আর নয় ‘ভিক্ষানীতি’

একসময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, কার্টলি অ্যামব্রোস এর মত কত শত কিংবদন্তি তৈরি হয়েছে এই ক্যারিবীয়ান দ্বীপপুঞ্জে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম চ্যাম্পিয়নও উইন্ডিজরা। পরের আসরেও ধরে রেখেছিল শিরোপা।

১৯৮৩ সালে কপিল দেবের ভারত বাঁধা না হয়ে দাঁড়ালে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হতে পারতো তারা। কিন্তু এখন এসব শুধুই গল্প। সময়ের আবর্তনে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খর্বশক্তির এক দল। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের র‍্যাংকিংয়েও তারা পিছনের সারির সদস্য।  

অবশ্য যোগ্য খেলোয়াড়ের অভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন অবস্থা সেটা মোটেও বলা যাবে না। বর্তমান সময়ে বিশ্ব মাতানো আন্দ্রে রাসেল, কাইরন পোলার্ড, ডোয়াইন ব্রাভো সবাই তো এই দেশেরই সন্তান। কিন্তু বড্ড দুর্ভাগা, ক্যারিবীয় দ্বীপের সেরা সন্তানেরা দেশকে আপন করে নিতে পারেনি। 

মেরুন রঙের জার্সি গায়ে জড়িয়ে দেশের পতাকার প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের রঙিন দুনিয়া তাদের হয়তো বেশিই প্রিয়। নিজ দেশের ক্রিকেটারদের এমন ভ্রাম্যমাণতা নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন উইন্ডিজ দলের কোচ ফিল সিমন্স। 

ইএসপিএনক্রিকইনফোর সাথে এক সাক্ষাৎকারে ফিল সিমন্স বলেন, ‘আমার কি করবো? আমি কি জাতীয় দলে খেলার জন্য তাদের কাছে বারবার ভিক্ষা চাইবো?’ আমার মনে হয় না আমার সেটা করা উচিত।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক এই ক্রিকেটার নিজের হতাশা প্রকাশ করেছেন এভাবে। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অথচ এখন পর্যন্ত নির্বাচকরা সেরা স্কোয়াড তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছেন। অধিকাংশ সেরা খেলোয়াড়রা ভিনদেশি টি-টোয়েন্টি লিগে ব্যস্ত, কেউ আবার ইনজুরিতে পড়ে খেলার বাইরে।  

ফিল সিমন্স বলেন, ‘এটা কষ্টদায়ক। এমন পরিস্থিতি মেনে নেয়ার মত না ৷ কিন্তু আমার করার কিছু আছে? আমি মনে করি না, আমি তাদের কাছে দেশের হয়ে খেলার জন্য হাতজোড় করবো। আমি মনে করি কেউ যদি দেশের জার্সি গায়ে জড়াতে চায়, সে নিজেই সবসময় প্রস্তুত হয়ে থাকবে।’

সাবেক ক্যারিবীয় ক্রিকেটার আরো যোগ করেন, ‘সময় অনেক বদলে গিয়েছে। এখন অন্য অনেক স্থানে গিয়ে বেশি টাকায় ক্রিকেট খেলা যায়। এর মাঝে কেউ যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিনিধিত্ব করতে চায় তাহলে সে করতে পারে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলে অনুপস্থিতির তালিকা অনেক বড়। আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন এখন দ্য হ্যান্ড্রেড টুর্নামেন্টে মেতে আছেন। তাই চাইলেই তাদের চলমান সিরিজে দলে ভেড়ানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে রোস্টন চেজ, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, শেলডন কটরেল প্রত্যেকে চোটের কারণে মাঠের বাইরে। আবার এভিন লুইস আর ওশেন থমাস এখানো পুরোপুরি ফিট নয়।

ভঙ্গুর দল নিয়ে ভারতের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে উইন্ডিজ। বর্তমানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে অংশ নিয়েছে ফিল সিমন্সের শিষ্যরা। কিউইদের সাথে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ বিশ্বকাপ আগে খেলোয়াড়দের বাজিয়ে দেখার সবচেয়ে বড় সুযোগ ছিল। অথচ সেরা স্কোয়াডের অনুপস্থিত। 

এই ব্যাপারে উইন্ডিজ দলের নির্বাচক ডেসমন্ড হেইন্স বলেন, ‘তারা অনুপস্থিত কারন তারা নিজেদের উপস্থিত করতে পারেনি। আমি প্রত্যেককে জাতীয় দলে খেলতে দেখতে পছন্দ করি। আমি চাইবো তারা সবাই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখুক। কিন্তু আমরা দেখছি তারা বিশ্বজুড়ে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে বেড়াচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই অন্যদের নিয়ে দল সাজাতে হয়।’

আগামী অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দুই বারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে বড় শক্তি এই ফরম্যাট। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা নিশ্চিত করতে পারেনি কাদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়া উড়াল দিতে পারবে।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link