জয়ের নায়ক লুনিন, পেছনের কারিগর অন্য কেউ!

সে ম্যাচের ১২০ মিনিটে স্রেফ একবারই প্রতিপক্ষ লুনিনের বিপক্ষে বল জালে জড়িয়েছিল। তারপর তো চলে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ- পেনাল্টি শ্যুট আউট।

একটা সময় তিনি ছিলেন দলের তৃতীয় পছন্দ। ধারে খেলেছেন অন্যত্র, নিজের সুযোগের অপেক্ষা করেছেন। নিজেকে যেন প্রস্তুত করেছিলেন এমন একটি দিনের জন্যে। আর তেমনই এক মহাগুরুত্বপূর্ণ দিনে রিয়াল মাদ্রিদের জয়ের নায়ক বনে গেলেন আন্দ্রি লুনিন।

টাই-ব্রেকারে গড়িয়েছিল ম্যাচ। সে ম্যাচের ১২০ মিনিটে স্রেফ একবারই প্রতিপক্ষ লুনিনের বিপক্ষে বল জালে জড়িয়েছিল। তারপর তো চলে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ- পেনাল্টি শ্যুট আউট। সেখানে ম্যানচেস্টার সিটির দু’টো শট আটকে দেন লুনিন।

তবে সেই শট ঠেকিয়ে দেওয়ার পেছনে রয়েছে পূর্ব পরিকল্পনা আর অভিজ্ঞতার মিশ্রণ। লুনিন মাথা ঠান্ডা রেখে স্রেফ ময়দানে সেই পরিকল্পনা আর অভিজ্ঞতার বাস্তবায়ন করেছেন। সাহসিকতা দেখিয়েছেন। সাধারণত প্রকৃতি সাহসীদের সহয়তা করতে পছন্দ করে। লুনিনের ক্ষেত্রেও ঘটেছে তাই।

ম্যানচেস্টার সিটির অন্যতম সেরা খেলোয়াড় বার্নার্ডো সিলভা শট চালান একেবারে মাঝ বরাবর। জায়গা দাঁড়িয়ে থেকে সেই শট রুখে দেন লুনিন। দেখতে একেবারে সাদামাটা মনে হলেও, সে যাত্রায় লুনিনকে নিতে হয়েছিল এক ক্যালকুলেটিভ ঝুঁকি।

রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের জন্যে শতভাগ প্রস্তুতিই সেরে রেখেছিল। এমনকি টাই-ব্রেকারের জন্যেও নিজেদেরকে তৈরি রেখেছিলেন দলের খেলোয়াড়রা। বিশেষ করে গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিন। আর সে প্রস্তুতিতে তিনজন খেলোয়াড়কে নিয়ে ছিল সংশয়। যারা কি-না সোজা শট চালিয়ে দিতে পারেন টাই-ব্রেকারে।

ম্যাচ পরবর্তী সময়ে লুনিন এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা গোলকিপিং কোচের তত্ত্বাবধানে টাই-ব্রেকারের জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম এবং সেখানে তিনজন খেলোয়াড়কে নিয়ে ছিল সংশয় যে তাদের বেলায় মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকব কি-না।’ সংশয় ছিল, তাইতো ঠিক কার বেলায় সোজা দাঁড়িয়ে থাকবেন লুনিন সেটার একটা ঝুকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেই হতো।

সেক্ষেত্রে খুব সম্ভবত সাহায্য করেছিলেন মাদ্রিদের আরেক গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগা। ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে এর আগেও টাই-ব্রেকার মোকাবেলার করা অভিজ্ঞতা ছিল তার। সে অভিজ্ঞতা থেকেই সম্ভবত বার্নার্ডো সিলভার বেলায় মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকার পরামর্শ দেন তিনি লুনিনকে। কেননা টাই-ব্রেকার শুরু হওয়ার আগে লুনিন ও কেপা দুইজনকে নিজেদের মধ্যে বেশ গভীর আলাপ করতেই দেখা যায়।

সিলভার বেলায় মাঝে দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়ে লুনিন বলেন, ‘আমাকে যেকোন একটা কিকে ঝুকি নিতেই হতো। আমরা একটি শট বেছে নিলাম এবং সৌভাগ্যবশত সে সিদ্ধান্তটা আমাদের পক্ষেই এসেছে।’ তাছাড়া মাতেও কোভাচিচের বেলায় অ্যান্তোনিয়ো রুডিগার লুনিনকে সহয়তা করেন।

ইংলিশ ক্লাব চেলসিতে একসাথেই খেলেছিলেন কোভাচিচ ও রুডিগার। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই লুনিনকে তার ডান দিকে লাফ দেওয়ার পরামর্শ দেন রুডিগার। সে শট রুখে দিয়ে লুনিন রুডিগারের জন্যেই যেন কাজটা সহজ করে দেন। রিয়ালের পক্ষে পঞ্চম শটে গোল করেন রুডিগার। মুহূর্তের মধ্যেই ম্যানচেস্টারের অভেদ্য দূর্গে নেমে আসে বিষাদের কালো ছায়া।

এছাড়াও কেপা নাকি শেষ অবধি রিয়ালের পেনাল্টি শ্যুটারদের ক্রম সাজাতে সহয়তা করেছিলেন। কার্লো আনচেলত্তির সহকারী ডেভিড আনচেলত্তি তেমনটিই জানিয়েছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই অসাধ্য সাধন করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। লুনিন স্রেফ মাথা ঠান্ডা রেখে সবার পরামর্শ আর দিকনির্দেশনার বাস্তবায়ন করেছেন। সেটাও তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। এমন স্নায়ুচাপের ম্যাচ যে এর আগে খেলেননি আন্দ্রি লুনিন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...