বহুরূপী এক বিলি ডকট্রোভ

বেশ কিছু দ্বীপ রাষ্ট্র মিলিয়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ তথ্য তো আর নতুন নয়। ছোট ছোট প্রতিটি দ্বীপের নিজস্বতা রয়েছে। দ্বীপের প্রতিটি মানুষের কাছে তাঁদের এক একটি সাফল্য যেন বহুদিন আঁকড়ে ধরে রাখার মত এক একটি অর্জন। এই তো বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেই তো দেখা গেল নিজেদের কিংবদন্তিদের ঠিক কতটা সম্মান দিয়ে থাকে ক্যারিবিয়ান দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো।

প্রথম টি-টোয়েন্টির পর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিও অনুষ্ঠিত হয়েছে ডমিনিকায়। সেটাও একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। খেলা হওয়া উইন্ডসর পার্কের প্রায় প্রতিটি গ্যালারির নামকরণ করা হয়েছিল ডমিনিকাকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করা ক্রিকেট ব্যক্তিত্বদের নামের সাথে মিল রেখে। তেমনই এক নাম বিলি ডকট্রোভ। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির দিন অর্থাৎ তিন জুলাই ছিল ভদ্রলোকের জন্মদিন।

তবে প্রশ্ন জাগতে পারে, কি এমন করেছেন বিলি ডকট্রোভ যে তাঁর নামে রয়েছে গ্যালারি? মশাই তিনি তো ছিলেন নিবেদিত প্রাণ একজন মানুষ। ডমিনিকার ক্রিকেটের উন্নয়নে তিনি কাজ করে গেছেন। ডমিনিকা ছোট্ট একটি দ্বীপরাষ্ট্র। সে রাষ্ট্রের প্রথম টেস্ট আম্পায়ার ছিলেন বিলি ডকট্রোভ। এ যেন বড্ড বেশি সম্মানের। তবে বিলি ডকট্রোভের আরও এক পরিচয় রয়েছে।

তিনি ছিলেন ফিফার রেফারি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই ক্রীড়াপ্রেমীর। ১৯৯৭ সালে তিনি সে দায়িত্ব থেকে সরে দাড়িয়েছেন। আর পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছেন ক্রিকেট আম্পায়রিংয়ে। তবে এর আগে অবশ্য ডমিনিকা ফুটবল রেফারিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে এখনও দায়িত্বরত রয়েছে ডকট্রোভ।

১৯৯৭ সালে রেফারির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে তিনি মনোযোগ দেন প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট আম্পায়ারিংয়ে। নিজের আম্পায়ারিং দক্ষতা আর নির্ভুল সিদ্ধান্তের পুরষ্কার হিসেবে তিনি সুযোগ পেয়ে যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। বছর খানেক বাদেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড তাঁকে নিযুক্ত করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ানডে ম্যাচে। সেখান থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করবার যাত্রা শুরু।

এরপর ক্রমশ তিনি তাঁর নিষ্ঠা আর দক্ষতায় সামলাতে থাকেন একের পর এক ওয়ানডে ম্যাচ। ২০০০ সালে তিনি প্রথম বারের মত সুযোগ পান টেস্ট ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করবার। ডমিনিকার প্রথম টেস্ট আম্পায়ার হিসেবেও নিজের নামটি লিখিয়ে ফেলেন বিলি ডকট্রোভ। ডমিনিকার ক্রীড়া উন্নয়নে এই বিষয়গুলো দারুণ প্রভাব ফেলে। ডকট্রোভ বনে যান বিশ্ব দরবারে ডমিনিকার প্রতিনিধি।

এরপর ডকট্রোভের আম্পারিং যাত্রা সুগম পথ ধরে চলতে থাকে। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগের বেশি ক্যারিয়ারে কখনোই কালিমা লেপনের সুযোগ পর্যন্ত দেননি ডকট্রোভ। তিনি নিজের ক্যারিয়ারে ৩৮ খানা টেস্ট ম্যাচে আম্পায়িং করেছেন। চেষ্টা করেছেন নির্ভুল আর নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত দেওয়া। টুকটাক ভুল হয়ত তিনিও করেছেন। তবে অধিকাংশ সিদ্ধান্ত ছিল প্রশ্নের উর্ধ্বে।

সততার পথ পারি দিয়ে তিনি ১১২ টি ওয়ানডে ম্যাচেও আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। চাপের মুখেও তিনি সর্বদা ছিলেন অনড়। তিনি জানতেন তাঁর একটা ভুল সিদ্ধান্ত একটা দলের ম্যাচ হারার জন্য যথেষ্ঠ। অধিকাংশ সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচে তিনি আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করলেও আবেগ কখনোই তাঁকে প্রভাবিত করতে পারেননি। ক্রিকেট না খেলেও সম্মান তিনি ঠিকই আদায় করে নিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ানদের।

২০১২ সালে তিনি শেষবার দাঁড়িয়েছিলেন উইকেটের পেছনে। এর আগে ১২ খানা টি-টোয়েন্টি ম্যাচও পরিচালনা করেছিলেন বিলি ডকট্রোভ। ডমিনিকার উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হয়েই চিরকাল দ্বীপটির ক্রীড়াপ্রেমীদের মনে গেঁথে থাকবে বিলি ডকট্রোভের নাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link