ব্রাজিল, কাতার বিশ্বকাপ ও বাস্তবতা!

নতুন কোচ আসলে হয়তো দল নতুন করে চাঙ্গা হয়ে ভাল খেলবে হঠাৎ করে, কিন্তু কিছুদিন পর একই সংকট গুলো আবার সামনে হবে। এর আগে ব্রাজিলের ডাগ আউটে মেনজেস, স্কলারি, দুঙ্গা, এবং তিতে – এরা সবাই এসে ভাল শুরু করেছিল কিন্তু বছর খানিক পর সবারই যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই, তিতেকে সরানো মানে একই চক্র আবার নতুন করে শুরু করা ছাড়া কিছুই হবেনা। তার চেয়ে ব্রাজিল কেন এই মুহূর্তে আগের মতো কিংবদন্তিতুল্য খেলোয়াড় তৈরি করছেনা সেটা নিয়ে ভাবা যেতে পারে।

এই প্রজন্মের কাছে সদ্য শেষ হওয়া কোপা আমেরিকা ফাইনাল ম্যাচটা ঐতিহাসিক ম্যাচ হিসেবেই গণ্য হবে, কারণটা সবারই জানা – দীর্ঘ আঠাশ বছর এর অপেক্ষার পর আর্জেন্টিনা শিরোপার দেখা পেয়েছে। ঐতিহাসিকতো বটেই। কিন্তু ব্রাজিল ফুটবলের জন্য এই ম্যাচটা মোটেও স্মরণ রাখার মতো না।

একেতো নিজেদের মাঠে খেলা, তাও আবার মারাকানায়, প্রতিপক্ষ আবার চীর প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা। কোপা আমেরিকাকে যতই ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ বলার চেষ্টা করুক এরকম একটা ম্যাচ হারা যেকোন সময়ের জন্য ব্যার্থতার সামিল। আর ব্রাজিলের সেই ব্যার্থতা এবং ফাইনাল পরবর্তী সময়ে ব্রাজিল ফুটবল অনুরাগীদের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে কয়েকটি প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। এগুলার মধ্যে যেমন আছে স্কোয়াডের শক্তিমত্তা নিয়ে সংশয়, তেমনি কোচের তিতের ডাগ আউটে থাকার যথার্থতা নিয়েও অনেকে সন্দেহ পোষণ করছেন।

যাকে প্রফেসর তিতে বলতেই একসময় দর্শকরা স্বচ্ছন্দ্য বোধ করতো, সেখানে এখন তার যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলাটা একটু আবেগের বহিপ্রকাশ বলতে হবে। অন্তত আমি তিতের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করার দলে না আপাতত। তবে তিতের যে একেবারে কোন দোষ নেই সেটা প্রমাণ করার জন্য এটা লিখতে বসিনি, বরং তিতের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগুলোকে একটু খন্ডানোর চেষ্টা করবো।

যে অভিযোগটা সবার সামনে এসেছে তা হচ্ছে ওর দল নির্বাচন নিয়ে। স্কোয়াডে যে তেইশ জন খেলোয়াড়কে ডাকা হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই যোগ্য না খেলার জন্য। কিন্তু পালটা প্রশ্ন হচ্ছে এদের রিপ্লেস করার মতো ভাল খেলোয়াড় এই মুহূর্তে কি আছে তিতের হাতে? থাকলে সেগুলো কারা। এছাড়া ২০১৯ এই তিতে কোপা আমেরিকা জেতায় ব্রাজিলকে, তাহলে সেই দলের সাথে বর্তমান দলের কি এমন পার্থক্য তৈরি হয়েছে যে ব্রাজিল ২০২১ কোপা ফাইনালে একেবারে ছন্দহীন হয়ে পড়ে।

আর যদি ধরে নি যে তিতে একেবারে সঠিক দলটাই নির্বাচন করলো তাহলে কি ব্রাজিল তাদের “গুরুত্বপূর্ণ” ট্রফি বিশ্বকাপ জেতার মতো স্কোয়াড পাবে, অর্থ্যাত ২০২২ বিশ্বকাপ জিততে না পারলে তিতেকে কতটা দায় নিতে হবে। সেটা বুঝতে দেখতে এই মুহুর্তে বিশ্বের বাকি দলগুলার স্কোয়াড হাল কেমন।

