বিশ্বকাপ নিয়ে শুরু বাংলাদেশের পরিকল্পনা

মাসখানেকের বিরতি। নেই কোন আন্তর্জাতিক সূচি। তবুও তো বাংলাদেশের ক্রিকেট পাড়ায় স্বস্তির খুব বেশি সুযোগ নেই। কেননা এই তো আর মাত্র মাস পাঁচেক পরেই বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। পাশের দেশ ভারতে হবে বিশ্বকাপ। অন্যদিকে ওয়ানডে ফরম্যাট। তাইতো ভীষণ আশাবাদী বাংলাদেশ দল।

এমনকি ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপের পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচকরা। তেমনটাই তো আভাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। তিনি বলেন, ‘এশিয়া কাপের আগে বিশ্বকাপের স্কোয়াড রেডি করে ফেলব।’

মূলত আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আগামী মাসে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড যাবে টাইগাররা। সেই সিরিজকে সামনে রেখেই দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। সেই দলে নতুন মুখ মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। আয়ারল্যান্ড সিরিজের দল ঘোষণার আগে সংবাদ মাধ্যমে বিশ্বকাপ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন নান্নু।

তাইতো ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের দিকে এবার মনযোগী হবে দলের নির্বাচকরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একটা বিরতি হলেও, ঘরোয়া ক্রিকেট টূর্নামেন্টর চলমান। সেখানে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া ক্রিকেটাররা পারফর্ম করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে নান্নু জানিয়েছেন তাঁরা জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া কিংবা তরুণ খেলোয়াড় সবার দিকেই নজর রাখতে চান।

ওদিকে ডিপিএলের খেলা ফিরছে হোম অব ক্রিকেটে। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত হবে বেশ কিছু ম্যাচ। তপ্ত গরমে নির্বাচকদের কাজ খানিকটা সহজই হয়ে গেল। ইতোমধ্যেই মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী তাঁর বহু অপেক্ষার প্রহর শেষ করেছেন। জাতীয় দলের জার্সিটা হয়ত গায়ে চড়ে যাবে তাঁর।

ঠিক এমনই করেই হয়ত বাকি খেলোয়াড়দের ক্রমান্বয়ে সুযোগ দেবে বিসিবি। তেমনটাই জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক। তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো খেলোয়াড়কে ইতোমধ্যে একটি পুলের মধ্যে আমরা রেখেছি। সবাইকে মনিটরিং করা হচ্ছে। কিছু কিছু খেলোয়াড়কে আমরা সুযোগ দিয়েছি কিছু কিছু সিরিজে। আগামী সিরিজেও দিচ্ছি।’

বেশ আঁটঘাট বেঁধেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। জেতে চাইছে বিশ্বকাপের মঞ্চে। তবে বিশ্বকাপের জন্যে খেলোয়াড় বাছাইয়ের ক্ষেক্ষে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ আদর্শ মানদণ্ড কিনা সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। প্রথমত ঘরোয়া ক্রিকেটের আম্পায়ারিং নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধা রয়েছে। প্রতিনিয়ত বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হচ্ছে খেলোয়াড়রা। তাছাড়া খেলোয়াড়দের মানও প্রশ্নবিদ্ধ।

একটা সময় ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ খেলতে অভিজ্ঞ ও নামকরা বিদেশি খেলোয়াড়দের আনাগোনা ছিল দেশের ক্রিকেটে। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের উত্থানে সে যাত্রায় পড়েছে ভাটা। সেদিক থেকে ক্রমশ ডিপিএলের মান নিম্নমুখী। অন্যদিকে ডিপিএলের প্রতিটা দল সমান শক্তিশালী কিংবা ভারসাম্যপূর্ণ নয়।

একদিকে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন খেলোয়াড়দের আধিপত্য তো অন্যদিকে অভিজ্ঞতার থলি একেবারে শূন্য। তাছাড়া খেলোয়াড়দের মানেও রয়েছে বিস্তর ফারাক। তবে নিশ্চয়ই এই বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন জাতীয় দলের নির্বাচকরা। অন্যদিকে কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে দলকে একেবারে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। দলের মানসিকতায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। এখন কেবল প্রয়োজন স্থায়িত্ব।

তবে হাতুরুসিংহের চক্ষুশূল হওয়া খেলোয়াড়দের বিষয়টি নিয়েও জল ঘোলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই যেমন আফিফ হোসেন ধ্রুবর কথাই ধরা যাক। নিজেকে প্রমাণের লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। তাঁকে নাকি কোচের নির্দেশেই দল থেকে ছেটে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে বয়সের ভারে দল থেকে ছিটকে গেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। তাঁকে রাখা হয়নি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সফর করতে যাওয়া দলেও।

তাঁর দলের ফেরার রাস্তা অবরুদ্ধ বলা চলে। তাছাড়া নতুন মুখ মৃত্যুঞ্জয়কে দিয়ে অন্তত বাকি পেসারদের উপর থেকে চাপ কমানোর একটা প্রচেষ্টা চালাতে পারে টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। যাতে করে পূর্ণ ফিট একটা দল নিয়েই ভারতের মাটিতে পা রাখতে পারে বাংলাদেশ। এই পদ্ধতি হয়ত দলের বাকি সদস্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

সুতরাং এতটুকু আন্দাজ করে নেওয়াই যায়, গোটা বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে ধ্যান-ধারণা এখন একটাই – আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তাইতো হোম অব ক্রিকেট জুড়েই থাকবে ব্যস্ততা। ব্যস্ততার পরিণতি হোক সুখকর, সেটাই নিশ্চয়ই চাওয়া টাইগার সমর্থকদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link