দেখতে দেখতে ফুরিয়ে আসছে কাতার বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব গোল্ডেন বুট জেতার লড়াইয়েও টিকে আছেন এই দুই দলের চার তারকা। আসুন দেখে নেয়া যাক গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা তারকাদের।
- লিওনেল মেসি – পাঁচ গোল
নিজের শেষ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতাতে চেষ্টার কমতি রাখছেন না লিওনেল মেসি। ফাইনালের আগে প্রতিটি ম্যাচেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নিলে ম্যাচ জিততে পারেনি তাঁরা।
পরের ম্যাচে বাঁচামরার লড়াইয়ে মেক্সিকোর বিপক্ষে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের ট্রেডমার্ক শটে গোল করে বিশ্বকাপে টিকে থাকার রসদ দেন আর্জেন্টিনাকে। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে গোল না পেলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গোল করে নিজের এক হাজারতম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখেন ক্ষুদে জাদুকর।
এরপর কোয়ার্টার এবং সেমিফাইনালে যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস এবং ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ঠান্ডা মাথায় স্পটকিক থেকে বল জালে জড়ান তিনি। এবারের বিশ্বকাপে পাঁচ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলশিকারি তিনি। কিলিয়ান এমবাপের সমানসংখ্যক গোল থাকলেও অ্যাসিস্ট বেশি থাকার সুবাদে এগিয়ে আছেন মেসি। তাছাড়া গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছাপিয়ে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার পক্ষে সর্বোচ্চ গোলদাতাও এখন তিনি।
- কিলিয়ান এমবাপ্পে – পাঁচ গোল
বয়স ২৪ পেরোনোর আগেই বিশ্বকাপে নয় গোল হয়ে গেছে ফরাসি তরুণ কিলিয়ান এমবাপ্পের। রাশিয়া বিশ্বকাপের ফর্মটা টেনে এনেছেন কাতারেও।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গোল পেয়েছেন। এরপর ডেনমার্ক এবং পোল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন। কোয়ার্টার এবং সেমিফাইনালে গোল না পেলেও আক্রমণভাগে সরব উপস্থিতি ছিল এমবাপ্পে। চার বছর আগের বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল পেয়েছিলেন এই তারকা।
ফরাসিদের নতুন এই আইকন চাইবেন এবারের বিশ্বকাপ ফাইনালও আপন মহিমায় রাঙিয়ে দিতে। মেসির সমান পাঁচ গোল থাকলেও অ্যাসিস্টের দিক থেকে পিছিয়ে আছেন এমবাপে। মেসির তিনটি অ্যাসিস্টের বিপরীতে এমবাপে গোলে সহায়তা করেছেন দুবার। এবারের বিশ্বকাপে তাই গোল্ডেন বুট জিততে চাইলে ফাইনালে গোলের বিকল্প নেই এই তারকার।
- অলিভার জিরুড – চার গোল
রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচে মাঠে নামলেও কোনো গোল পাননি ফ্রান্সের স্ট্রাইকার অলিভার জিরুড। ফ্রান্স সেবার বিশ্বকাপ জিতলেও তাই হাস্যরসের স্বীকার হন এই তারকা। এবারের বিশ্বকাপেও তাই প্রথম একাদশে জায়গা অনিশ্চিত ছিল বর্ষীয়ান এই স্ট্রাইকারের। কিন্তু করিম বেনজামার অপ্রত্যাশিত ইনজুরিতে সুযোগ মেলে জিরুডের।
সেই সুযোগটা দুহাত ভরে নিয়েছেন এই তারকা। প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল দিয়ে শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, গোল পেয়েছেন পোল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৮ মিনিটে তাঁর করা গোলটাই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত চার গোল করে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে ভালোভাবেই টিকে আছেন এই তারকা।
- জুলিয়ান আলভারেজ – চার গোল
এবারের বিশ্বকাপটা স্রেফ অভিজ্ঞতা অর্জনের আসর হিসেবেই ছিল তরুণ আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার জুলিয়ান আলভারেজের জন্য। কিন্তু প্রথম ম্যাচে সৌদির বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত হার এবং মূল স্ট্রাইকার লাউটারো মার্টিনেজের অফফর্মের সুবাদে একাদশে সুযোগ পেলে আলভারেজের।
সুযোগ পেয়েই নিজের প্রতিভার জানান দেন এই তরুণ। পোল্যান্ডের বিপক্ষে বাঁচামরার ম্যাচে দারুণ এক হেডে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্বকাপে নিজের গোলের খাতা খোলেন।
দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়সূচক গোলটাও আসে তাঁর পা থেকেই। তবে আলভারেজ বোধহয় নিজের সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন সেমিফাইনালের জন্য। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যারাডোনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া এক গোলের পাশাপাশি জয় নিশ্চিত করা গোলটাও করেন তিনি। সেদিন ডমিনিক লিভাকোভিচকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেন এই তরুণ। চার গোল করে নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই গোল্ডেন বুট জেতার খুব কাছেই আছেন এই আর্জেন্টাইন।