বাংলাদেশের ঘরোয়া গ্রেট

একটা আক্ষেপ করতেই পারেন এনামুল হক বিজয়। দীর্ঘ দিন পর জাতীয় দলে ফিরেছিলেন। প্রত্যাবর্তনটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দুই অর্ধশতক মিলিয়ে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৬৯ রান।

একটা আক্ষেপ করতেই পারেন এনামুল হক বিজয়। দীর্ঘ দিন পর জাতীয় দলে ফিরেছিলেন। প্রত্যাবর্তনটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দুই অর্ধশতক মিলিয়ে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৬৯ রান।

এরপর স্রেফ একটা সিরিজের ব্যর্থতা। ভারতের বিপক্ষে ৩ ওয়ানডে ম্যাচ মিলিয়ে নামের পাশে যোগ করতে পারলেন মাত্র ৩৩ রান। ব্যাস। বিজয়ের বিজয়গাঁথা গল্পের ইতি ঘটে গিয়েছে সেখানেই।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের স্কোয়াডে জায়গা হল না। একই পরিণতি, আসন্ন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও। দলে নতুন মুখ মিলেছে, কিন্তু এক সিরিজ আগেই যিনি দলের সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিলেন তিনি হয়ে রইলেন ব্রাত্য হয়ে।

জাতীয় দলের দরজায় এসে কড়া নাড়ার ঠিক পর মুহূর্তেই বিষণ্ন প্রস্থান। তবে এনামুল হক বিজয়ের এই শেকল ভাঙ্গার পদ্ধতিটা জানা আছে। তিনি জানেন, কিভাবে আবারো ফিরে আসতে হয়। সেই যাত্রায় আবারো বিজয়ের ঝলকানি। আগের মৌসুমে ১১৩৮ রান করা বিজয় এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ শুরু করলেন সেঞ্চুরি দিয়ে। ঠিক যেখান থেকে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন আবারো শুরু করলেন। ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে খেললেন ১২৩ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস।

৬ চার আর ৬ ছক্কায় সাজানো ইনিংসে পেয়েছেন লিস্ট এ ক্যারিয়ারের ১৬ তম শতক। সাথে স্ট্রাইক রেটও রেখেছেন ১০০ এর উপরে। হয়তো জাতীয় দলে ব্রাত্য থাকার আক্ষেপটাই ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন এই ইনিংস দিয়ে।

বিজয়ের এমন রুদ্রমূর্তিতে তাই চক্ষুশূল হয়েছে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বোলাররা। বিজয়ের ব্যাটিং তোপে প্রায় সবার বোলিং ফিগারই গিয়ে ঠেকেছে বড্ড বেশি খরুচেদের তালিকায়। দলের প্রধান বোলার মোহর শেখ শেষ পর্যন্ত বিজয়কে ফিরিয়েছিলেন অবশ্য। কিন্তু নিজের বোলিং স্পেল স্পেল শেষ করেছেন ১০ ওভারে ৮৫ রান দিয়ে।

এনামুলের এমন দুর্দান্ত ইনিংসে আবাহনী লিমিটেডও পেয়েছে পাহাড়সহ সংগ্রহ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩৭২ রানে থেমেছে তাদের ইনিংস।

এনামুল হক বিজয়ের ১১৩৮ রানের গল্পটা প্রায় সবার জানা। লিস্ট এ ক্রিকেট ইতিহাসে তখন পর্যন্ত এক মৌসুমে হাজার রানের গল্পটা কেউ লেখেনি। কিন্তু সেই ইতিহাসটাই বদলে দিলেন বিজয়। ১৯৯১ সালে টম মুডির গড়া এক মৌসুমে করা ৯৭১ রানের রেকর্ডটা তো টপকালেনই, সাথে ইতিহাসের প্রথম ব্যাটার হিসেবে স্পর্শ করলেন ১০০০ রানের মাইলফলকও। বিজয়ের ছুঁটে চলা সেই সহস্র রানেই থেমে থাকেনি। এরপর সেই রেকর্ডটাকে নিয়ে গিয়েছেন একদম ধরাছোঁয়ার বাইরে। সে মৌসুমে ১০০০ পেড়িয়ে ১১৩৮ রান করে শেষ পর্যন্ত থেমেছিলেন বিজয়।

