৪৫ রানে ৬ উইকেট নেই। সেখান থেকে ২১৬ রান করে জয়ের স্বপ্ন দেখা যায়? যায়, যদি সে স্বপ্ন হয় তরুন চোখের; তাহলে স্বপ্নটা দেখাই যায়। সপ্তম উইকেটে ১৭৪ রানের অপরাজিত এক অবিশ্বাস্য জুটি করে বাংলাদেশকে অতিলৌকিক এক জয় এনে দিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
প্রায় সাত মাস পর ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিরেছে বাংলাদেশ। এই ফরম্যাটে স্বভাবতই প্রত্যাশার পারদটা একটু বেশিই থাকে সাকিব-তামিমদের কাছে। ফজল হক ফারুকির অগ্নিঝরা স্পেলে মুখ থুবড়ে পড়া বাংলাদেশকে দুর্দান্ত এক জুটিতে ম্যাচে ফেরান আফিফ-মিরাজ। তাদের দাপুটে ফাইটব্যাকে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দুর্দান্ত এক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১১ রানেই মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। এরপর রহমত শাহের সাথে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৫ রান গড়েন ইব্রাহিম জাদরান। এরপর শরিফুলের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১৯ রানে ফিরেন ইব্রাহিম। তাসকিনের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ফিরেন রহমত শাহও। রহমত করেন ৩৪ রান। দলীয় ৭৯ রানেই ৩ উইকেট হারায় আফগানরা। চতুর্থ উইকেটে ২৩ রানের জুটির পথে মাহমুদউল্লাহর শিকার করে অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদি ফিরলে চতুর্থ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। বাংলাদেশী বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে তখন চরম বিপাকে আফগানরা।
পঞ্চম উইকেটে মোহাম্মদ নবিকে নিয়ে ভিত গড়েন নাজিবুল্লাহ জাদরান। দু’জনে মিলে গড়েন ৬৩ রানের দুর্দান্ত জুটি। এই জুটিতে যখন বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান, তখনি তাসকিনের আঘাতে আউট নবি! ১৬৫ রানে ৫ উইকেট হারায় আফগানরা। নবি ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে দলের হয়ে একমাত্র ফিফটি তুলে নেন জাদরান! দলীয় ১৯৪ রানে তখন ৫ উইকেট, শেষ ৬ ওভার বাকি। তখনো সম্ভাবনা ছিলো ২৫০ এর কাছাকাছি হতে পারে আফগানদের সংগ্রহ। কিন্তু এরপরই এক ওভারে গুলবাদিন নায়েব ও রশিদ খানকে ফিরিয়ে আফগানদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় সাকিব। পরের ওভারেই মুজিব উর রহমানকে ফেরান মুস্তাফিজ। ১৯৫ রানেই শেষ ৮ উইকেট! তখনো ক্রিজে ছিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান।
৪৯তম ওভারে শরিফুলের বলে আউট হবার আগে নাজিব খেলেন ৮৪ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে ৬৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ৫ বল বাকি থাকতে ২১৫ রানে থামে আফগানদের ইনিংস। মুস্তাফিজ ৩ ও তাসকিন, সাকিব, শরিফুলরা শিকার করেন ২টি করে উইকেট। পুরো ইনিংসে ১৭৫টি ডট বল খেলে আফগানিস্তান!
জবাবে সহজ লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাট করতে নেমে ফজল হক ফারুকির অগ্নিঝরা বোলিংয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। দলীয় ১৩ রানেই শেষ লিটন দাস, ওই ওভারেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে আউট তামিমও। এরপর ফারুকির তৃতীয় শিকার হয়ে মুশফিক ফিরলে ১৮ রানেই ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওই ওভারেই অভিষিক্ত ইয়াসির শূন্য রানে আউট! ১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে তখন বাংলাদেশ।
এরপর একপ্রান্তে সাকিব সম্ভাবনা জাগালেও মুজিবের ঘূর্ণিতে বোল্ড হয়ে ফিরলে ম্যাচে জয়ের আশা শেষ বাংলাদেশের! ২৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন ছিটকে গেছে টাইগাররা। এরপর দলীয় ৪৫ রানে রশিদ খানের প্রথম ওভারেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফিরলে জয়ের আশা তখন একেবারেই ক্ষীন হয়ে যায়।
এরপরই দুঃসময়ে ত্রানকর্তা হিসেবে হাজির হন আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ষষ্ঠ উইকেটে দু’জনে বেশ ধীরে সুস্থে দেখে শুনেই খেলতে লাগলেন। ধীরে ধীরে বিপর্যয় কিছুটা কাটিয়ে বাংলাদেশের রান তখন একশো পার! দু’জনের জুটিতে আবারও জয়ের আশা জেগে উঠলো বাংলাদেশের। ফিফটির পর দু’জনের সেঞ্চুরির জুটিতে তখন আবারও জয়ের আশায় বাংলাদেশ! দুইপ্রান্তে দুর্দান্ত ইনিংসে দু’জনেই তুলে নেন ফিফটি!
দু’জনের ব্যাটে শেষ দশ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন তখন ৪৯ রানের। সেখান থেকে আফিফ-মিরাজের ব্যাটে শেষ ৫ ওভারে দরকার ২৯ রানের! শেষ পর্যন্ত আফিফের ৯৩ ও মিরাজের অপরাজিত ৮১ রানে ৪ উইকেটের দুর্দান্ত জয় পায় বাংলাদেশ। ৭ বল বাকি থাকতে ১৭৪ রানের অবিশ্বাস্য জুটিতে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
আফগানিস্তান – ২১৫/১০ (৪৯.১ ওভার); নাজিব ৬৭(৮৪), রহমত ৩৪(৬৯), শাহিদি ২৮(৪৩); মুস্তাফিজ ৯.১-০-৩৫-৩, শরিফুল ১০-৩৮-১-২, সাকিব ৯-১-৫০-২, তাসকিন ১০-০-৫৫-২।
বাংলাদেশ – ২১৯/৬ (৪৮.৫ ওভার); আফিফ ৯৩(১২২)*, মিরাজ ৮১(১২০)*; ফারুকি ১০-১-৫৪-৪, মুজিব ১০-০-৩১-১, রশিদ ১০-১-৩০-১।
ফলাফলঃ বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।