ওয়ানডে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার শুরু ১৯৭৫ সালে প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর থেকে। তখন ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের আধিপত্যের যুগ। এর পর সময়ের সাথে ক্রিকেটে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আর ওয়ানডে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
সাদা পোশাক থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটে এসেছে রঙিন পোশাক। আর এই সময়ে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বেড়ে গিয়েছে আরো কয়েক গুন। এসেছে আরো অনেক ওয়ানডে টুর্নামেন্ট। জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে এসেছেন অনেক ক্রিকেটার, যারা ওয়ানডে ক্রিকেটে আধিপত্য বিস্তার করেছেন।
ওয়ানডে ক্রিকেটে র্যাংকিং চালু হবার পর থেকেই সঠিক ভাবে বোঝা যায় ঠিক ক্রিকেটাররা আধিপত্য বিস্তার করে খেলছেন। এদের মধ্যে অনেকেই লম্বা সময় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন।
- স্যার ভিভ রিচার্ডস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
৭০ এবং ৮০ এর দশকের সবচেয়ে মারকুটে ব্যাটসম্যান ছিলেন স্যার ভিভ রিচার্ডস। তখনকার সময়ে হেলমেট ব্যবহার না করে মারাত্মক সব বোলারদের সামলাতেন তিনি। এছাড়াও তাঁর থেকে বড় বিষয় হল, ভিভ রিচার্ডসের সময়ে মাঠ বর্তমান সময়ের থেকে বেশ বড় ছিলো।
দলের প্রয়োজনে যেকোনো ভাবে খেলতে পারতেন ভিভ রিচার্ডস। তিনি ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৮৭ ওয়ানডে। ১৮৭ ওয়ানডে খেলে ৪৭ গড়ে করেছিলেন ৬৭২১ রান এবং স্ট্রাইক রেট ছিলো ৯০.২। তখনকার সময়ে এটি ছিলো সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট।
ভিভ রিচার্ডস ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে জিতেছিলেন ১৯৭৫ এবং ১৯৭৯ বিশ্বকাপ। এই সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ভিভ রিচার্ডসের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তিনি ৮ জানুয়ারি, ১৯৮৪ থেকে ২০ অক্টোবর, ১৯৮৮ অবধি টানা ১৭৮৪ দিন ওয়ানডে র্যাঙ্কিয়ে শীর্ষে ছিলেন।
- মাইকেল বেভান (অস্ট্রেলিয়া)
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনির নামের পাশের ফিনিশার তকমা বসানোর আগে এই জায়গায় ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান মাইকেল বেভান। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে নিয়মিত ম্যাচ ফিনিশার ছিলেন মাইকেল বেভান। শুধু ফিনিশার নন, র্যাঙ্কিং সেরা ব্যাটসম্যানও ছিলেন তিনি।
ভিভ রিচার্ডসের মত অস্ট্রেলিয়ার হইয়ে দুইটি বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছেন তিনি। মাইকেল বেভানের মধ্যে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস। আর এই আত্মবিশ্বাসের জোরেই দমন করেছেন বড় বড় সব বোলারদের।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ২৩২ ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। এই সময়ে ৫৩.১৭ গড়ে এবং ৭৪.১৬ স্ট্রাইক রেটে রান করেছিলেন ৬৯১২ রান। তাঁর অনেক সতীর্থের চেয়ে তাঁর রান অনেক কম ছিলো। তাঁর নিয়মিত রান করতে পারার সক্ষমতার কারণেই ২২ জানুয়ারী ১৯৯৯ থেকে ৩ জুলাই ২০০৩ অবধি টানা ১২৫৯ দিন ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছিলেন।
- বিরাট কোহলি (ভারত)
বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হলেন বিরাট কোহলি। বর্তমান ক্রিকেটে রান মেশিন তিনি। সেঞ্চুরি করা যেন তাঁর নেশায় পরিনত হয়েছে।
২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই বেশ চমক দেখাচ্ছেন তিনি। ২০১১ সালে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। ২০১১ বিশ্বকাপের পর থেকে নিজেকে একদম নতুন রূপে চেনাতে শুরু করেন। অনেকেই তো ভেবেছেন শচীনের রেকর্ড হয়তো ভেঙ্গে ফেলবেন তিনি।
বিরাট কোহলি এখন পর্যন্ত ২৫৪ ওয়ানডে খেলে ৫৯.০৭ গড় এবং ৯৩.১৭ গড়ে করেছেন ১২,১৬৯ রান। তাঁর মেধা এবং পরিশ্রম দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরেই রাজত্ব করে যাচ্ছেন তিনি। কোহলি ওয়ানডে ব্যাটসম্যান র্যাঙ্কিংয়ে ২২ অক্টোবর, ২০১৭ থেকে ১ এপ্রিল,২০২১ টানা ১২৫৮ দিন ছিলেন।
- ডিন জোন্স (অস্ট্রেলিয়া)
বর্তমান সময়ের ক্রিকেটের সাথে ডিন জোন্সের ব্যাটিংয়ের অনেক বেশি মিল ছিলো। তিনি বোলারদের উপর বেশ চড়াও হয়ে খেলতেন। তিনি এমন সময় খেলতেন যখন ব্যাটসম্যানরা ওভার প্রতি ৩-৪ রান করে নিতেন। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন ডিন জোন্স। তিনি ওভার প্রতি রান নিতেন ৬-৭ করে।
ডিন জোন্স ১৬৪ ওয়ানডেতে ৪৪.৬২ গড়ে ৭২.৫৭ স্ট্রাইক রেটে রান করেছিলেন ৬০৬৮ রান। এই সময়ে ৭০ উপরে স্ট্রাইক রেট অনেক মারকুটে ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট।
তাঁর এই দূর্দান্ত পারফর্মেন্স দিয়ে ওয়ান ডে ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান র্যাংকিংয়ে ৪ জানুয়ারী, ১৯৯০ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৩ টানা ১১৪৬ দিন শীর্ষে ছিলেন। তিনি এমন সময়ে র্যাংকিংয়ে শীর্ষে ছিলেন যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটি পালা বদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো অস্ট্রেলিয়া। আর দুই প্রজন্মের মেল বন্ধন সংযোগ ঘটান ডিন জোন্স।
- ব্রায়ান লারা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হলেন ব্রায়ান লারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর নাম উচ্চারিত হয় শচীন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিংদের নামের সাথে সাথ। ক্রিকেট দুনিয়া তাঁকে মনে রাখবে টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৪০০ রানের ইনিংসের জন্য।
ক্যারিয়ারে ২৯৯ ওয়ানডে খেলেছেন ব্রায়ান লারা। এর মধ্যে তিনি ৪০.১৭ গড় এবং ৭৬.৫১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১০,৪০৫ রান। এর মধ্যে ১৯ সেঞ্চুরি এবং ৬৩ হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।
ওয়ানডেতে ব্যাটসম্যান ৯ মার্চ, ১৯৯৬ থেকে ২১ জানুয়ারি ১৯৯৯ অবধি শীর্ষে ছিলেন, মানে ১০৪৯ দিন। ব্রায়ান লারা তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটিয়েছিলেন র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকাকালীন সময়ে। তাঁর আগে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে শীর্ষে ছিলেন মাইকেল বেভান।