ফ্রাঞ্চাইজি লিগের ইতিহাস বিবেচনা করলে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ(বিপিএল) বেশ পুরনো লিগই বটে। কিন্তু অন্যান্য দেশের লিগ যতটা এগিয়েছে ঠিক ততটাই যেন পিছিয়েছে বিপিএল। প্রতিবার এ টুর্নামেন্টের সময়কাল মানেই সরস বিনোদনের প্রাচুর্যতা আর চরম অব্যবস্থাপনা, অপেশাদারিত্বের অভাবনীয় সব ঘটনার সমাহার।
সেই ধারা বজায় রেখে এবারের বিপিএল শুরুর আগেও বিসিবি থেকে তেমন একটা পরিবর্তনের আভাস মেলেনি। উল্টো সীমাবদ্ধতার গল্প বলে বিপিএল প্রসঙ্গে সাকিবের ‘যা তা’ বলা মন্তব্যের বিপরীতে স্রেফ একটা উত্তর দিয়েই ক্ষান্ত থেকেছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।
বিপিএল শুরুর আগের বিতর্ক ছিল এই যুগে এসেও ডিআরএসের প্রয়োগ মাঠে না থাকা। সেই ‘না’ থাকাকে পুঁজি করেই একদিন আগে শুরু হয়েছিল বিপিএলের এবারের আসর। প্রথম দিন বিতর্কমুক্ত কাটলেও দ্বিতীয় দিনে এসে যেন সেই চিরায়ত ধরটাই আবার আঁকড়ে ধরল। দিনের প্রথম ম্যাচে সৌম্য আউট বিভ্রাট নিয়ে বিতর্ক। আর দ্বিতীয় ম্যাচের এসে মিলল ভিন্ন এক দৃশ্য। সেটাকে ঠিক বিতর্কের কাতারে ফেলা যায় না।
বরিশাল-সিলেটের লড়াইয়ে টস করতে এলেন মেহেদি হাসান মিরাজ আর মুশফিকুর রহিম। কিন্তু দুজনের কেউই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তাদের দলের অধিনায়ক নন। ফরচুন বরিশাল টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানিয়েছিল সাকিব আল হাসান এবারে আসরে বরিশালের অধিনায়ক হতে যাচ্ছেন।
যদিও ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে ছিলেন না তিনি। তাঁর জায়গায় এসেছিলেন মিরাজ। তবে সাকিব কেন অধিনায়কত্ব করলেন না কিংবা মিরাজ কিভাবে অধিনায়ক হলেন সে প্রশ্নে ফরচুন বরিশালের কর্তারা বেশ অবাক করা এক উত্তরই দিয়েছেন।
তারা জানিয়েছে, তাদের নির্ধারিত কোন অধিনায়ক থাকছে না। ম্যাচ বাই ম্যাচ তারা ঠিক করবে কে পরবে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড। অর্থাৎ এ টুর্নামেন্টে বরিশালের নির্দিষ্ট করে কোনো অধিনায়ক থাকছেন না। এখন পরবর্তীতে সেই চিত্র বদলাবে কিনা তার জন্য তাকিয়ে থাকতে পরের ম্যাচগুলোতে।
তবে, যেখানে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলেরই অধিনায়ক সাকিব, সেখানে ঘরোয়া লিগের একটি দলের অধিনায়কত্ব নিয়ে দ্বিধান্বিত থাকাটা বেশ প্রশ্ন জাগানিয়া। তার উপর এই সাকিবের অধিনায়কত্বেই ফাইনালে উঠেছিল ফরচুন বরিশাল।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের ক্ষেত্রে ঘটনাটা আরো বিস্ময়ের যোগান দেয়। আগের ম্যাচেই অধিনায়কত্ব করেছিলেন মাশরাফি। কিন্তু এ ম্যাচে টস করতে আসেন মুশফিকুর রহিম। বিস্ময়ের তীব্রতা আরো বাড়ে যখন দেখা যায়, টিমের একাদশে আবার অধিনায়ক মাশরাফি। তাহলে ঠিক কোন কারণে টসের সময় উপস্থিত ছিলেন না মাশরাফি?
গুঞ্জন আছে, সংসদ সদস্য হিসেবে দলীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন মাশরাফি। সেখান থেকে ম্যাচের আগেই ফিরেছিলেন। তবে টসের আগে নিজেকে ঠিক প্রস্তুত করে উঠতে পারেননি। তাই মাশরাফির পরিবর্তে টসে গিয়েছিলেন মুশফিক।
একই ম্যাচে, দুই দলের দুই অধিনায়কের উপস্থিতির আড়ালে এমন ঘটনা ক্রিকেট ইতিহাসে কখনও ঘটেছে কিনা তা বেশ সন্দেহের উদ্রেক তৈরি করে। পাড়ার ক্রিকেটে এমন সব দৃশ্যের দেখা মেলে প্রায়শই। কিন্তু বিপিএল তো আর পাড়ার ক্রিকেট না।
তবে, বছরের পর বছর, বিপিএল যেমন সরস বিনোদনের সমাহারে পূর্ণ হয়েছে তাতে এমন আজগুবি ঘটনাও যেন অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনার বলয়ে ঢুকে গেছে। সেখান থেকে উত্তরণের পথ রয়েছে, কিন্তু প্রচেষ্টা নেই- এই আপ্ত বাণীই প্রতি আসরের সালতামামির প্রধান যোগান হয়ে থাকবে।