ব্রাজিলের বর্তমান স্কোয়াড, ২০১৯ কোপা আমেরিকা স্কোয়াড, ভবিষ্যতে কারা দলে আসতে পারে, এবং ইউরোপের সেরা তিনটা দল (ইতালি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম) -এর সাথে ব্রাজিলের পার্থক্য কেমন। এই বিষয় গুলা নিয়ে একটু বিশদ আলোচনা করার চেষ্টা করলাম।

  • স্কোয়াডে ব্রাজিলিয়ান লিগ থেকে আছে তিনজন খেলোয়াড় (গোলরক্ষক বাদে)

অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ফিলিপের শুরুতে স্কোয়াডে ছিল, কিন্তু ইনজুরির কারণে কোপার স্কোয়াড থেকে ছেটে ফেলা হয় তাকে। তার বদলে দলে এসেছে লিও অরটিজ। ব্রাজিলের রেড বুল এর প্লেয়ার কিন্তু এই সিলেকশান নিয়ে তেমন কোণ অভিযোগ নাই, কারণ সেন্ট্রাল ব্যাক (সিবি) নিয়ে খুব একটা সমস্যা নাই ব্রাজিলের।

ফ্লামেঙ্গো থেকে আসা গ্যাব্রিয়েল বারবোসাকে বাদ দেয়ার প্রশ্ন এসেছে, কিন্তু সে-ই- একমাত্র নাম্বার নাইন স্কোয়াডে। ২০১৯ সালের কোপা স্কোয়াডে ওর পজিশনের কোন প্লেয়ার ছিলনা, নেরেসকে তার পজিশনের ধরা যাইতে পারে। বর্তমানে সেই জায়গায় জার্মান লিগে খেলা কুনহাকে স্কোয়াডে ঢুকানো যাইতে পারে। কিন্তু আয়াক্সের হয়ে দুর্দান্ত খেলা নেরেস যখন জাতীয় দলে এসে ভালো কিছু দিতে পারে নাই, তখন হার্তা বার্লিনের কেউ এসে কেমন খেলবে সেটার কোন নিশ্চয়তা নাই। এদিকে বারবোসা যখন ইয়ংস্টার ছিলেন, তখন ওকেই দলে নেয়ার জন্য প্রচুর প্রেশার ছিল। ফ্লামেংগোতে নিশ্চয় ভাল ফর্মে আছে, কিন্তু জাতীয় দলে ভাল খেলে নাই এখনো। কিন্তু ওর পটেনশিয়াল এবং পজিশন হিসেব করলে রাখা যায়তে পারে।

এভারটন রিবেইরোও ফ্লামেংগোর প্লেয়ার, ওর জায়গায় গারসন কে নিলে আহামরি কিছু হবে কিনা বলা যায়না।

  • ফরোয়ার্ড লাইন

বর্তমান স্কোয়াডে নেইমার সহ টোটাল ৭ জন ফরোয়ার্ড আছে স্কোয়াডে। এদের মধ্যে নেইমার, জিসুস, ফিরমিনো মুটামুটি নিশ্চিত জায়গা পাওয়ার যোগ্য বলা চলে। বাকি চারজনের মধ্যে ভিনিসিয়াস জুনিয়র এবং বারবোসাকে নিয়ে সন্দেহ আছে যদিও পটেনশিয়াল আছে, ফর্মের উপর নির্ভর করবে ওদের দলে থাকা। রিচার্লিসন এভারটনের রেগুলার প্লেয়ার, অথচ জাতীয় দলে খাপছাড়া মনে হয়। আর আছে এভারটন, এ বেনফিকাতে খেলে রেগুলার।

