২০০৩ সালের পর মালদ্বীপের বিপক্ষে জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। উল্টোদিক থেকে বললে ১৮ বছর ধরে লাল সবুজ দলটির বিপক্ষে অপরাজিত দ্বীপ রাষ্ট্রটি। আজ এমনি এক পরিস্থিতিতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিক মালদ্বীপের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। রাত দশটায় মালের ফুটবল স্টেডিয়ামে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দল দুটি।
প্রথম দুই ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট সংগ্রহ করে তালিকার দুই নাম্বার বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে নেপালের কাছে পরাজিত হয়ে এখনো পয়েন্টে মুখ দেখেছি আলী আশফাকরা। যেহেতু দেড় দশক ধরে অপরাজিত তারা তাই জয়ের পাল্লাটা অবধারিতভাবেই স্বাগতিক দলের উপরই ভারী থাকে। যে চিন্তাটা এতদিন বাংলাদেশ করতে পারেনি, সেই জয়ের স্বপ্নটা মালদ্বীপে বসেই দেখছেন অস্কার ব্রুজোনের শীষ্যরা।
বিশেষ করে প্রথম দুই ম্যাচ থেকে পাওয়া আত্ববিশ্বাস থেকেই জামাল ভুইয়ার দল এমনটি চাইছে। অথচ একসময় মালদ্বীপকে বলে কয়ে হারাতো বাংলাদেশ। ৮ গোলে জেতার রেকর্ডও যে আছে, সেটি বর্তশান প্রেক্ষাপটে একেবারেই অবিশ্বাস্য। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় মাত্র ৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটি অনেক বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে রাজত্ব করছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বর্তমান চ্যাম্পিয়নও তারা। এছাড়া আরও একটি ট্রফি জিতেছে। সে কারণে আজকের ম্যাচে পরিস্কার ফেবারিট হিসেবেই নামবে তাঁরা।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে দুই দলের কাছে ম্যাচটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। তবে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। মালেতে লাল-সবুজ দলের লড়াকু পারফরম্যান্স চোখে পড়েছে সব দলেরই। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে ১০ জন নিয়ে লড়াই করে সমীহ আদায় করে নিয়েছে। অন্যদিকে বিপরীতে শুন্য থেকে শুরু করতে হচ্ছে স্বাগতিকদের।
বাংলাদেশ এই ম্যাচ জিততে পারলে ফাইনালের পথে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর সেক্ষেত্রে আলী আশফাকদের বিদায় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে। তবে জিতলে স্বাগতিকরা ফাইনালে খেলার সম্ভাবনা জিইয়ে থাকবে। এখন যে করেই হোক স্বাগতিকদের বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যই থাকবে সফরকারীদের। ২০০৩ সালের সাফে সর্বশেষ জিতেছিল বাংলাদেশ।
এর আগে ও পরে সাফে এই পর্যন্ত চারবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ। এর মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র একবার। ২০০৩ সালে আরিফ খান জয়ের গোলে সর্বশেষ হেসেছিল লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। আর মালদ্বীপ জিতেছে বাকি দুই ম্যাচ। একটি ম্যাচ ড্র হয়েছিল। এছাড়া সর্বশেষ ২০১৬ সালে প্রীতি ম্যাচে টম সেইন্টফিটের অধীনে বাংলাদেশ ৫-০ গোলের বড় ব্যবধানে হেরেছিল।
এবার মালেতে সেই দু:সহ স্মৃতি ভোলার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ দল। আগের সব পরিসংখ্যান সামনে রেখেই আজ মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ যে বদলে দেওয়া এক দল, সেটা প্রমাণের জন্য মুখিয়ে রয়েছে জামাল, তপু, ইয়াসিনরা। যদিও কাজটি যে সহজ হবে না সেটা একরকম নিশ্চিত করেই বলা যায়। নয়তো৭ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ষ্টেডিয়ামকে বাংলাদেশিদের জন্য মাত্র ২০০ টিকিট বরাদ্দ থাকতনা। অনেকটা ভয় থেকেই মালদ্বীপ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন টিকিট দেওয়া বন্ধ করে পরে দু:খ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে আজকে বেশ বড় পরীক্ষাই দিতে হবে। স্বাগতিকদের ফরোয়ার্ড লাইন যে বেশ শক্তিশালী। অভিজ্ঞ আলী আশফাক, আলী ফাসিরের সঙ্গে বাকি যারা রয়েছেন তারা তো হুমকিই বাংলাদেশের জন্য। তাদের সবাইকে রোখার জন্য তপু-তারিক-ইয়াসিনদের সামনে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডরা গোল না পেলেও প্রতিপক্ষের অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে ভয় ধরিয়ে দিতে বেশ পারঙ্গমতা দেখােেচ্ছ। আগের দুই ম্যাচের ২ গোলের পেছনে ফরোয়ার্ডদের অবদানই ছিল বেশি।
