই আবার উপমহাদেশীয়। অন্দরমহল থেকে খবর পাওয়া যায় উপমহাদেশীয় কোচের উপরই এবার ভরসা রাখতে চায় বিসিবি।

প্রথমেই নাম এসেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। তবে তাঁর সাথে ব্যাটে বলে না মিললে অন্য কোচ খুঁজতে থাকে বিসিবি। মাঝে অনেকগুলো নামই ক্রিকেটপাড়ায় ঘুরপাক খেয়েছে। তবে এবার যে নামটি জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে তিনি সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ভেঙ্কট রমন।

তবে এর সত্যতা জানার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান আকরাম খানের সাথে। তিনি অবশ্য কোচ নিয়ে তাঁদের ভাবনার কথা খেলা ৭১ কে জানিয়েছেন। তবে ভেঙ্কট রমনের সাথে আলোচনার ব্যাপারটা মুখে না বললেও অস্বীকারও করেননি তিনি।

আকরাম খান বলেন, ‘আলোচনা তো অনেকের সাথেই হচ্ছে। তবে আমরা এখনো সংক্ষিপ্ত তালিকা করিনি। এছাড়া আমাদের এই মুহূর্তে একজন হেড কোচ আছেন। ফলে নতুন কোন কোচের নাম এখন প্রকাশ্যে বলা ঠিক হবেনা।’

ফলে রমনের ব্যাপারটা একদম উড়িয়ে দিচ্ছেন না এই বোর্ড পরিচালক। ওদিকে ভেঙ্কট রমন ভারতের অন্যতম প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান বলে ভাবা হতো। ভারতের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটও খেলেছেন আশির দশকে। প্রায় দশ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি রমন। ১১ টেস্ট ও ২৭ ওয়ানডে ম্যাচেই থেমে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তাঁকে নিয়ে বেশ আক্ষেপও ছিল ভারতের ক্রিকেটে। তাঁর নাকি ভারতের ক্রিকেটকে আরো অনেক কিছুই দেয়ার ছিল।

যদিও পরবর্তীকালে রমন সেই আক্ষেপ মিটিয়েছেন। ভারতের ক্রিকেটটে অনেক কিছুই দিয়েছেন ক্রিকেট গুরু হিসেবে। তাঁর কোচিং ক্যারিয়ার শুরু হয় তামিল নাড়ু থেকেই। এরপর আইপিএলেও বিভিন্ন দলের ব্যাটিং কোচ ছিলেন। ২০১৪ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে সাকিব আল হাসানরা যখন আইপিএল জেতেন তখনো কলকাতার ব্যাটিং কোচ ছিলেন এই ভেঙ্কট রমন।

রমনের ক্রিকেট মেধা নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা ছিল ভারতের ক্রিকেটে। ধীরে ধীরে সেই মেধা নিজের কোচিং ক্যারিয়ারে কাজে লাগাতে শুরু করেন তিনি। ২০১৫ সালে বিসিসিআই তাঁকে ভারতের ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমীর ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব তুলে দেন। সেখানে ভারতের নতুন দিনের ব্যাটসম্যানদের তৈরি করতে থাকেন রমন।

২০১৮ সালে ভারতের নারী ক্রিকেট দলের হেড কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেখানেও সাফল্য পান তিনি। তাঁর সময়ে ভারত বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইন আপ তৈরি করতে সক্ষম হয়। এছাড়া তাঁর অধীনেই ২০২০ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে ভারত নারী দল। এবছরের মে মাস পর্যন্ত নারী দলের হেড কোচ হিসেবে কর্মরত ছিলেন রমন।

ফলে সবকিছু ব্যাটে বলে মিললে রমনকে দেখা যেতে পারে বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে। ওদিকে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বাদে কোন উপমহাদেশীয় কোচ বাংলাদেশের হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি। যদিও টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আগে ১৯৯৪ আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশের প্রধান কোচ ছিলেন মহিন্দর অমরনাথ। তবে প্রধান কোচ না হলেও সাকলাইন মুশতাক, সুনীল যোশীরা বাংলাদেশের কোচিং প্যানেলে কাজ করেছেন।

উপমহাদেশীয় কোচ বাংলাদেশের ক্রিকেটে খুব বেশি দেখা না গেলেও তাঁদের সময়ই দারুণ কিছু সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। হাথুরুসিংহের সময়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের একটা উত্থানই হয়েছে। এছাড়া সাকলাইন মুশতাকের সময়েও বোলিং ডিপার্টমেন্টে ইর্ষনীয় সাফল্য পেয়েছিল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও নানা সময়ে উপমহাদেশীয় কোচদের সুবিধা নিয়ে কথা বলেছেন। মূলত ভাষাগত কারণে ক্রিকেটারদের সাথে যোগাযোগটা অনেক সহজ হয়ে যায় উপমহাদেশীয় কোচদের ক্ষেত্রে। এছাড়া এই অঞ্চলের ক্রিকেট সংষ্কৃতিটাও তাঁরা দ্রুত বুঝতে পারেন। ফলে ক্রিকেটাররাও তাঁদের সাথে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বলে নানা সময় জানিয়েছেন।

সেজন্যই বোধহয় এই অঞ্চলেই কোচের খোঁজ চাল্লাচ্ছে বিসিবি। যদিও ভেঙ্কট রমনের সাথে পাকা কোন কথা হয়েছে বলে এখনো জানা যায়নি। তবে আকরাম খানের কথায় আভাষ মেলে একটা আলোচনা তো হচ্ছেই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link