বিরাটের স্ট্রাইক রেট, দ্য গ্রেটেস্ট ইস্যু রাইট নাও

আসলে বিরাট হওয়া সহজ নয়। একদিকে যেমন সে এই প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার, তেমনই সম্ভবত সবচেয়ে সমালোচিতও। মাঠের মধ্যে অতিরিক্ত আগ্রাসন থেকে আরম্ভ করে পিতৃত্বের জন্যে লম্বা ছুটি– এই সবকিছুর ব্যাপারেই আমাদের বেশ কিছু কথা বলার থাকে।

নেই নেই করে এ বছর আই পি এলে বেশ কয়েকটি ম্যাচের অংশ দেখে ফেললাম। এমনিতে ব্যাট– বলের মধ্যে ভারসাম্যের অভাব রয়েছে বলে টি২০ আমার খুব একটা পছন্দের ফরম্যাট নয়।

তবু, বিশেষ কয়েকজনের ব্যাটিং বা বোলিং দেখার জন্যে মাঝে মধ্যে টিভি খুলে বসে পড়ি। সেই বিশেষ কয়েকজন হলেন ব্যাট হাতে বিরাট, রোহিত, পন্থ, বোলারদের মধ্যে বুমরা, স্টার্ক, রাবাডা (এগুলো এখন মাথায় আসছে, হয়ত বেশ কয়েকজন বাদ গেলেন)। তবে এদের সঙ্গে অন্য কয়েকজনের দিকেও যে চোখ পড়ে না তা নয়। এবার যেমন ক্লাসেন বা পাথিরানা।

তবে কয়েকটি বিষয়ে আমি বেশ বিভ্রান্তও। যেমন বিরাটের ব্যাটিং। একদিকে যেমন রান সংগ্রহকারীদের মধ্যে তিনি শীর্ষে, অপরদিকে কম স্ট্রাইক রেটের জন্যে (তাও সেটা ১৪০এর ওপর) কপালে তিরস্কারও জুটেছে বেশ খানিকটা।

ধারাবাহিকতা এবং দুর্ধর্ষ স্ট্রাইক রেট– দুটো সাধারণত একসঙ্গে পাওয়া যায় না। এবং এবছর দলের অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের যা ফর্ম, তাতে কোহলি গোটা কুড়ি বেশি অর্থাৎ ১৬০ স্ট্রাইক রেটে ইনিংস প্রতি কুড়ি রান কম করলে তার দলের উপকার না ক্ষতি কোনটা বেশি হত সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে।

আসলে আমরা যতই স্টার স্টার করে লাফাই, ক্রিকেট যে দলগত খেলা সেটা ভুললে চলবে কী ভাবে? ভিভ, সচিন, এ বি ডি, বিরাট– কেউ কখনও দলকে একা বড় টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন করেছে এমন ঘটনা মনে পড়ছে না। বরং সবাই মিলে মোটামুটি অবদান রাখলে অনেক বেশি ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। এখনও অব্দি যে দলগুলো এগিয়ে আছে তাদের প্লেয়ারদের পারফর্মেন্স দেখলেই সেটা বোঝায়। ভারতের ১৯৮৩ বা ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ও তাই।

তবে, এটা আমারও মনে হয়েছে যে ইনিংসের শেষের দিকে বিরাটের ব্যাটিং আগের মতো নেই। এক সময় সেট হয়ে যাওয়া বিরাট ক্রিজে থাকা মানেই বেশ কয়েকটি ১৫ বা তার বেশি রানের ওভার পাওয়া যেত। আজকাল সেটা হচ্ছে না। মোটামুটি পুরো ইনিংস জুড়েই সমান রেটে স্কোর করছেন বিরাট।

তবু, ৭৭ গড়ে ১৪২ স্ট্রাইক রেটে একজন ওপেনার রান করছেন, সেটা দলের পক্ষে কম ভরসার কথা নয়। বরং তাতে অন্য প্রান্ত থেকে ঝড় তুলতে সুবিধে হওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। সুতরাং বিরাটের কাছে দাবি যে তাঁকে একই সঙ্গে নির্ভরতাও দিতে হবে, ঝড়ও তুলতে হবে। অথচ সূর্য বা ক্লাসেন একটা বিধ্বংসী ইনিংস খেলার পর(বা আগে) কয়েকটি ইনিংসে ব্যর্থ হলে তাদের তেমন সমালোচনা হয় না (সঙ্গত কারণেই হয় না)।

আসলে বিরাট হওয়া সহজ নয়। একদিকে যেমন সে এই প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার, তেমনই সম্ভবত সবচেয়ে সমালোচিতও। মাঠের মধ্যে অতিরিক্ত আগ্রাসন থেকে আরম্ভ করে পিতৃত্বের জন্যে লম্বা ছুটি– এই সবকিছুর ব্যাপারেই আমাদের বেশ কিছু কথা বলার থাকে।

Carl Jung বলেছিলেন, ‘Thinking is difficult. That’s why most people judge.’। ঠিকই। অনেক ক্ষেত্রেই হয়ত আমরা নিজেরাই খেয়াল করি না একটা কথা বলার পেছনে আমাদের আসল উদ্দেশ্য কী? হয়ত আমি রোহিত, কপিল বা সচিনের ফ্যান। এবং আমার পছন্দের ক্রিকেটারটিকে ভালোবেসেই আমি সন্তুষ্ট নই, সেই সঙ্গে আমি চেষ্টায় থাকব তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে যেন কিছুটা নামিয়ে আনা যায়।

আমি নিজে একসময় কপিলের ভক্ত হিসেবে ইমরানের সাফল্যে কষ্ট পেতাম। আজকাল অনেককে দেখি বিরাটের সাফল্যে সেই ধরনের কষ্ট পাচ্ছেন। কখনও রোহিত, কখনও সূর্য, কখনও স্মিথকে তার চেয়ে ভালো ব্যাটসম্যান প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় নানান পরিসংখ্যান তুলে ধরছেন। অথচ তিন ধরনের ফরম্যাট ধরলে বিরাট আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

আমরা যদি খেলাটাকে ভালোবাসি সে ক্ষেত্রে একটু চেষ্টা করলে এই সঙ্কীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। এবং সেটা পারলে আমাদেরই লাভ। সেক্ষেত্রে ইমরানের দুরন্ত একশন, লারার চোখ ঝলসানো স্ট্রোক প্লে বা বিরাটের ‘শট অফ দ্য সেঞ্চুরি’ আরও ভালভাবে উপভোগ করতে পারব।

পূর্ণ ছন্দে বিরাট ব্যাট করছে – এর চেয়ে নান্দনিক দৃশ্য ক্রিকেট মাঠে খুব বেশি নেই। আর স্ট্রাইক রেট? সেও হয়ত পাবেন। কারণ আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষদের ভুল প্রমাণ করার জন্যেই তো চ্যাম্পিয়নদের জন্ম। তৈরি থাকুন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...