বিশ্বকাপের সেরা গোল

২২ তম আসর। কত রোমাঞ্চ ঠাসা! কত ধরণের বিতর্কের সূত্রপাত। তবে মাঠে ফুটবল গড়ানোর সাথে সাথেই সব বিতর্ক হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। একেবারে ভ্যানিশ! এখন শুধু ফুটবল শিহরণ জাগাচ্ছে। এখন শুধু ফুটবল ভাবাচ্ছে। এখন গল্পের প্রধান চরিত্র কেবলই ফুটবল। রোমাঞ্চকর ফুটবল। এবারের বিশ্বকাপটায় তো অঘটন আর মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের মঞ্চায়ন কম হয়নি।

আর্জেন্টিনা ও জার্মানির মত দলরা ধুকছে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবার পথে। অন্যদিকে অবিস্মরণীয় সব মহাকাব্য নিজেদের করে নিচ্ছে সৌদি আরব, জাপান। কিছু রেকর্ড নতুন করে লেখা হচ্ছে, কিছু রেকর্ডে ভাগ বসাচ্ছেন নতুনরা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পাঁচ বিশ্বকাপেই গোল করার অনন্য রেকর্ড গড়ছেন তো লিওনেল মেসি ছুঁয়ে ফেলছেন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে। অলিভার জিরুডও গোল সংখ্যায় ছুঁয়ে ফেলেছেন থিয়েরি অঁরিকে।

রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়া ও অঘটনের এই বিশ্বকাপে গোলও হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আখেরে গোলের খেলাই তো ফুটবল। এবারের বিশ্বকাপে করা বেশকিছু গোল নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনার সোরগোল শুরু হয়ে গেছে। তেমন কিছু গোলের গল্পই থাকছে আজকের আয়োজনে।

  • রিচার্লিসন (ব্রাজিল)

রিচার্লিসন এবারের বিশ্বকাপে এক ম্যাচেই দুই গোল করেছেন। তাও আবার ব্রাজিলের শুরুর ম্যাচে। সার্বিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে দুইটি গোলই এসেছে তাঁর পা থেকে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তাঁর করা দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে। ধারণা করা হচ্ছে বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোল সেটি। দুর্দান্ত এক বাইসাইকেল গোলে ব্রাজিলকে প্রত্যাশিত জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি।

সার্বিয়ার বিপক্ষে ৭৩ মিনিটে ডি-বক্সের বাম পাশ থেকে আউটার ফুটের দারুণ এক ক্রস বাড়িয়ে দেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। সে ক্রস অসাধারণ দক্ষতায় নিজের আয়ত্ত্বে নেন রিচার্লিসন। এরপর মাথার উপরে থাকাকালীন অবস্থায় হাওয়ায় ভেসে ডান পায়ের জোড়ালো কিক খুঁজে নেয় জালের ঠিকানা। অবাক নয়নে তাকিয়ে থেকেছে গোটা বিশ্ব। ২৫ বছর বয়সী রিচার্লিসন সেদিন স্তব্ধ করে দিয়েছিল সবকিছু।

  • লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)

আর্জেন্টিনার এবারের বিশ্বকাপ যাত্রাটা রোমাঞ্চকর। প্রথম ম্যাচ হেরে শুরু করেছে আলবি সেলেস্তারা। দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া নিয়েই জেগে যায় শঙ্কা। মেক্সিকোর বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচটা বাঁচা-মরার লড়াই। আর সেই ম্যাচেই ত্রাণকর্তা হয়ে হাজির আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম নন্দিত ফুটবলার লিওনেল মেসি। গিলের্মো ওচোয়ার মত গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে আর্জেন্টিনাকে জয়ে মোমেন্টামে ফেরান লিওনেল মেসি।

মেক্সিকোর লো-লাইন ডিফেন্সভেদ করে আর্জেন্টাইন অ্যাটাকাররা সুবিধাই করতে পারছিলেন না। সেটার একটা সমাধান খুঁজে বের করেন লিওনেল মেসি। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে মেক্সিকোর ডি-বক্সের বাইরে থেকেই জোরালো এক শট। সে শটেই পরাস্ত ওচোয়া। দুরন্ত সে শটেই টুর্নামেন্ট টিকে থাকার প্রেরণা পায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের মোমেন্টামও নিজেদের করে নিয়ে পরবর্তীতে আরও একটি গোল তুলে নেয় আলবি সেলেস্তারা।

  • সালিম আল-দ্বসারি (সৌদি আরব)

ইতিহাস জয়ের শেষ দাঁড়িটা টেনে দিয়েছিলেন সালিম আল-দ্বসারি। সৌদি আরবের বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম জয়। তাও আবার পরাশক্তি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়ে, অঘটন ঘটান দ্বসারি। ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটি একেবারে অনঢ় করে ফেলেন  সৌদির এই আক্রমণভাগের খেলোয়াড়।

ম্যাচে ১-১ এ সমতা। এমন এক পরিস্থিতিতে ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন দ্বসারি। হাওয়ায় ভাসা বলটা তিনি নিজের আয়ত্ত্বে নেন। এরপর আর্জেন্টিনার তিনজন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে ডান পায়ে দ্রুতগতির শট নেন তিনি। ডান পাশের টপ কর্ণার দিয়ে গোল আদায় করে দুরন্ত গতিতে ছুটে গিয়ে ইতিহাস রচনার উদযাপন করেন সালিম আল-দ্বসারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link