পিছিয়ে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার বদৌলতে সাদা বলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলুড়ে দল গুলোর প্রধান প্রাধান্য ছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট। যার ফলশ্রুতিতে পুরো বছর জুড়েই ওয়ানডে ম্যাচের খুব একটা দেখা পায়নি ক্রিকেট দর্শক সমর্থকেরা। একমাত্র শ্রীলঙ্কা এ বছর ১৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে এছাড়া আর কোন দল পার করেনি ১৫ ম্যাচের গণ্ডি এমনকি ছুঁয়েও দেখেনি।
বড় দলগুলোর মধ্যে ভারত ওয়ানডে খেলেছে মাত্র ছয়টি, ইংল্যান্ড নয় ও অস্ট্রেলিয়া খেলেছে তিনটি। যদিও বড় দলগুলো এবছর খুব একটা ওয়ানডে ফরম্যাটে মনোযোগী ছিল না তাই সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে সহযোগী দেশগুলো অথবা সদ্য আইসিসির সদস্য লাভ করা দলগুলো। এর ফলস্বরুপ আয়ারল্যান্ডের পল স্টার্লিং রয়েছে বছরে ওয়ানডে ফরম্যাটে রান সংগ্রাহকদের তালিকার শীর্ষে। ওয়ানডে ম্যাচের সংখ্যা কম হলেও বেশ কিছু অনবদ্য ইনিংসের দেখা পেয়েছে ক্রিকেট। সেই সকল ইনিংস নিয়েই আজকের আলোচনা।
- অ্যান্ডি বালবির্নি (আয়ারল্যান্ড)- ১১৭ বলে ১০২ রান
এই বছরে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিল আয়ারল্যান্ডে। সমান তিন ম্যাচ করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে। বৃষ্টি বিঘ্নতায় প্রথম ওয়ানডে পরিত্যাক্ত হয়। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ড গড়ে বিশ্বরেকর্ড। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম জয়ের দেখা পায় তারা।
সেই জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নি। অসাধারণ এক শতক হাঁকিয়ে ২৯০ রান জড়ো করতে সহয়তা করেন তিনি। পল স্টার্লিং ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রায়ানের সাথে কার্যকরী জুঁটি গড়ে বালবিরনির ব্যাট থেকে রান আসে ১০২, ১১৭ বলে। জবাবে ২৪৭ রানে অল আউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ইতিহাস গড়তে সাহায্য করা বালবিরনির করা সেই ইনিংসটি থাকছে আজকের তালিকার পঞ্চম স্থানে।
- জেমস ভিন্স (ইংল্যান্ড)- ৯৫ বলে ১০২ রান
ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার তৃতীয় ওয়ানডেতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে বাবর আজমের দেড়শ রান পার করা ইনিংসের বদৌলতে ৩৩১ রানের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দেয় ইংলিশদের জন্যে। তিনশ পার করা রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ৫৩ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। সেই বিপর্যয় সামাল দেন জেমস ভিন্স ও জ্যাক ক্রাওলি। দুইজন ৫১ রান যোগ করে ক্রাওলি আউট হয়ে গেলেও ভিন্সের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন।
অপরপ্রান্তে ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মাঝে ভিন্স টিকে থেকে ছিলেন এবং দলকে একটি স্বস্তিদায়ক স্থানে পৌঁছে আউট হয়ে গিয়েছিলেন ১০২ রানে। ততক্ষণে জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড এবং শেষমেশ জেমস ভিন্সের শতকের কল্যাণে পাহাড়সম টার্গেট উতরে যেতে সক্ষম হয় ইংল্যান্ড।
- জনি বেয়ারস্টো (ইংল্যান্ড)- ১১২ বলে ১২৪ রান