তিনজন নিশ্চিত প্লেয়ার বাদে বাকি চারজনের জন্য যেসব অল্টারনেটিভ খেলোয়াড়ের নামগুলো হচ্ছে হার্তা বার্লিনের কুনহা, লিডসের রাফিনহা, জেনিতের ম্যালকম। এদের মধ্যে রাফিনহাকে নিয়ে স্পেশাল কিছু চিন্তা করা যেতে পারে। বাকি দুইজনকে আলাদা কিছু মনে হয় নাই। সে হিসেবে ভিনিসিয়াসকে বাদ দিয়ে রাফিনহাকে নেয়া যেতে পারে।

২০১৯ এর দলে ভিনি এবং গাবির জায়গায় খেলেছিল উইলিয়ান এবং নেরেস। নেরেসের আগের সেসময়ের পারফর্মেন্স থেকে একটা ব্যাপার বলা যায় যে, ক্লাবে ভাল ভাল ফর্মে থাকলেই জাতীয় দলে এসে ভাল খেলবে এটা বলা যায়না। সুতরাং আপনি যাকে ভাবছেন যে ‘নেয়া উচিত’, ও যাস্ট এনাদার অপশন – নিশ্চিত সাফল্য দিবে এমন কেউ না। এর বাইরে রিয়াল মাদ্রিদের রদ্রিগো আছে নেয়ার মতো, ইয়ং ট্যালেন্টেড।

  • ইউরোপের তিন দলের সাথে পার্থক্য

এবার ইতালি, ফ্রান্স এবং বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ড লাইনটা একটু দেখি – ইমোবিল, ইন্সিনিয়ে, বেরার্দি – এই তিনজনই সিরি আ তে গত সিজনের টপ পারফর্মার। আর ইন্সিনিয়ে ইমোবিল বেলত্তি সিরি আর রেগুলার পারফর্মার। ফ্রান্সের ফরোয়ার্ড লাইন নিয়ে কিছু বলার নাই, গ্রিজম্যান, এমবাপ্পে, বেনজেমা, জিরুড – এরা ওয়ার্ল্ডক্লাস এবং প্রত্যেকেই কিংবদন্তি; হ্যাজার্ড, ডেম্বেলে আর থুরাম ব্যাকাপ। বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ড লাইনে আছে লুকাকু – সিরি ‘এ’ টপ স্কোরার – সাথে আছে ন্যাপলির মেরটেন্স, ক্রিস্টাল প্যালেসের বেন্টেক, এছাড়া জেরেমি ডকু গত সিজনে ভাল পারফর্ম করসে।

এদিকে ফরোয়ার্ডদের মধ্যে টপ ফোর লীগে ব্রাজিলের পারফর্মার হচ্ছে নেইমার, ফিরমিনো, জিসুস। সত্যি কথা বলতে, এই তিনজনের কেউই লুকাকুর অর্ধেক সার্ভিসও দেয়না ফরোয়ার্ড হিসেবে। এভারটনের রেটিং ভাল কিন্তু সে পর্তুগিজ লিগে খেলে। গাবিগোল ব্রাজিলে খেলে, সুতরাং রেটিং এর হিসেব করে লাভ নাই। রিচার্লিসন এর গত মৌসুমের রেটিং সাত এর নিচে।

  • মিডফিল্ড

এবার কোপাইয় ছয়জন মিডফিল্ডার নেয়া হয়েছে সব মিলিয়ে। এর মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের ক্যাসেমিরো, অলিম্পিক লাঁইওর লুকাস পাকেতা এবং লিভারপুলের ফ্যাবিনহোকে নিয়ে কোন সন্দেহ নাই – এরা দলে থাকছে। বাকি তিন পজিশনে ২০১৯ দলে ছিল বার্সেলোনার কৌতিনহো, জুভেন্টাসের আর্থুর মেলো, এভারটনের এলান ।

