রাজার মুকুট, রাজার সাজ, অন্য কেউ পড়বে আজ

বাস্তুশাস্ত্র বলছে, ঘরে যেখানে সেখামে আয়না লাগানো যায় না; কোনও ঘরের চারদিকে আয়না থাকলে ঘরে থাকা মানুষদের ওপর বাজে প্রভাব পড়ে। ঘরে বসে থাকা ব্যক্তির মনে হয় সবসময় তাঁকে দেখছে কেউ, নজর রাখা হচ্ছে। চতুর্দিকে আয়নার প্রভাব যে মানুষদের কাজের ওপরও পড়বে, তা ভীষণ স্বাভাবিক। ব্যতিক্রম নয় পেশাদার ক্রিকেটাররাও।

টেকনিক, প্র‍্যাক্টিস, ধারাবাহিকতা ছাড়াও এই খেলায় জিততে গেলে মানসিকভাবে স্থির থাকতে হয়, তরতাজা থাকতে হয়। আর ঠিক এইখানেই কলকাতাকে লাইনচ্যুত করতে চেয়েছিল চেন্নাই। চিপকের পিচে প্রথম বল খেলার আগেই দুর্বল করে দিতে চেয়েছিল মানসিক দিক দিয়ে। অতিথি ড্রেসিংরুমে চারিদিকে আয়না লাগানো ছিল।

কথা হচ্ছে ২০১২ সালের আইপিএল ফাইনালের। আইপিএলের ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী দল তখন চেন্নাইয়ের। সুরেশ রায়না, রবীন্দ্র জাদেজা, রবি অশ্বিন, অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি, প্রত্যেকেই বিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলে দিচ্ছেন বাইশ গজে। অন্যদিকে কলকাতা প্রথমবার ফাইনালে উঠেছে। টুর্নামেন্ট জুড়ে গম্ভীর, কালিস, ইউসুফ, নারাইনরা অসাধারণ ক্রিকেট খেললেও ফাইনালে কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই ধরছে না তাঁদের।

তার ওপরে এই ড্রেসিংরুমে চতুর্দিকে আয়না। চিপকে এমনিই ১০ জন দর্শকও বিপক্ষ দলকে সমর্থন করে না, তার ওপরে এই প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে কীভাবে জয় আসবে? এতকিছুর পরও ট্রফি জিতেছিল কলকাতা। সবাইকে ছাপিয়ে ফাইনালের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন কোনও এক অখ্যাত মনবিন্দর বিসলা। হাসি চওড়া হয়েছিল কিং খান, গৌতম গম্ভীরদের। সম্ভব, অসম্ভবের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছিল ওই দল।

তারপর গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র দিয়ে কোটি কোটি কিউসেক জল গড়িয়েছে। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দিয়েছে আইপিএল। মাঝে কলকাতা আরও একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বেটিং কাণ্ডে জড়িয়ে দু’বছরের জন্য ব্যান হয়েছে চেন্নাই, দু’বার চ্যাম্পিয়নও হয়েছে অবশ্য। এই গতবছরই তো, ফাইনালে দেখা হয়েছিল দু-দলের। একপেশে ম্যাচে চেন্নাই বুঝিয়ে দিয়েছিল, কেন এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল ওরা।

এবছর আর সেই আলেকজান্ডারও নেই, পুরুও নেই৷ গম্ভীর কলকাতার দায়িত্ব ছেড়েছেন ২০১৭র পর। যতই একুশে ফিনিশ থেকে ফিনিক্স হয়ে ফাইনাল খেলুক, গম্ভীর পরবর্তী জমানার পর থেকে বড্ড নির্বিষ দেখিয়েছে দলটাকে। ওদিকে ধোনি বুড়ো হয়েছেন, রিফ্লেক্স কমেছে, ব্যাট হাতে মন্থর ইনিংস খেলেছেন। তবে এতকিছুর পরও জয়যাত্রা থামেনি চেন্নাইয়ের।

কথা ছিল, এবছর শেষবারের মতো চেন্নাইয়ের নেতৃত্ব দেবেন ধোনি। সমীকরণ বদলে দিলেন ধোনি নিজেই। প্রথম ম্যাচের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে জাদেজার হাতে তুলে দিলেন ক্যাপ্টেন্সি। শ্রেয়সের অধিনায়কত্বে স্বপ্ন বুনছে কলকাতাও। নিলামে সাড়ে বারো কোটি দিয়ে তাঁকে কিনেছে নাইট শিবির৷

আজ প্রথম ম্যাচে টসের সময় একসঙ্গে হেঁটে এলেন দুই নতুন অধিনায়ক। সবটা জানা সত্ত্বেও চোখ খুঁজল ধোনিকে। তিনি আজ শুধুই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। আর অধিনায়ক নন! রাজার মুকুট, রাজার সাজ, অন্য কেউ পড়বে আজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link