বছরের শুরুর দিকে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বেশ দূর্দান্ত ফর্মে ছিলেন ইংলিশ ব্যাটার জনি বেয়ারস্টো। প্রথম ম্যাচে তাঁর অর্ধশতক জয় এড়াতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে বেয়ারস্টোর শতক ছাড়ানো ইনিংস ইংল্যান্ডকে সহজ একটি জয় পেতে সাহায্য করে।
প্রথম ইনিংসে ভারত ব্যাটিং করে ৩৩৬ রান জমা করে স্কোরবোর্ডে। এত বড় রান তাড়া করতে নেমে সূচনাটা হওয়া দরকার ছিলো দারুণ। তাই করলেন বেয়ারস্টো ও জেসন রয়। দুইজনের উদ্বোধনী জুঁটি থেকে আসে ১১০ রান। এরপর রয় আউট হয়ে গেলেও নিজের আপন ছন্দে ব্যাট চালাতে থাকেন বেয়ারস্টো। নিজের নামের পাশে জমা করেন ১২৪ রান মাত্র ১১২ বলে। সেই ইনিংসের সুবাদে ইংল্যান্ডের জয় সহজ হয়ে যায়। মাত্র ৪৩.৩ ওভারেই ম্যাচ শেষ করে সিরিজে ১-১ এর সমতা ফেরায় ইংল্যান্ড।
- বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)- ৫২ বলে ৯৯ রান
ভারতের বিপক্ষে সেই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি জয়ে ইংলিশ ব্যাটারদের মধ্যে বেন স্টোকসের ইনিংসটিও ছিলো বিধ্বংসী। ব্যাটিং এ নেমেই শুরু থেকে ভারতীয় বোলারদের উপর চড়াও হতে থাকেন বেন স্টোকস। তাঁর এই হাতখুলে মারকাটারি ব্যাটিং এর ভরসা জোগাচ্ছিলো জনি বেয়ারস্টোর ধীরস্থির কিন্তু কার্যকরী ইনিংস।
১৯০ এর উপর স্ট্রাইক রেটে সেদিন মাত্র ৫২ বলে ৯৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন বেন স্টোকস। অসাধারণ মারকুটে ইনিংসে ছিলো দশটি ছক্কা ও চারটি চার। বেয়ারস্টোর শতক আর স্টোকসের এমন আগুন ঝড়ানো ব্যাটিং এ প্রায় সাত ওভার বাকি থাকতেই ৩৩৭ রানের টার্গেট টপকে যায় ইংল্যান্ড।
- ফখর জামান (পাকিস্তান)- ১৫৫ বলে ১৯৩
এ বছরের এপ্রিলে তিন ওয়ানডে ও চার টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সিরিজের জন্যে পাকিস্তানকে আতিথিয়তা দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই সফরে পাকিস্তান ওয়ানডে সিরিজের শুরু করে জয় দিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে পাকিস্তানি বোলারদের কোনরকম পাত্তা না দিয়ে ৩৪১ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটাররা।
জবাব দিতে নেমে প্রোটিয়া বোলারদের দারুণ বোলিং এর কোন প্রতিকার বোধহয় জানা ছিলো না পাকিস্তানি ব্যাটারদের। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু ফখর জামান। একপ্রান্ত আগলে ধরে রেখে দলকে ৩০০ রান পার করান তিনি। নিজে করেন ১৯৩ রান। অল্পের জন্যে দ্বিশতক বঞ্চিত হন ফখর। শেষমেশ মাত্র ১৭ রানের জন্যে ম্যাচ হারে পাকিস্তান ।
- স্পেশাল মেনশনঃ সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)- ১০৯ বলে অপরাজিত ৯৬ রান
বছরের মাঝামাঝি সময়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে দীর্ঘদিন বাদে রানের দেখা পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এছাড়াও সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে দলকে জয় এনে দিতে দারুণ এক কার্যকরী ইনিংস খেলেছিলেন সাকিব।
জিম্বাবুয়ের দেওয়া মাত্র ২৪১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু পূর্বের ন্যায় বাংলাদেশের নড়বড়ে ব্যাটিং লাইন আপে নিয়মিত পতন হতে থাকলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে ১০৯ বলে ৯৬ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন সাকিব আল হাসান। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের পরও অষ্টম উইকেটে সাইফউদ্দীনের সাথে ৬৯ রানের একটি পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান সাকিব।