এদের বদলে এবার নেয়া হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফ্রেড, ফ্লামেংগোর রিবেইরো, অ্যাশটন ভিলার ডগলাস লুইজকে। মূলত কৌতিনহো এবং আর্থুর দুজনেই ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার এবং ২০১৯ কোপায় ব্রাজিলের সাফল্যের মূল স্তম্ভ ছিল। কিন্তু তাদের জায়গায় যারা এসেছে তাদের সেই দক্ষতা নেই বলা যায়। আর এখানেই মূলত তিতের সিলেকশান নিয়ে প্রশ্নগুলো এসেছে।

নেয়ার মতো যাদের নাম আসতেসে তাদের মধ্যে ব্রুনো গুমিরেজ (অলিম্পিক লিঁও), অটাভিও (পোর্তো) – এই দুইজন অন্যতম। এদের বর্তমান স্কোয়াডে খেলা যেকোন দুইজনের বদলে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু ফ্রেড আর লুইজ খেলে প্রিমিয়ার লিগে, এদের একজন খেলে ফ্রেঞ্চ এবং আরেকজন পর্তুগিজ লিগে – সুতরাং এরা ওদের চেয়ে বেটার করে ফেলবে কিসের উপর ভিত্তি করে বলবো? যাকে নিলাম সে ভাল করছেনা দেখে যাদের নিলাম না তারা খারাপ করবে বলা যায়না।

তাছাড়া কোপাতে ফ্রেড এর কাছ যে সার্ভিস চাওয়া হয়েছিল তা সে দিয়েছে কিনা দেখতে হবে। সে হিসেবে যদি ধরে নেই ফ্রেড দলে থাকবে তাহলে পরীক্ষামূলক ভাবে বাকি দুইজনকে (অর্থ্যাৎ রিবেইরো, লুইজ) বাদ দিয়ে এই দুইজনকে (ব্রুনো, অটাভিও) দলে আনা যেতে পারে। ব্রুনোকে মূলত আর্থুরের সার্ভিস এর জন্য বেশি যোগ্য মনে হচ্ছে, আর অটাভিও কে কৌতিনহোর রোলে খেলানো যেতে পারে।

এর বাইরে বাকি যে নাম গুলা আসছে সেগুলা হচ্ছেঃ ম্যাতিউস পেরেইরা (ওয়েস্টব্রুমে খেলে), জেনিতের ম্যালকম, ফ্লামেঙ্গোর গারসন। ওভারল ক্যাসেমিরো, ফ্যাবিনহো, আর ফ্রেড ছাড়া বাকিরা টপ কোন ক্লাবে খেলে না। পাকেতা মিলানে ছিল কিছুদিন।

  • ইউরোপের তিন দলের সাথে পার্থক্য

ইতালির মিডফিল্ডে টপ ফাইভ লিগের টপ ফোর ফিনিশের রেগুলার ইলেভেনের প্লেয়ার আছে চারজন। ভেরাত্তি, জর্জিনহো, চিয়েসা, বারেল্লা। এছাড়া আছে লুকাটেল্লি – গত সিজনে টপ পারফর্মার। এর বাইরে আছে ক্রিস্টেন্টে, পাসিনা। ফ্রান্সের ৭ জনের ৬ জনই টপ ফাইভ লিগের টপ পারফর্মার (ছবি-৪)। বেলজিয়ামের মিডফিল্ড এ আছে দশ জন প্লেয়ার।

এদের মধ্যে ডি ব্রুইনা বিশ্বের সেরা প্লেয়ারদের একজন, বর্তমানে নেইমারের চেয়ে বেশী কার্যকর। কৌতিনহো ওর লেভেলের না সব মিলিয়ে। আর হ্যাযার্ড ইনজুরিতে আছে, সে হিসেবে ওকে কৌটার সাথে কম্পেয়ার করা যায়। মোট ৭ জন প্লেয়ার আছে যারা টোপ ফোর লিগের টপ ফোর শেষ করা দলে আছে।

ব্রাজিলের মিডফিল্ড একেবারে সাদামাটা সে হিসেবে। ক্যাসেমিরো, ফ্যাবিনহো ছাড়া বাকিরা কেউ সেরাদের কাতারে পড়েনা, কিন্তু এই দুজনই ডিফেন্সিভ রোলে খেলে। সুতরাং মাঝমাঠের দখলের জন্য ব্রাজিলে কোন অস্ত্রই নাই বলা চলে। দলের বাইরে থাকা আর্থুর আর কৌতিনহোর ফর্মে ফেরা তাই ব্রাজিলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