এবার কোচ হিসেবে অস্কার ব্রুজোন মালদ্বীপে নিউ রেডিয়েন্টের হয়ে সাফল্য পেয়েছেন। তাই দ্বীপ দেশটির ফুটবলারদের সম্পর্কে কম-বেশি ভালোই জানা তার। এজন্য প্রতিপক্ষকে কীভাবে আটকাতে হবে, তা পুরোপুরিই গোপন রেখেছেন ব্রুজোন। মাঠের খেলাতেই বুঝিয়ে দেওয়ার মস্ত বড় পরিকল্পনা এ স্প্যানিশ কোচের। এছাড়া মালদ্বীপের দূর্বলতা কি সেটিও খুজে বের করেছেন বলে দাবি করেছেন।
বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে মালদ্বীপ ১৫৮তম আর বাংলাদেশ রয়েছে ১৮৯ নম্বরে। যদিও বাংলাদেশের জন্য কিছুটা হতাশার কথা হচ্ছে, মালদ্বীপের বিপক্ষে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও তেমন একটা সুবিধার নয়। যদিও র্যাঙ্কিং ব্যবধান কিংবা অতীত নিয়ে ভাবছে কোন ভাবনাই ভাবছে না বাংলাদেশ। যেভাবে প্রথম দুই ম্যাচ খেলেছে, বাকি দুটিতেও এমনভাবেই খেলতে চায়। আর আজকের ম্যাচে মালদ্বীপকে হারাতে পারলেই দেড় দশক পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল প্রায় নিশ্চিতই হয়ে যাবে বাংলাদেশের। কিন্তু দ্বীপ পাড়ি দেওয়ার কাজটা সহজ বেশ কঠিনই দলের জন্য।
এর আগে ঢাকায় ২০০৩ সাফ ফাইনালে টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে জেতার পর দেখা হওয়া ২০১১ দিল্লি ও ২০১৫ কেরালা সাফে ১-৩ গোলে এবং সবশেষ ২০১৬ সালে মালেতে প্রীতি ম্যাচে হার ০-৫ গোলের বড় ব্যবধানে। অথচ আশির দশকে এই মালদ্বীপকে ৮-০ ও ৫-০ গোলে হারানোর মতো সুখস্মৃতি আছে লাল সবুজ দলের। তবে আজকের ম্যাচের আগে একের পর এক দু:সংবাদ পাচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ম্যাচে লাল কার্ড দেখে খেলতে পারবেন না বিশ্বনাথ ঘোষ, নেই দুই কার্ড পাওয়া রাকিবও।
আর সর্বশেষ খবর পিঠের ব্যাথায় খেলতে পারবেন না ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আতিকুর রহমান ফাহাদও। তবে ওসব নিয়ে না ভেবে যারা আছেন তাঁদের নিয়ে। ভাবছেন কোচ ব্রুজোন। দুই খেলোয়াড় না পাওয়ার মতো ম্যাচের সময় নিয়েও ইতিবাচক মনোভাব অস্কারের, ‘আমরা দুই ম্যাচ বিকেল বেলায় খেলেছি। মালদ্বীপ সবগুলোই রাতে খেলবে। আজকের ম্যাচ আমরা প্রথমবারের মতো রাতে খেলব। ফ্লাডলাইটের আলোয় খেলা কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশেও ফ্লাডলাইটের আলোয়া খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বলতে পারেন পুরো ৩ পয়েন্টের জন্যই মাঠে নামব আমরা।’
বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থাকলেও রাতের আলোয় স্বাগতিক দর্শকদের বিরুদ্ধে খেলাটাও একটা চ্যালেঞ্জই বটে। রাতের আলোয় অনুশীলন করার সুযোগ অবশ্য বাংলাদেশ এখনো পায়নি মালদ্বীপ এসে। গত দুই ম্যাচে গোল করেছেন দুই ডিফেন্ডার, ফরোয়ার্ডদের কোনো গোল নেই, যা দলের জন্য চিন্তার কারণ। ভারত ম্যাচের আগে বাংলাদেশের জন্য যেমন হুমকি ছিলেন সুনীল ছেত্রী আর আজকের ম্যাচে আলী আশফাক।
সাফের সর্বকালের সেরা গোলদাতাও ৩৬ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। আশফাককে রুখে দেবার বিষয়ে অস্কার বলেন, ‘অবশ্যই তাকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে। সেটা এখানে প্রকাশ যোগ্য মতো নয়। শুধু এটুকু বলতে পারি, আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা রক্ষণ দেখা যাবে এই ম্যাচে।’
এদিকে মালদ্বীপ কোচ সুজেইন সমীহ করেছেন বাংলাদেশকে। বিশেষ করে অস্কারের আক্রমণ কৌশল নিয়ে সতর্ক কোচ হয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের আক্রমণভাগটা এবার কিছুটা ভিন্ন। ভারতের বিপক্ষে চেষ্টা করেছে প্রতিআক্রমণে খেলার যা নিয়ে চিন্তা করছি। তবে তাদের ওয়ার্ক রেট ও গতি দেখলে অনেক ইতিবাচক দিক আছে বলে মনে হয়। সেটপিসেও ভালো বলে মনে হয়। আমাদের এই বিষয়ে পুরোপুরি সজাগ থাকতে হবে।’ আজকের ম্যাচটা জিতে ফাইনালের চিন্তাটা কমিয়ে রাখতে চায় বাংলাদেশ।