বিজয়ের ভাগ্যবদল হয়ে যায় ঐ ডিপিএল দিয়েই। জাতীয় দলে আবারো ফিরলেন। শুরুটাও হলো দুর্দান্ত। কিন্তু এরপরেই আবার ছন্দ-চ্যুতি। আর সেই সাময়িক ছন্দ-চ্যুতিই যেন নির্বাচকদের ছন্দ-চ্যুতি ঘটালো। অথচ যে সিরিজে বিজয় খারাপ করলেন, সেই সিরিজে এক মিরাজ আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বাদে কেউই তেমন ব্যাটে রান পাননি। কিন্তু বাদ পড়া নামক শাস্তির খড়গটা পড়লো ঐ এনামুলের উপরেই।

ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দল নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা বলেছিলেন। তখন একটা সম্ভবনা জেগেছিল, হয়তো বিজয় আবারো ফিরতে পারেন। কিন্তু বিজয় থাকলেন বাদ পড়াদের তালিকাতেই। আয়ারল্যান্ড সিরিজে অফ ফর্মের বৃত্তে থাকা ইয়াসির আলী রাব্বির অন্তর্ভূক্তি হলো, নতুন মুখ হিসেবে জাকির হাসান আসলেন দলে। কিন্তু বিজয়কে নিয়ে পরখ করতেই যেন টিম ম্যানেজমেন্টের বড্ড আপত্তি, নির্বাচকদের অনাগ্রহ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচকরা আদৌ কি ডিপিএলকে পারফর্ম্যান্সের মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করেন? খুব সম্ভবত না। দ্বিধাহীনভাবেই বলা যায়, লিস্ট এ ক্রিকেটে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার বিজয়। তারপরও কেন বিজয়, ব্রাত্য হয়েই থাকেন? বিষয়টা উত্তরবিহীন প্রশ্নের মধ্যেই আটকে থাকে। কারণ বিজয়কে বাদ দেওয়া নিয়ে নির্বাচকদের থেকে সদুত্তর কিংবা যৌক্তিক কোনো বিশ্লেষণই আসে নি।

হ্যাঁ। এনামুল হক বিজয় ওয়ানডে একাদশে পাবেন কিনা সেটা অন্য একটা আলাপের বিষয়। কিন্তু স্কোয়াড থেকে ছিটকে দেওয়াটা যে একজন ক্রিকেটারের মনোবলে প্রবল্ভাবে আঘাত করে, সেটি আগ বাড়িয়ে না বললেও চলে।

অবশ্য বিজয়ের ভাগ্যটাই এমন। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইনজুরিতে পড়ার পরই জাতীয় দলে নিজের জায়গা হারালেন। হারালেন তো হারালেনই, আর ফিরতেই পারছিলেন না। দীর্ঘ সময়ের বিরতিতে তাঁর বিকল্প ততদিনে বাংলাদেশ পেয়ে গিয়েছে। তারপরও নিজের সাথে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন বিজয়। বিজয়ের দেখা পেয়েছিলেন নিজেও। কিন্তু সেই দুর্ভাগ্য, কারোর সুনজরে না থাকাটাই আবারো তাঁর পথ আটকে দিল। বিজয় আবারো সেই পথে হাঁটার লক্ষ্যেই আবারো পা বাড়াতে শুরু করেছেন।

সেই শুরুর যাত্রায় প্রারম্ভিকা রচিত হলো সেঞ্চুরি দিয়ে। দারুণ শুরুটা নিশ্চিতভাবেই এবারও ধারাবাহিকতার চাদরে মুড়ে রাখতে চাইবেন বিজয়। তারপরও বিজয় আক্ষেপ করে বলতেই পারেন, আর কত প্রমাণ করতে হবে আমাকে! বিজয়কে কি বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের গ্রেট হয়েই ইতি টানতে হবে ক্যারিয়ারের?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...