বিনা মেঘে বজ্রপাত, অতি প্রচলিত এই প্রবাদ বাক্যের বাস্তব নির্দশন দেখলে কেমন অনুভব হবে? সবাই হয়তো এতদিন সেই প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক জানতেন না, তবে তামিম ইকবালের অবসরের ঘটনায় এবার উত্তরটা জানা গিয়েছে সবার। কেননা ড্যাশিং ওপেনার অবসর নিয়েছেন পূর্বাভাস ছাড়াই, বিনা মেঘে বাজ পড়ার মতই।
আর বাজটা পড়েছে ঠিক বাংলাদেশ ক্রিকেটের উপর, স্তব্ধ করে দিয়েছে লাল-সবুজের ক্রিকেট পাড়া। গত প্রায় পনেরো বছরের বেশি সময় ধরে জাতীয় দলে খেলেছেন ব্যাটার তামিম ইকবাল। উদ্বোধন করেছেন ইনিংস, মোকাবেলা করেছেন বাঘা বাঘা সব পেসারদের।
সব মিলিয়ে দেশের অন্যতম সেরা এক ক্রিকেটারে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। তাই তাঁর বিদায়ে নিশ্চিতভাবেই শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ দলে। তামিম ইকবাল শুধু নির্ভরযোগ্য ওপেনারই নন, ওয়ানডে দলের অধিনায়কও বটে। তাই তাঁর অবসরের পর নতুন অধিনায়ক কে হবেন সেই বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে টিম ম্যানেজম্যান্টকে।
তাই তো জরুরি সভায় বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্মকর্তারা। রাত দশটায় দেশের পাঁচ তারকা একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে সেই সভা। মহাগুরুত্বপূর্ণ এই সভার উপরই সম্ভবত নির্ভর করছে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ ক্রিকেট কিভাবে এগোবে।
তামিম ইকবালের ঘটনায় স্তব্ধ ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাও। এখন পর্যন্ত তাই কেউই মুখ খোলেননি সাংবাদিকদের সামনে। এমনকি নাজমুল হোসেন পাপনও বলতে পারেননি কোন কথা; বলবেনই বা কিভাবে, হুট করেই তামিম যে অবসর নিবেন সেটার কোন আভাসই তো পাননি বোর্ড সভাপতি।
বিভিন্ন কারণেই আজকের এই সভা আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। অবসর পরবর্তী দল কিভাবে চলবে, অধিনায়কই বা হবেন কে – এমন প্রয়োজনীয় আলোচনা হবে সেখানে। বিশেষ করে দুইদিন পরেই যেহেতু আফগানিস্তান সিরিজ তাই তড়িঘড়ি করেই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে বোর্ডকে।
জানা গিয়েছে আপদকালীন নেতৃত্বের ভার কারো হাতে দিয়ে সাময়িক কাজ সারতে চায় বিসিবি। সেক্ষেত্রে সেরা অপশন তামিমের ওপেনিং সঙ্গী লিটন দাস। ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজে তাঁর অধিনায়কত্ব বেশ নজর কাড়া ছিল।
এছাড়া নিয়মিত অধিনায়কদের অনুপস্থিতিতে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টস করেছিলেন লিটন – তাতেই বোঝা যায় অধিনায়ক হিসেবে এই ডান-হাতির উপর ভরসা আছে টিম বাংলাদেশের।
তবে দীর্ঘ মেয়াদে কার হাতে উঠবে নেতৃত্ব সেটা নিয়েই অল্পনা জল্পনা বেশি। তামিমের ডেপুটি লিটন আর এক সময়ের বন্ধু সাকিব – এই দুইজনই সবচেয়ে এগিয়ে আছেন বিবেচনায়।
শুধু অধিনায়কত্বই নয়, বিকল্প ওপেনার নিয়েও ভাবতে হবে সভাতে। এছাড়া নতুন অধিনায়কের দায়িত্ব কি হবে, পরিকল্পনায় কতটুকু বদল আসবে সেসব নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিসিবিকে।
রাতের সভা শেষে হয়তো তামিম ইকবালের অবসর নিয়ে অফিসিয়ালি কথা বলবেন বিসিবি কর্তারা। তখন হয়তো বোঝা যাবে তামিমের অবসর নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিক্রিয়া। জানা যাবে, ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভাবনা, জানা যাবে নতুন অধিনায়কের নাম এবং নানান কিছু।
সাম্প্রতিক সময়ে এমন কিছু ঘটেনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে; তাই এবারের বিসিবি সভা নিয়েও জনমানুষের আগ্রহ চরমে। কৌতূহলী চোখেই তাই তাঁরা তাকিয়ে আছে টিভি কিংবা মোবাইলের পর্দায় ৷