বাংলাদেশের অবস্থান ‘অপরিবর্তিত’

আগের দুই আসরে ফাইনাল খেলা গেলো। তাইতো এবার অন্তত আরও একবার ফাইনাল খেলার আশা নিয়েই আরব আমিরাতের বিমানে চড়ে বসেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তাঁরা আশা না করলেও তো বাংলাদেশের পাগলাটে ভক্তরা ঠিকই আশা করেছিলেন। হায়! সব আশার গুড়ে মরুর বালি।

প্রথম রাউন্ডেই বাদ বাংলাদেশ। জিততে পারেনি একটি ম্যাচও। এই আক্ষেপে মুখ লুকিয়ে রাখার সুযোগটাও ঠিক কই? এর আগের দুই আসরের ফাইনাল খেলা দলটি নাকি এবার বাদ প্রথম রাউন্ডে। প্রশ্ন জাগতে পারে কি এমন ঘটে গেল যে এবারে এমন ভরাডুবি? বাংলাদেশ তাহলে কি পিছিয়ে গিয়েছে?

২০১৮ সালের এশিয়া কাপটা হয়েছিল ওয়ানডে ফরম্যাটে। এই ফরম্যাটায় ২০১১ পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশ দল একটু একটু করে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে। বড় দলগুলোর বিপক্ষে সময়ে সময়ে জয়ের দেখা পেয়েছে। সমমানের দলগুলোর সাথে আধিপত্যই বিস্তার করে খেলে। সে সুবাদে এশিয়া কাপের ফাইনালে যাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য খানিকটা সহজ হয়ে গিয়েছিল।

তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ কখনোই খুব শক্তপোক্ত দল ছিল না। তবুও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হওয়া ২০১৬ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। তবে শিরোপা ছুঁয়ে দেখার সুযোগটা হয়ে ওঠেনি সেবারও। সেখান থেকে একেবারে ধস, এবারের ভরাডুবি। এমনটা হওয়ায় বাংলাদেশ পিছিয়ে গিয়েছে এমন একটা রব ওঠা স্বাভাবিক। তবে বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েনি। বরং বাংলাদেশ রয়ে গিয়েছে স্বস্থানে।

শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তান এবার খেলছে এশিয়া কাপের ফাইনাল। এর আগের দুই আসরে বলার মত কোন পারফরমেন্সই ছিল না এই দুই দলের। শ্রীলঙ্কা ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের প্রথম রাউন্ডের বাঁধা উৎরে যেতে পারেনি। আর পাকিস্তান ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশের থেকে ছিল ঢের পিছিয়ে। এবার টাইগারদের মূল সমস্যাটা হয়েছে একটি জায়াগায়। শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তান এই দুই দল এগিয়েছে নিজেদের অবস্থান থেকে। একটা বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো দুই দল। সেখান থেকে নিজেদের পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটিয়ে আজ তাঁরা ফাইনালের মঞ্চে।

শ্রীলঙ্কার এক ঝাঁক ক্রিকেটারদের অবসরের ধকলটা ঠিক নিতে পারেনি দলটি। সময় লেগেছে তাঁদের নিজেদেরকে সামলে নিতে। সে সময়টুকুতে সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ। ঠিক কাজে লাগানোও বলে না সেটা, বাংলাদেশ নিজেদের স্বভাবচারিত ভঙ্গিতে খেলে গিয়েছে। বাকি দলগুলোর ব্যর্থতায় বাংলাদেশের পক্ষে গিয়েছে ফলাফল।

বাংলাদেশের এই যে স্বস্থানে থেকে যাবার কারণটা হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নতি করবার ইচ্ছে না থাকা। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে নিজেদেরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তাড়নাটা কেবলমাত্র সাকিব আল হাসানের মধ্যেই বিদ্যমান। এছাড়া দলে থাকা বাকি খেলোয়াড়রা নিজেদের কোন রকম জাতীয় দলে টিকিয়ে রাখতে পারলেই যেন বেঁচে যায়। তাঁদের সাফল্যের সীমাবদ্ধতা সেখানেই। তাঁরা একটা বক্সের ভেতর নিজেদের আবদ্ধ করে রাখতে পারলেই খুশি।

বোর্ডেরও চিন্তাভাবনা ঠিক তেমনই। সাময়িক সাফল্যকে মহিমান্বিত করে সে মোতাবেক  দলের উন্নয়নে থাকে না তেমন কোন মনোযোগ। হাজারটা অভিযোগ থাকার পরও ঘরোয়া ক্রিকেটের অবকাঠামোগত উন্নতি সাধিত করবার ইচ্ছেটুকু থাকে না। তবে বাকি দলগুলো নিজেদের ভাল সময়টা কাজে লাগায় নিজেদেরকে ছাপিয়ে যেতে। নিজেদের খারাপ সময়টায় নিজেদের উজ্জীবিত করে নতুন কোন উদ্যমে।

বিগত কয়েক বছরে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বেড়েছে। পাকিস্তান সুপার লিগের মত জনপ্রিয় এবং মানসম্মত ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পেরেছে। শ্রীলঙ্কার বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির যাচ্ছে-তাই অবস্থা। তবু আজও লংকানদের ঘরোয়া ক্রিকেটের লংঙ্গার ভার্শন অন্য যেকোন দেশের ক্রিকেটের জন্য ঈর্ষণীয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল একটা জায়গায় সব সময়ই পিছিয়ে। অল্পতেই সন্তুষ্ট হলে অন্তত বিশ্ব ক্রিকেটে রাজ করবার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। সেই বিষয়টা বাংলাদেশ ভুলে যায়। তাতে শিরোপা হাত ছাড়া হয়, ভরাডুবি হয় আর দিন শেষে পরিবর্তনের ফাঁকা বুলি আওড়ানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link