জানুয়ারির দলবদল, কাকে চাই বার্সার?

জাভির অধীনে এবারের মৌসুমের অর্ধেকটা ভালই কাটিয়েছে বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়লেও লা লিগায় আছে শীর্ষস্থানে। এছাড়া চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতে নিয়েছে কাতালানরা। 

লিওনেল মেসির ক্লাব ত্যাগ এবং করোনা মহামারীর অর্থনৈতিক আঘাতে গত দুই মৌসুম ধরেই টালমাটাল বার্সেলোনা। দলের ইতিহাসের সেরা তারকাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। মাঠের খেলাতেও তাঁর প্রভাব পড়েছে, টানা দুই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়তে হয়েছে। 

তবে এবারের মৌসুমে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বার্সেলোনা। লা লিগা, কোপা দেল রে এবং ইউরোপা লিগ তিনটি টুর্নামেন্টেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে জাভির দলের। বার্সার এই ভাল ফর্মের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে গ্রীষ্মকালীন দল বদলে দলে নতুন আসা তারকাদের।

বায়ার্ন মিউনিখ থেকে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে নাম লেখানো রবার্ট লেওয়ানডস্কি এখনো পর্যন্ত দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। দুই সেন্টারব্যাক ডুয়ো আন্দ্রেইস ক্রিশ্চেনসেন এবং জুলস কুন্দে ভরসা জুগিয়েছেন রক্ষণভাগে। মিডফিল্ডে ফ্রাঙ্ক কেসি নির্ভরতা এনে দিয়েছেন জাভিকে।  

তবে দলের ভালো ফর্ম ধরে রাখতে জানুয়ারিতে স্মার্ট ট্রান্সফার উইন্ডো কাটানো জরুরি বার্সার। কিন্তু উয়েফার আর্থিক সংগতি নীতি সামলে দলে নতুন মুখ দেখার সম্ভাবনা কমই। যদিও ডাচ তারকা মেম্ফিস ডিপাই চার মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদে যোগ দেয়ায় কিছুটা স্যালারি ক্যাপ ফাঁকা হয়েছে। তাঁর জায়গায় জাভি হয়তো নতুন কাউকে চাইবেন। কিন্তু প্রশ্নটা হলো এই মূহুর্তে বার্সার আসলে কোন পজিশনে ফুটবলার দরকার?   

ডিপাই চলে যাওয়াতে ফরোয়ার্ড লাইনে একটা জায়গা ফাঁকা হয়েছে। ডিপাই মূলত সেন্টার ফরোয়ার্ডে লেওয়ানডস্কির ব্যাকাপ অপশন ছিলেন, গোটা মৌসুমে মোটে চার ম্যাচে শুরু থেকে নেমেছেন। আনসু ফাতি এবং ফেরান তোরেসকেই জাভি খেলিয়েছেন ডিপাইয়ের বদলে। 

দলবদলের বাজারে গুঞ্জন আছে বার্সা অধিনায়ক সার্জিও বুসকেটসের বিকল্প হিসেবে ইন্টার মিলান থেকে মার্সেলো ব্রোজোভিচকে আনার পরিকল্পনা করছে ক্লাবের পরিচালনা কমিটি। ১৪ বছরের ক্যারিয়ার শেষে এই মৌসুম পরেই বার্সা ছাড়ার কথা রয়েছে বুসকেটসের। 

বার্সার পিভোট রোলে বুসকেটস রাজত্ব করেছেন গত এক দশক ধরে। জাভি এবং ইনিয়েস্তাকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ইতিহাসের সেরা মিডফিল্ড ত্রয়ী, উপহার দিয়েছেন স্মরণীয় সব মূহুর্ত। ক্রোয়েশিয়ান ব্রোজোভিচও পিভট রোলেই খেলে থাকেন এবং খানিকটা কম দামেই পাওয়া যাবে তাঁকে। তবে এই মূহুর্তে বার্সার মিডফিল্ডে খেলোয়াড় না কিনলেও চলবে, ফ্রেংকি ডি ইয়ং এবং কেসিকে দিয়ে আপাতত মিডফিল্ডের কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে।

বার্সার মূল সমস্যা বর্তমানে রাইটব্যাক পজিশন নিয়ে। কেবলমাত্র এই মৌসুম নয়, দানি আলভেসের বিদায়ের পর থেকেই রক্ষণের ডানপ্রান্তে ভরসা করার মত কাউকে পায়নি বার্সা। সার্জি রবার্তো, এমারসন রয়েল, সার্জিনিও ডেস্ট, হেক্টর বেলেরিনকে দিয়ে চেষ্টা করা হলেও কেউই আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি।

বর্তমানে জুলস কুন্দে এবং রোনাল্ড আরাউহোকে মাঠে নামানো হলেও তাঁরা দুজনেই সেন্টারব্যাক পজিশনেই বেশি স্বাছন্দ্যবোধ করেন। তবে দলে নতুন রাইটব্যাক আনা জরুরি বর্তমান আর্থিক অবস্থায় সেটা সম্ভব না। বিশ্বমানের কাউকে আনতে গেলে বেশ অংকের অর্থই গুণতে হবে বার্সাকে। 

বার্সা যখন বিপদে পড়েছে তখনই এগিয়ে এসেছেন তাঁদের একাডেমির ফুটবলাররা। লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা আরাউহো, আলেহান্দো বালদে, গাভি, ফাতিরা বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নতুন যুগের বার্সার। এছাড়া আরেক তরুণ আনহেল আলারকনও অনুশীলন করছেন মূল দলের সাথে। নি:সন্দেহে বিশ্বের সেরা ফুটবল একাডেমিটা বার্সাতেই রয়েছে। যদি প্রয়োজনের সময়ে এই তরুণদের ব্যবহারই না করা হয়, তবে এত দুর্দান্ত একাডেমির যে মূল্যই থাকে না!  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link