Social Media

Light
Dark

ছোটদের বাদশাহ বাবর

তিনিও বাবর। তাঁর জন্মও পাকিস্তানে। তিনিও বাইশ গজের বাদশাহ। তবে, তিনি দ্য গ্রেট বাবর আজম নন। তিনি কে?

বড় দলের সাথে ম্যাচ খেলার খুব একটা সুযোগ তাঁরা পান না বললেই চলে। বছরের পর বছর চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে থাকতে হয় বৈশ্বিক কিংবা মহাদেশীয় কোনো আসরের জন্য। সেখানে খেলাটাও সোজা কথা না, ক্রিকেটের কুলীনদের সাথে খেলতে গেলে পাড়ি দিতে হয় বাছাইপর্বের কঠিন ধাপ। তবে সুযোগ পেলে তারাও যে কম যান না, ভারতের বিপক্ষে সেটাই আজকে দেখিয়েছেন ছোট দলের বড় তারকা, হংকং এর ব্যাটসম্যান বাবর হায়াত।

না, বাবর হায়াত হংকংকে ভারতের বিপক্ষে জেতাতে পারেননি। স্কোরবোর্ড বলবে বেশ হেসেখেলেই ম্যাচটা জিতেছে ভারত। কিন্তু বাবর যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন হংকংকে। হয়ে উঠেছিলেন বাইশ গজের বাদশাহ বাবর।

জানান দিয়েছেন নিজের সামর্থ্য, দেখিয়ে দিয়েছেন পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে তিনিও যে কারো চেয়ে কম যান না।পাকিস্থানের বিপক্ষে ম্যাচের সেরা বোলার ভূবনেশ্বর কুমার কিংবা আবেশ খান – তার বিপক্ষে সুবিধা করতে পারেননি কেউই। আবেশ খানের মাথার উপর দিয়ে যে বিশাল ছক্কাটা আছড়ে ফেলেছেন গ্যালারিতে সেটা ভুলতে সময় লাগবে ভারতীয় এই পেসারের। ৩৫ বলে ৪১ রান করে ফেরার সময় তাই গ্যালারির দর্শকদের অভিবাদনে কমতি পড়েনি বাবর হায়াতের জন্য।

পাকিস্থানে জন্ম হলেও বাবরের ক্রিকেটের শুরুটা হংকং এর হয়েই। ২০১৪ সালে কুয়ালালামপুরে আফগানিস্থানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু এই ব্যাটসম্যানের। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে খ্যাতি কুড়ান বাবর। এশিয়া কাপ বরাবরই বেশ পয়মন্ত বাবরের জন্য। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরে বারবারই হেসেছে তার ব্যাট।

এমনকি টি টোয়েন্টি এশিয়া কাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসও এই ব্যাটম্যানের। ২০১৬ এশিয়া কাপে ওমানের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৬০ বলে ১২২ রানের বিধ্বংশী এক ইনিংস। এবারের এশিয়া কাপের বাছাইপর্বেও ছিলেন টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক।

স্পিন কিংবা পেস উভয়ের বিপক্ষেই বেশ সাবলীল বাবর। নিজের শারীরিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বলকে মাঠ ছাড়া করাতেই তার তৃপ্তি। বেশিরভাগ ম্যাচেই তার ব্যাটের উপর নির্ভর করে দলের জয়-পরাজয়। টপ অর্ডারে বাবর রান করলেই হাসি ফুটে হংকংবাসীর। তার পরিসংখ্যানও চমৎকার। এখনো পর্যন্ত ৩২ টি টোয়েন্টি খেলে চার ফিফটি আর এক সেঞ্চুরিতে তার সংগ্রহ ৭৫৮ রান। স্ট্রাইকরেটটাও ঈর্ষণীয়, ১২৭! একদিনের ক্রিকেটেও সমানতালে পারফর্ম করে যাচ্ছেন এই ব্যাটসম্যান, প্রায় ৪০ ছুঁই ছুঁই গড়ে রান করেছেন ৭৮৪।

তবে ছোট দলের তারকাদের ভালো খেলার মাঝে মিশে থাকে আক্ষেপও। পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার সুযোগটা যে তারা পান না। বাবরদের আজকের প্রতিপক্ষে ভারতের ক্রিকেটারদের কথাই ধরুন না, তারা যেখানে এক বছরে প্রায় ত্রিশটি ম্যাচ খেলেন। সেখানে ২০১৪ সালে অভিষেক হওয়া বাবর একদিনের ক্রিকেটে ম্যাচ খেলেছেন সাকুল্যে ২২টি। নিয়মিত ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে এশিয়ার ক্রিকেটের বড় বড় নামের পাশে হয়তো থাকতো বাবরের নামও। 

ক্রিকেটের ক্রমাগত অর্থের ঝনঝনানি কিংবা ফিক্সিংয়ের কালো থাবার ভীড়েও বাবর হায়াতরা মনে থাকবেন। তারা মনে থাকবেন তাদের চেষ্টা-অধ্যবসায়ের জন্য, শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে হার না মানা মানসিকতার জন্য। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link