হেডিংলি হিরোইজম

চারিদিকে একটা উৎকণ্ঠা। নিস্তবদ্ধতায় খুব সম্ভবত স্টেডিয়াম জুড়ে স্নায়ুচাপের আওয়াজটা স্পষ্ট। উত্তেজনার পারদটা আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে তখন নিশ্চয়ই। তবে শান্ত শীতল এক হিমবাহ বয়ে যাচ্ছে বেন স্টোকসের ধমনী ধরে। দৃঢ় প্রত্যয়ী এক সত্ত্বা।

চারিদিকে একটা উৎকণ্ঠা। নিস্তবদ্ধতায় খুব সম্ভবত স্টেডিয়াম জুড়ে স্নায়ুচাপের আওয়াজটা স্পষ্ট। উত্তেজনার পারদটা আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে তখন নিশ্চয়ই। তবে শান্ত শীতল এক হিমবাহ বয়ে যাচ্ছে বেন স্টোকসের ধমনী ধরে। দৃঢ় প্রত্যয়ী এক সত্ত্বা। ঠায় দাঁড়িয়ে টেস্টের চতুর্থ দিনে। জয় ছাড়া মস্তিষ্কের নিউরনগুলো হয়ত আর কোন তথ্যই পাচ্ছিল না তখন। প্যাট কামিন্সের খানিকটা অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল সজোরে কাভার ড্রাইভ। অন্যদিকে, ইতিহাসের পাতায় আবারও কালির আঁচড়।

অ্যাশেজ নিয়ে বাড়তি উত্তেজনার তো আর কোন শেষ নেই। ক্রিকেটের প্রাচীনতম এই লড়াইয়ের দিকে বাড়তি নজর সবারই কম বেশি থাকে। আর যদি সেটা হয় নতুন মোড়কের কোন এক আয়োজনের অংশ তখন তো তা নিশ্চয়ই আরেকটু বেশি নজর কাড়ে। তেমনই এক টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া।

২০১৯ সালের ২২ আগস্ট শুরু হয়েছিল টেস্ট। তবে স্টোকস যখন ইতিহাসটা একটু কেটে নতুন করে লিখতে বাধ্য করলেন, ততদিনে টেস্ট পৌঁছে গেছে চতুর্থদিনে। আর ক্যালেন্ডারের পাতায় তখন ২৫ সংখ্যাটা দখল করে নিয়েছে। টেস্টের শুরুটা মোটেও সুবিধার হয়নি ইংলিশদের। অজিদের ১৭৯ রানে আটকে দিতে পারলেও প্রথম ইনিংসে কেবল ৬৭ রানে গুটিয়ে যায় জো রুট বাহিনী।

আর সে সুযোগটা লুফে নেয় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা। ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে তাঁরা রান সংগ্রহ করতে থাকে যতটুকুন সম্ভব। তাতে যা হল তা খানিকটা অসাধ্য। অন্তত ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে ততদিন অবধি কেউ সাহসটা করে দেখেনি। চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ইংলিশদের টার্গেট গিয়ে দাঁড়ায় ৩৫৯। চতুর্থ ইনিংসের জন্য বিশাল এক লক্ষ্যমাত্রা। তাড়া করে জেতা সম্ভব সেটাও হয়ত ভাবেনি কেউ। তবে স্টোকস হয়ত ভেবেছিলেন কিছু একটা করতেই হবে।

চতুর্থ দিনের ভোরের আলো ক্রমশ বেশ তীব্র এক রোদে পরিণত হতে শুরু করেছে। তখন অবশ্য ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডের উইকেটের ঘরটায় তিনখানা দাগ। রান তখন ১৫৯। চিন্তার ভাঁজ তখন ইংলিশ শিবিরে। যথেষ্ট সময় রয়েছে ম্যাচ হেরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু সেদিনের সূর্যের হাসি হয়ে বাইশ গজে আস্থা জুগিয়ে যাচ্ছিল বেন স্টোকস আর জনি বেয়ারস্টো জুটি।

আবারও ছন্দপতন। বেয়ারস্টো সঙ্গ দেওয়া ছেড়ে দিলেন। জশ বাটলারও খুব বেশি সময় থাকলেন না ক্রিজে। জয়ের দূরত্ব তখনও একশো ছাড়িয়ে। একটা প্রান্ত আগলে রাখলেন। না শুধু আগলে রাখলেন না স্টোকস। তিনি সপাটে মেরে খেললেন। পালটা আক্রমণ যাকে বলে আর কি। একটা প্রান্তে উইকেট যায় তবুও ভয়ডরহীন ক্রিকেটটাই খেলে যায় স্টোকস। জ্যাক লিচ যখন একাদশতম ব্যাটার হিসেবে ব্যাট করতে নামেন তখনও জয়ের জন্য প্রয়োজন ৭৩ রানের।

স্টোকসের অতিমানবীয় আত্মবিশ্বাসের পালে একটু করে হাওয়া দিয়ে যাচ্ছিলেন লিচ। বোলার মানুষ। টেল এন্ডার। খুব একটা ব্যাটিং পারেন না। তবে কিছু বল তো তাঁকে খেলতেই হল। অস্ট্রেলিয়ার বাঘা বাঘা বোলারদের সামলে তিনি খেললেন ১৭ খানা বল। রান নিলেন কেবল একটি। তখন নির্ভীক এক যোদ্ধার মত ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছেন বেন স্টোকস। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বাকি রান গুলো এলো স্টোকসের ব্যাট থেকে।

শেষ উইকেট জুটিতে ইংল্যান্ডের পক্ষে আসে ৭৬ রান। তাতেই অবিস্মরণীয় এক জয়ের রুপকথা লেখা হয়ে যায়। আর বুনো উল্লাসে স্টোকসের গগন বিদারী চিৎকার সেদিন হার মানিয়েছিল হাজার হাজার দর্শকদের জয়ধ্বনি। আর ইংল্যান্ড পেয়ে যায় তাঁদের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার নতুন এক ইতিহাস। আর সে ইতিহাসের নায়ক আর কেউ নন বিশ্বকাপ জেতানো বেন স্টোকস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link