  • ডিফেন্স

একমাত্র ডিফেন্স লাইনেই ব্রাজিলের পর্যাপ্ত প্লেয়ার আছে যারা টপ ফাইভ লিগের টপ ফোরে শেষ করা দলে খেলা, শুধু লিও অরটিজ বাদে। এখন কোপার হতশ্রী পারফর্মেন্সের পর আপনার সান্দ্রো, লোদি, দানিলো, এমারসন – এদের পছন্দ না হতে পারে, কিন্তু এটা মেনে নিতে হবে দুই সেন্টার হাফ পজিশনের জন্য এরাই ব্রাজিলের সেরা প্লেয়ার। এরা সবাই ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলাতে নিয়মিত খেলে।

এদিকে ২০১৯ স্কোয়াডে ফাগনার, ফিলিপে লুইজ আর দানি আলভেজ ছিল – ওদের অভিজ্ঞতা হিসেব করে দলে নেয়া যায় কিনা চিন্তা করা যেতে পারে কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউওনাইটেডের টেলেস কিংবা অন্য কাউকে অপশন হিসেবে দেখার মধ্যে কোন লাভ আছে কিনা নিশ্চিত না।

  •  ইউরোপের সাথে পার্থক্য

বেলজিয়ামের ডিফেন্স অপেক্ষাকৃত দুর্বলই বলা যায়। ফ্রান্সের সবগুলো প্লেয়ারই ইউরোপের সেরা দল এবং লীগের নিয়মিত একাদশের খেলোয়াড়। ইতালির কথা কিছু বলার নাই, সদ্য ইউরো জইয়ের পাশাপাশি ওরা টানা ৩৩ ম্যাচ অপরাজিত, ওদের গোল্কি ডোনারোমা নাকি এখনো ১ গোলের বেশি হজম করেনি কোন ম্যাচে। বিশ্বকাপ আসতে আসতে বনুচ্চি আর কেলেইনির বয়স একটা সমস্যা হতে পারে কিন্তু ইউরোর পারফর্মেন্সের পর বরং অভিজ্ঞতাই পুঁজি হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।

ব্রাজিলের সেন্ট্রাল ব্যাকে অভিজ্ঞ সিলভার পাশাপাশি মার্কুইনহোস এবং মিলিটাও দুর্দান্ত ফর্মে আছে। এদিকে এটলেটিকোর লীগ জয়ী সিবি ফিলিপেও আছে ব্যাকাপ হিসেব। তাই ব্রাজিলের সিবি পজিশন নিয়ে তেমন ভাবনার কিছু নাই।

এছাড়া, গোলপোস্টের সামনের পজিশন নিয়ে ব্রাজিলের দুশ্চিন্তা নাই বলতে গেলে। তবে আর্জেন্টিনার কোপা জয়ের নায়ক এমিলিও মার্তিনেজ যেভাবে সেমিফাইনালে পেনাল্টি সেভ করেছে – তাতে এলিসনদের এর এই জায়গায় একটু ঝালাই করে নেয়া উচিত হবে।

  • শেষকথা

ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড এবং মিডফিল্ড সত্যিকার অর্থে দুর্বল। মিডফিল্ডে “ফর্ম ফেরা সাপেক্ষে” কৌতিনহো বা আর্থুর যুক্ত হলে ক্রিয়েটিভিটি বাড়বে। বর্তমান স্কোয়াডের ফরোয়ার্ড পজিশনে অতিরিক্ত প্লেয়ার আছে কিন্তু বেশিরভাগ কাজের না।

