পুরনো তরবারি হাতে রণনায়ক

স্কোরস আর লেভেল। পুরো হেডিংলি জুড়ে সমর্থকদের জয়ধ্বনির আগাম প্রস্তুতি। প্যাট কামিন্সের পরের বলটা কভারের উপর দিয়ে সজোরে হাঁকালেন বেন স্টোকস। দৃষ্টিনন্দন এক বাউন্ডারি ইতিহাস গড়লেন হেডিংলিতে।

ড্রেসিংরুমে ইংলিশ ক্রিকেটারদের বাঁধভাঙ্গা উল্লাস, পুরো হেডিংলি ইংলিশ সমর্থকদের করতালিতে মুখোর। চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে রেকর্ড রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। হারের মুখ থেকে একক দাপটে অস্ট্রেলিয়াকে এক উইকেটে হারিয়ে সেদিন ইতিহাস রচনা করেছিলেন বেন স্টোকস।

সেই মহাকাব্যিক ইনিংসের কেটে গেছে প্রায় তিন বছর। ট্রেন্ট ব্রিজে আবারও এক রোমাঞ্চকর জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ইংলিশরা। এবারের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। কিন্তু, স্ট্রাইকে দাঁড়িয়ে আছেন হেডিলিংতে ইতিহাস গড়া বেন স্টোকস। ট্রেন্ট ব্রিজের বেলকনিতে জয়ের অপেক্ষায় জো রুট, জনি বেয়ারস্টোরা। স্টেডিয়াম ভর্তি ক্রিকেট ভক্তরা অপেক্ষারত আরেকটি স্মরণীয় জয়ের।

পঞ্চাশতম ওভারের শেষ বল। ট্রেন্ট বোল্ট দৌড়ে এসে বল করলেন। কাট করতেই এক্সট্রা কভার দিয়ে বল সীমানার বাইরে। নান্দনিক এক বাউন্ডারি ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টেও এক রোমাঞ্চকর জয়ের গল্প লিখলেন স্টোকস।

ঘড়ির কাঁটায় ব্যবধান ২ বছর ৯ মাস ২০ দিন। হেডিংলি থেকে ট্রেন্ট ব্রিজ, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যান্ড – দৃষ্টিনন্দন দুই বাউন্ডারি, দুই মহাকাব্যিক জয়, স্টোকসের দুই দাপুটে ইনিংস আর ইংল্যান্ডের স্মরণীয় দুই জয়।

অধিনায়ক হিসেবে সাদা পোশাকে প্রথমবার পূর্ণ মেয়াদের দায়িত্ব। বছর খানেক আগেও টেস্ট ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়ানো দলটা হুট করেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভঙ্গুরপ্রায় একটা দলের দায়িত্ব পান স্টোকস। কোচ হিসেবেও প্রথমবারের মত দায়িত্ব পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক তারকা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।

স্টোকস-ম্যাককালামের হাত ধরে আবার ইংলিশরা সাদা পোশাকে দাপট দেখাবে সেটাই ছিল প্রত্যাশা। সেই সাথে এই দুই আগ্রাসী কোচ-অধিনায়ক জুটির অধীনে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং হবে রণকৌশল সেটাও অনুমেয় ছিল।

যেই ভাবা, সেই কাজ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরেও পাল্টা আক্রমণে অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নিয়েছে ইংলিশরা। জয়ের প্রধান নায়ক বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করা জনি বেয়ারস্টো। তবে এই জয়ের অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন খোদ অধিনায়ক বেন স্টোকসও।

২৯৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা। ৯৩ রানে ৪ উইকেট। ব্যাট করতে নেমে সেট না হতেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে টিম সাউদিকে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা। একপ্রান্তে তাণ্ডব চালাচ্ছিলেন বেয়ারস্টো, আরেকপ্রান্তে যোগ্য সমর্থন দিচ্ছিলেন স্টোকস। বিধ্বংসী ইনিংস শেষে বেয়ারস্টো থামলেও থামনেনি স্টোকস। দলকে জয়ের বন্দর অবধি পৌঁছে দিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন তিনি।

৭০ বলে ৪ ছক্কা ও ১০ চারে খেলেছেন ৭৫ রানের ইনিংস। অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম সিরিজেই দাপট দেখিয়ে সিরিজ জয়। চাপের মুখেও নিজের কৌশলে তিনি যে অনড় সেটি আবারও প্রমাণ করেছেন। চাপ কিংবা ব্যাটিং বিপর্যয় – কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙে দেন স্টোকস-বেয়ারস্টো জুটি।

ইনজুরিতে একটা লম্বা সময় ছিলেন ক্রিকেটের বাইরে। ফিরেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে দাপট দেখিয়ে। জাতীয় দলে এসে পেয়েছেন অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব। সেই দায়িত্বের চাপটাও ছিল পাহাড়সম।

তবে, সবকিছু পাশ কাটিয়ে স্টোকস উৎরে গেছেন পূর্ণ নম্বর পেয়ে। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই প্রথম সিরিজে দলকে টেনে তুলেছেন খাদের কিনারা থেকে। ২২ গজে সাদা পোশাকে আবার দেখা গেল থ্রি লায়ন্সদের গর্জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link