বাংলাদেশের সেরা জুটি নামা

মানব জীবনের মত ক্রিকেট মাঠেও ব্যাটিংয়ের সময় জুটি গড়ে উঠে। যেখানে ক্রিকেটাররা পরস্পরের উপর আস্থা রেখে খেলে যান। আর একটি কিংবা দুইটি বড় জুটিই পারে ম্যাচ থেকে প্রতিপক্ষকে ছিটকে দিতে।

প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, জয় ভিন্ন অন্য কোনো চিন্তা নিয়ে মাঠে নামে না খেলোয়াড়রা। ক্রিকেট মাঠে জিততে বোলিংয়ের পাশাপাশি তাই ব্যাট হাতেও ব্যাটসম্যানদের বড় জুটি গড়তে হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ওয়ানডে ক্রিকেটে বড় জুটি খুব বেশি একটা দেখা যায়। টপ অর্ডারে মাঝে কিছু বড় জুটি দেখা গেলেও মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার অর্ডারে এই জুটির দেখা পাওয়া বেশ দুস্কর বাংলাদেশের ক্রিকেটে। এর মাঝেও কিছু রেকর্ড হয়েছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে সব উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটিগুলো নিয়ে খেলা ৭১ এর বিশেষ এই আয়োজন।

  • প্রথম উইকেট জুটি

প্রথম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সেরা জুটি তামিম ইকবাল এবং লিটন দাসের। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটে এই কীর্তি গড়েন তাঁরা। যেকোনো উইকেট জুটিতে এটা বাংলাদেশের সেরা জুটি। এই ম্যাচে ২৯২ রানের জুটি গড়েন তামিম এবং লিটন।

এই জুটিতে তামিমের অবদান ছিলো ১১০ রান এবং লিটনের অবদান ছিল ১৭৫ রান।

  • দ্বিতীয় উইকেট জুটি

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিলো ইমরুল কায়েস এবং সৌম্য সরকারের মধ্যে। তাঁর এই জুটি গড়েন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।

২৮৭ রানে লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস। এর পর তিন নাম্বারে নামা সৌম্য সরকারের সাথে ২২০ রানের জুটি গড়েন ইমরুল কায়েস। এই জুটিতে ইমরুলের অবদান ছিল ৯১ রান এবং সৌম্য সরকারের অবদান ছিলো ১১৭ রান।

  •  তৃতীয় উইকেট জুটি

তৃতীয় উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৭৮ রান, এই জুটির অংশীদার হলেন তামিম ইকবাল এবং মুশফিকুর রহিম। তাঁরা এই জুটি গড়ে ছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।

এই জুটির উপর ভর করে ৩২৯ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এর ফলে ৭৯ রানের বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ। এই জুটিতে তামিমের অবদান ৯২ এবং এবং মুশফিকের অবদান ছিল ৭৯ রান।

  • চতুর্থ উইকেট জুটি

চতুর্থ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৮৯ রান। এই জুটির উপর ভিত্তি করে ২০১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ।

এই জুটির অংশীদার ছিলেন সাকিব আল হাসান এবং লিটন দাস। ২০১৯ বিশ্বকাপে টনটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ৩২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। এই সময়ে সাকিব এবং লিটন ১৮৯ রানের অপরাজিত জুটি গড়েন। এই জুটিতে সাকিবের অবদান ছিলো ৮০ রান এবং লিটনের অবদান ছিল ৯৪ রান।

  • পঞ্চম উইকেট জুটি

পঞ্চম উইকেটের জুটিতে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাঁরা এই জুটিতে যোগ করেছিলেন ২২৪ রান।

২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই কীর্তি গড়েন সাকিব এবং রিয়াদ। এই ম্যাচে ২৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মাত্র ৩৩ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান। এরপর শুরু হয় সাকিব এং রিয়াদের মহাক্যাবিক এই জুটির গল্প।

তাঁরা দুইজন মিলে ২১৯ বলে ২২৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন। এই জুটিতে সাকিবের অবদান ছিলো ১১১ রান এবং মাহমুদউল্লাহর অবদান ছিলো ৯৮ রান। এই জুটির কল্যাণে পাঁচ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয় পায় বাংলাদেশ।

  • ষষ্ঠ উইকেট জুটি

ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিলো আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে। এই জুটিতে মাহমুদউল্লাহ এবং ইমরুল কায়েস সংগ্রহ করেন ১২৮ রান।

আবুধাবীতে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। মাত্র ৮৭ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে। এরপর মাহমুদউল্লাহ এবং ইমরুল কায়েসের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। তাঁরা দুই জন মিলে গড়ে তোলেন ১২৮ রান। এই জুটিতে রিয়াদের অবদান ছিলো ৭৪ রান এবং ইমরুলের সংগ্রহ ছিল ৫১ রান।

  • সপ্তম উইকেট জুটি

সপ্তম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সেরা সংগ্রহ ১২৭ রান। এই জুটির অংশীদার ইমরুল কায়েস এবং সাইফউদ্দিন।

তাঁরা দুই জন এই জুটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকায়। এই জুটির কল্যাণে সহজেই ২৭১ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দল এই ম্যাচ জিতে নেয় ২৮ রানে।

  • অষ্টম উইকেট জুটি

অষ্টম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটির মালিক মোহাম্মদ মিঠুন এবং সাইফউদ্দিন। তাঁরা অষ্টম উইকেট জুটিতে সংগ্রহ করেছেন ৮৪ রান।

২০১৯ সালে নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েন তাঁরা। এই জুটির সৌজন্যে ২৩২ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে আট উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ।

  • নবম উইকেট জুটি

নবম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৯৭ রান। এই জুটির মালিক সাকিব আল হাসান এবং মাশরাফি মুর্তজা। ২০০৮ সালে মুলতানে এই রেকর্ড গড়েন তাঁরা।

মুলতানে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে ১২ ওভারে মাত্র ৪৫ রান তুলতে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। এই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে টেনে নেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন সাকিব আল হাসান। তিনি ১০৮ রানের একটি ইনিংস খেলেন। এই ইনিংস খেলার পথে নবম উইকেট জুটিতে মাশরাফির সাথে গড়ে তোলেন ৯৭ রানের জুটি।

এই জুটির উপর ভর করে ২১০ রানের সন্মানজনক স্কোর করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। এই জুটিতে সাকিবের অবদান ছিলো ৫১ রান এবং মাশরাফির অবদান ছিলো ৩৮ রান।

  • দশম উইকেট জুটি

দশম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সেরা জুটিটা বেশ পুরাতন। এই জুটিতে বাংলাদেশের সেরা সংগ্রহ ছিল ৫৪ রান। এই জুটির অংশীদার ছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট এবং তাপস বৈশ্য।

২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোতে এই জুটি গড়েন তাঁরা। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৭০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ নয় উইকেটে সংগ্রহ করে ১৮৯ রান।

এই জুটিতে তাপস বৈশ্যের অবদান ছিলো ২২ রান এবং বাকি রান এসেছে খালেদ মাসুদ পাইলট এবং অতিরিক্ত থেকে।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link