আ ‘বোল্ট’ ফ্রম দ্য ব্লু

আগাছার মতো টি-টোয়েন্টি লিগ বৃদ্ধির ব্যাপারে গতমাসে বার্মিংহামে আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তেমন কোন নিয়ম নীতি প্রবর্তন করা হয়নি এই বিষয়ে।

নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার ট্রেন্ট বোল্ট হঠাৎ করেই সবাইকে চমকে দিয়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের (এনজেডসি) কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে অব্যহতি চেয়েছেন। এবং বোর্ডের তরফ থেকে সেই আবদারটা মেনেও নেয়া হয়েছে। বোল্ট তাঁর এমন সিদ্ধান্তের জন্য পরিবারকে সময় দেয়ার ইচ্ছাকে কারণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

যদিও, এনজেডসির ধারণা বিভিন্ন ক্রিকেট লিগে খেলার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বোল্ট। নিউজিল্যান্ডের জার্সিতে প্রায় বারো বছর ধরে খেলে যাওয়া ৩৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছে পুরো বিশ্ব। 

যদিও বোর্ডের সাথে চুক্তিতে না থাকার মানেই এই নয় যে আর কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন না তিনি। তবে অবশ্যই ক্রিকেট বোর্ড আন্তর্জাতিক খেলাতে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের আগে প্রাধান্য দেয়। তাই আশঙ্কা জাগছে যে বোল্টকে কালেভদ্রে আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেখা যাবে সামনে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড দলের অন্যতম সদস্য এবং তিনটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ রানার্সআপ হওয়া দলটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন বোল্ট।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে এখন অবধি ট্রেন্ট বোল্ট ৭৮ টি টেস্ট, ৯৩ টি ওয়ানডে ও ৪৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। ক্রিকেটের সব সংস্করণ মিলিয়ে এই ফাস্ট বোলার নিয়েছেন ৫৪৮ উইকেট। আইসিসির ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর অবস্থানে ছিলেন বোল্ট।

যদিও অনেক ক্রিকেটবোদ্ধার ধারনা করোনা পরবর্তীকালীন সময়ে খেলার অতিরিক্ত চাপ বোল্টের মতো খেলোয়াড়দের ব্রেকিং পয়েন্টে ঠেলে দিয়েছে। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বেন স্টোকস গত মাসে ৫০-ওভারের ফরম্যাট হতে অবসর নিয়েছেন।

তিনিও অবসরের কারণ হিসেবে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে অস্থির কাজের চাপকে দেখিয়েছেন। আবার ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার কুইন্টন ডি কক গত বছর টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছিলেন। বোল্টের এমন সিদ্বান্তকে অনেকেই ক্রিকেটের নতুন বিপ্লবের অংশ হিসেবে নিচ্ছেন।

তবে তাঁরা তিনজনই টিটোয়েন্টি ‘ঘরোয়া লিগ’ এর প্রবর্তক ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলার জন্য সুযোগ পেয়েছিলেন। আর ধীরে ধীরে এমন লাভজনক লিগগুলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে টুইটারে বলেন, ‘কুইন্টন ডি কক এবং বিশেষত ট্রেন্ট বোল্ট যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা স্বল্প ঘরানার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ভবিষ্যতের দিকে নির্দেশ করে। এবং গিগ অর্থনীতির অংশ হতে পেরে খেলোয়াড়রা আরও বেশি খুশি। তরুণদের পক্ষে একসাথে পরিবারকে সময় দেয়া, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং টিটোয়েন্টি লিগ সব সামলানো সহজ নয়।’

ভোগলে বলেন যেলোভ এবং সুবিধাবাদেরজন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকে অগ্রাধিকার দেওয়া খেলোয়াড়দের সমালোচনা করাটা অন্যায় হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই অর্থ এবং সুবিধার জন্য চাকরি পরিবর্তন করি, তাই না?’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার টি- টোয়েন্টি ফরম্যাটে ফ্রিলান্সারে পরিণত হয়েছেন। কারণ ফ্রাঞ্চাইজি লিগ গুলোতে আয় বেশি এবং দীর্ঘ সময়ের বাধ্যবাধকটা নেই। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠীতব্য টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ফিল সিমন্সকে হতাশ করেছে তাঁদের মূল খেলোয়াড়দের প্রাপ্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়টি। সিমন্স বিরক্ত হয়ে বলেন নিজ দেশের হয়ে খেলার জন্য ক্রিকেটারদের অনুরোধ করাটা উচিত নয়।

ক্রিকইনফোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী ডেভিড হোয়াইট বোল্টের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘তাঁরা টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের হয়ে পারফর্ম করাটা তো দারুণ গুরুত্বপুর্ণ। কারণ একজন সফল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হলেই তবেই আপনি বড় বড় ফ্রাঞ্জাইজি লিগ থেকে আমন্ত্রণ পাবেন।’

আগাছার মতো টি- টোয়েন্টি লিগ বৃদ্ধির ব্যাপারে গতমাসে বার্মিংহামে আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তেমন কোন নিয়ম নীতি প্রবর্তন করা হয়নি এই বিষয়ে। আইসিসির গভর্নিং বডি বরং বোর্ডের উপর দায়িত্ব দিয়েছে ঘরোয়া লিগ ও দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেটের মধ্যে খেলোয়াড়দের কাজের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব নেয়ার জন্য।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...