না, সহসাই বাংলাদেশ ক্রিকেট পাড়া ঠাণ্ডা হবার নয়। একের পর এক ঘটনা ঘটে চলছে। খেলোয়াড়দের আনাগোনা হুট করেই বেড়ে গেছে হোম অব ক্রিকেটে। কর্তাদের ব্যস্ত ছোটাছুটি। সব মিলিয়ে পরিবর্তন যে একটা আসতে চলেছে সে বিষয় সুনিশ্চিত। অবশ্য সাকিব আল হাসানের কাঁধে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পর, নতুন আরেক নিয়োগ হয়েছে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে।
টেকলিক্যাল পরামর্শক হিসেবে দলের সাথে যুক্ত হবেন শ্রীধরন শ্রীরাম। ভারতীয় সাবেক এই ক্রিকেটার কোচিং দুনিয়ায় বেশ সিদ্ধহস্ত। ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার সাথেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তিনি যোগ্যতার বলেই এবার যুক্ত হচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাথে। এটা নিশ্চিত করেছেন খোদ বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
এখন তবে প্রশ্ন আসছে, বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর জাতীয় দলে ভূমিকা নিয়ে। এ নিয়ে অবশ্য এখনও খোলাসা করে বলেননি বোর্ড সভাপতি। তিনি সময় দিয়েছেন ২২ আগস্ট সোমবার অবধি। সেদিনই নতুন পরামর্শক শ্রীধরনের সাথে বৈঠকে বসার কথা দল সংশ্লিষ্টদের। এরপরই আসলে জানা যাবে বোর্ডের সিদ্ধান্ত ডমিঙ্গোর বিষয়ে। ঠিক একই সুরে তাল মিলিয়েছেন বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন।
তিনি বলেন, ‘এটা সভাপতির সিদ্ধান্ত, তিনি জানাবেন ২২ তারিখে। যেহেতু শ্রীরাম কালকে আসছেন তাঁর সাথে কথা বলেই হয়ত সভাপতি সিদ্ধান্ত জানাবেন। তিনি বেশ অভিজ্ঞ, তাঁর সুনাম সবাই কমবেশি করছে। এখন তাঁর সাথে আলাপ শেষে আসলে সিদ্ধান্তটা হবে যে এশিয়া কাপে কে যাবে, কে দায়িত্ব পালন করবে।’
অর্থাৎ এখনও আরও খানিকটা বিস্ফোরণ হওয়া বাকি। মূলত এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করেই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে শ্রীধরন শ্রীরামকে। হঠাৎ করেই স্বল্প সময়ে জন্যে নতুন একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার পেছনে কারণ কি সে প্রশ্ন থেকেই যায়। রাসেল ডোমিঙ্গো যদি সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হয় তবে তাঁকে বাকি দুই ফরম্যাটের দায়িত্বে রেখে দেওয়াটাও তো দৃষ্টিকটু। তবে এখানে মূল সমস্যাটা আসলে মানসিকতায়। এমনই অভিমত খালেদ মাহমুদ সুজনের।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা মানুষের দর্শন ভিন্ন, প্রত্যেকটা কোচেরও দর্শন ভিন্ন। এখন তাঁর (রাসেল ডমিঙ্গো) দর্শন হয়ত আমাদের ব্র্যান্ড অব ক্রিকেটের সাথে যাচ্ছে না। আমরা যেহেতু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে পারফরম করতে পারছি না। সুতরাং নতুন একটা দর্শন যদি যুক্ত হয় দলের সাথে তবে তাতে সমস্যা কি!’
অন্তত খালেদ মাহমুদের কথায় এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড রাসেল ডমিঙ্গোর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের পরিকল্পনা নিয়ে খুব বেশি সন্তুষ্ট নয়। তাই আসন্ন গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টগুলোকে কেন্দ্র করেই দলে নতুনত্ব নিয়ে আসার একটা প্রচেষ্টাই করছে বিসিবি। এখন একটি দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দায়িত্ব থাকা একজনকে এমন হুটহাট সরিয়ে দেওয়াটার নিশ্চয়ই বেশ অপমানজনক। তবে রাসেল ডমিঙ্গো তেমনটা ভাববেন না বলেই মনে করেন সুজন।
তাঁর ভাষ্যমতে একটা লম্বা সময়ের জন্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট হয়ে পড়বে ভীষণরকম ব্যস্ত। তখন হয়ত দলের সাথে থাকা প্রায় প্রতিটা সদস্যের বিশ্রামের প্রয়োজন হতে পারে। আর সে কথা মাথায় রেখে সোয়াপ কোচিংয়ের দিকেও যেতে পারে বিসিবি তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন সুজন। তিনি বলেন, ‘১৫০টা ম্যাচ থাকা মানে ৪০০-৪৫০ দিন আমাদের ব্যস্ত থাকতে হবে। এমন পরিস্থিতি হলে আমরা হয়ত সোয়াপ কোচিংয়ের পরিকল্পনা করব। এমন কিছুরই হয়ত দরকার পড়বে।’
অতএব হয়ত বাংলাদেশ ফরম্যাট ভেদে কোচ নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনা শেষমেশ বাস্তবায়ন করা হবে কি না, তা অবশ্য নির্ভর করবে শ্রীরামের এই স্বল্প মেয়াদের দায়িত্বের উপর। অন্যদিকে রাসেল ডোমিঙ্গোকে একজন পেশাদার কোচ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সুজন। তিনি হয়ত নিজের ব্যক্তিগত আক্রোশকে দূরে রেখে দলের প্রয়োজনে এই সোয়াপ কোচিং পদ্ধতিকে মেনে নেবেন।
অথবা ভিন্ন কোন আলাপও হয়ত হতে পারে এ নিয়ে। রাসেল ডমিঙ্গো হয়ত ইস্তফাও দিয়ে দিতেন পারেন। আবার এমনও হতে পারে, তাকে রেখেই জেমি সিডন্স বা শ্রীরাম – কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে, আপাতত তাঁর চলে যাওয়ার বার্তাটাই বেশি স্পষ্ট। সে যাই হোক, সম্ভাবনার কাঁটাটা এখনও দোদুল্যমান। তাইতো শুরুতেই বলা, বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ঘিরে আলোচনার সমাপ্তিটা ঠিক এখনই ঘটছে না।