মিডফিল্ড এবং ফরোয়ার্ড – এই দুই জায়গায় কৌতিনহো, আর্থুর, ব্রুনো, অটোভিয়া, রাফিনহা/রদ্রিগো ঢুকলে বাদ দেয়া যাইতে পারে ভিনিসিয়াস, রিবেইরো/লুইজ, এভারটন/বারবোসা, ফ্রেড, রিচার্লিসন। এদের মধ্য থেকে আবার এবার কোপায় রেগুলার খেলা রিচার্লিসনকে দলে রেখে দিলে, রিবেইরো এবং লুইজ এই দুইজনকে একসাথে বাদ দিতে হবে। বাকি থাকে এভারটন, বারবোসা, ফ্রেড। এখান থেকে দুইজন বাদ যাবে।

ফিরমিনো যদিও অটো-চয়েস কিন্তু ওকে ইফেক্টিভলি খেলানোর কৌশল তিতেকে বের করতে হবে; ওর ক্লাসকে অগ্রায্য করার সুযোগ নাই। আসলে একজন প্রলিফিক স্কোরার না থাকার কারণে দুনিয়ার ফরোয়ার্ডে দল ভরে গেসে। মিডফিল্ডে ক্রিয়েটিভিটি নাই হয়ে গেসে।

  • পরিশেষে

তিতে ব্রাজিলের ডাগ-আউটে থাকুক বা না থাকুক, যদি ব্রাজিলের লক্ষ্য বিশ্বকাপ হয়ে থাকে তাহলে সব মিলিয়ে তাদের স্কোয়াড ডেপথ ইউরোপের তুলনায় কতটুকু শক্তিশালী সেটা দেখতে হবে। স্কোয়াড অনুযায়ী ফ্রান্স নিঃসন্দেহে বিশ্বের সেরা দল এই মুহুর্তে কিন্তু ফ্রান্সকে বাদ দিয়ে ইতালি বা বেলজিয়ামের সাথে ব্রাজিলের তুলনা করি তাহলে দেখা যাচ্ছে – ফরোয়ার্ড এবং মিডফিল্ডে সেলাসাও খুব বেশি বিশ্বমানের প্লেয়ার নাই।

এটা বাস্তবতা। এই লেখায় ইউরোপের উদাহারণ গুলা আনা হয়েছে এটাই বুঝানোর জন্য যে – বই খাতা নিয়ে অংক কষলে ব্রাজিলের স্কোয়াড হয়তো আপাত দৃষ্টিতে উন্নত করা যাবে কিন্তু সেটাকে ইউরোপের চায়তে বেটার করা কঠিণ। বিশ্বকাপের জন্য তাই হয়তো আলাদা কোন মশলা লাগবে।

বাস্তবতা হচ্ছে ওয়ার্ল্ডক্লাস প্লেয়ার সব পজিশনে একটা করে হলেই হয় – সেখানে ব্রাজিলের স্ট্রাইকার, উইঙ্গার এবং সেন্ট্রাল মিডফিল্ড পজিশনে এমন কোন প্লেয়ার নাই যাকে বলতে পারবেন সে ওর পজিশনে ওয়ান-অফ-দ্য-বেস্ট। এটা একটা বড় সমস্যা, আর এই সমস্যার সমাধান কোচ করতে পারবেনা – এটা পুরা ব্রাজিলের ফুটবল সিস্টেমের সাথে রিলেটেড।

নতুন কোচ আসলে হয়তো দল নতুন করে চাঙ্গা হয়ে ভাল খেলবে হঠাৎ করে, কিন্তু কিছুদিন পর একই সংকট গুলো আবার সামনে হবে। এর আগে ব্রাজিলের ডাগ আউটে মেনজেস, স্কলারি, দুঙ্গা, এবং তিতে – এরা সবাই এসে ভাল শুরু করেছিল কিন্তু বছর খানিক পর সবারই যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই, তিতেকে সরানো মানে একই চক্র আবার নতুন করে শুরু করা ছাড়া কিছুই হবেনা। তার চেয়ে ব্রাজিল কেন এই মুহূর্তে আগের মতো কিংবদন্তিতুল্য খেলোয়াড় তৈরি করছেনা সেটা নিয়ে ভাবা যেতে পারে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...