ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোর্টনি ওয়ালশ-কার্টলি অ্যামব্রোস, পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম-ওয়াকার ইউনুস কিংবা অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকগ্রা-ব্রেট লি জুটি— ক্রিকেট ইতিহাসে এই বোলিং জুটিগুলো তো এক কথায় ইতিহাসখ্যাত। তবে আশি নব্বই দশক থেকে সময় যত গড়িয়েছে বোলারদের আগ্রাসন ঠিক ততই কমেছে। এখনকার ক্রিকেট হয়ে উঠেছে শুধুই রানের খেলা।
এবারের বিশ্বকাপের কথাই ধরা যাক। ব্যাটারদের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের বিপরীতে প্রতিরোধ গড়ার জন্য বোলারদের জন্য যেন কোনো রসদই অবশিষ্ট নেই। বোলারদের অসহায়ত্বের পক্ষে কথা বলছে পরিসংখ্যানও। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে বোলাররা প্রায় ৬.০০ ইকোনমি রেটে বোলিং করেছেন।
স্পিনাররা যদিও বা ৫.৩৪ ইকোনমিতে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে। তবে পেসাররা সেই ইকোনমির দিক দিয়ে ৬ এর গণ্ডিতেই থেকে গিয়েছে। এর মাঝেও এবারের বিশ্বকাপে বল হাতে আলো জ্বেলেছেন ভারতীয় পেসাররা।
বুমরাহ-সিরাজ-শামি পেসত্রয়ীর আক্রমণে যেন দাড়াতেই পারছে না প্রতিপক্ষে ব্যাটাররা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ২২৯ রানের পুঁজি নিয়েও ভারত সে ম্যাচ জিতেছিল ১০০ রানে। যার নেপথ্যে ছিল বুমরাহ-শামির দ্বৈত বোলিং তাণ্ডব।
ঠিক এক ম্যাচ বাদেই এবার শ্রীলঙ্কাকে ৫৫ রানে অলআউট করে তো রীতিমত তাদের লজ্জায় ডুবিয়েছে ভারত। এ যাত্রাতেও ভারতকে টেনেছেন পেসাররা। লঙ্কান ব্যাটিং অর্ডারে ১০ উইকেটের ৯ উইকেটই যে গিয়েছে শামি-সিরাজ-বুমরাহদের পকেটে।
এবারের বিশ্বকাপের ভারতের এই পেস বোলিং লাইনআপ কতটা ভয়ংকর ছিল, তা তথ্য উপাত্তে আরেকটু বিশ্লেষণ করা যাক। ১০ দেশের এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৭ দেশের পেসারই তাদের বোলিং ইকোনমি ৬ এর নিচে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান আর ভারতের পেসাররাই শুধুমাত্র এই মানদণ্ডে সফল।
তবে সবার চেয়ে এগিয়ে ভারতীয় পেসাররা। এখন পর্যন্ত ৪.৮৭ বোলিং ইকোনমিতে বল করেছে ভারতের পেসাররা। যেখানে ৫-এর নিচে ইকোনমি রেট নেই আর কোনো দেশের পেস বোলিং লাইনআপের।
উইকেটের দিক দিয়ে ৪৫ উইকেট পেসারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট ভারতীয় পেসারদের। ৫০ উইকেট নিয়ে এ তালিকায় শীর্ষে এখন দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে বোলিং গড় কিংবা বোলিং স্ট্রাইকরেট- দুই ক্ষেত্রেই শীর্ষে রয়েছে বুমরাহ-শামি-সিরাজরা। ৭ ম্যাচ শেষে ভারতীয় পেসারদের বোলিং গড় ১৮.৫৭।
অর্থাৎ প্রতি ১৮ রানের বিনিময়ে প্রতিপক্ষের একটি উইকেট তুলে নিয়েছে ভারতীয় পেসাররা। এই মানদণ্ডে বাকি ৯ টি দেশের একটি দেশেরও বোলিং গড় ২০ এর নিচে নেই। বলে রাখা ভালো, ৫৩.৫২ বোলিং গড় নিয়ে বোলিং গড় বিবেচনায় সবচেয়ে বাজে অবস্থানে আছে বাংলাদেশের পেসাররা।
বোলিং স্ট্রাইকরেটের দিক দিয়েও একাধিপত্য ভারতীয় পেসারদের। তাদের স্ট্রাইকরেট ২২.৮। অর্থাৎ প্রায় ২৩ বলে একটি করে উইকেট পেয়েছে ভারতীয় পেসাররা। এখানেও সবার পিছনে রয়েছে বাংলাদেশি পেসাররা। প্রতি উইকেট তুলে নিতে তাসকিন, শরিফুলরা খরচ করেছে ৫০ টা বল!
বোলিং স্ট্রাইকরেটের দিক দিয়ে ভারতের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ ক্ষেত্রে তাদের সংখ্যাটা ২৩.৮।অবশ্য ভারতীয় পেসারদের শ্রেষ্ঠত্ব শুধু এবারের বিশ্বকাপেই নয়, চলছে গত ৪ বছর ধরেই। সর্বশেষ ৪ বছরে সর্বোচ্চ ৩৩৪ টা
উইকেট তাদের পেসারদের কাছ থেকেই এসেছে। এ সময়কালে আর কোনো দলের পেস বোলিং ইউনিটই উইকেট সংখ্যায় ৩০০ টপকাতে পারেনি। বলাই বাহুল্য, ভারতীয় পেসাররা অন্য দেশগুলোর থেকে নিজেদের ধরাছোয়ার বাইরে নিয়ে গেছে শেষ ৪ বছর ধরেই।
বুমরাহ-সিরাজ-শামি, এই পেসত্রয়ী যেন এবার নিজেদের আরো শাণিত করেই বিশ্বকাপ মঞ্চে পা রেখেছেন। আর সে কারণেই প্রতিপক্ষে কাছে তাঁরা হয়ে উঠছেন ত্রাসের নাম। প্রতিপক্ষের ব্যাটিং অর্ডারে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে এদের যে জুড়ি নেই।