প্রতিটি খেলাতেই যেকোনো দলের অধিনায়কের উপর বর্তায় আলাদা দায়িত্ব। নিজে সামনে থেকে পারফর্ম করার পাশাপাশি দলের সবাইকে একসুতোয় গেঁথে রাখা, ট্যাকটিক্যাল দিকগুলো সামলানো, সবাইকে উজ্জীবিত রাখার কাজটা করতে হয় অধিনায়ককেই। এজন্য সব দেশের বোর্ডই তুলনামূলক অভিজ্ঞ কাউকে অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করতে।
তবে অনেক সৌভাগ্যবান নিজের অভিষেক ম্যাচেই পেয়ে যান দেশকে নেতৃত্ব দেবার সুযোগ। আসুন দেখে নেয়া যাক পাঁচজন অধিনায়ককে যারা কিনা অভিষেকেই নেমেছিলেন দলের হয়ে টস করতে।
- লি কেনেথ জার্মন (নিউজিল্যান্ড)
সাবেক কিউই অধিনায়ক লি কেনেথ জার্মনের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে মাত্র ১৯ বছর বয়সে। নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাঁকে। ক্যান্টাবুরিকে টানা তিনবার ঘরোয়া ক্রিকেটের শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি মোট পাঁচবার ঘরোয়া একদিনের টুর্নামেন্ট জেতান।
তাঁর অধিনায়ক হিসেবে সুখ্যাতি তাকে সুযোগ এনে দেয় জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করবার। ১৯৯৫ সালে ভারতের বিপক্ষে একদিনের ম্যাচে অভিষেক ঘটে কেনেথের এবং নিজের প্রথম ম্যাচেই জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করবার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন তিনি।
যদিও সাবেক এই উইকেটেইরক্ষক ব্যাটসম্যান খুব বেশিদিন জাতীয় দলে খেলেননি। মাত্র ১২ টেস্ট এবং ৩৭ ওডিয়াইতেই শেষ হয়ে যায় তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তবে আজকের ভয়ডরহীন নিউজিল্যান্ডের পেছনে কেনেথের অবদান অনস্বীকার্য।
- ডেভিড হটন (জিম্বাবুয়ে)
জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার ডেভিড হটন অভিষেকেই গড়েছিলেন অনন্য এক রেকর্ড। কেবল অধিনায়কত্বই নয় পাশাপাশি নিজের অভিষেক ম্যাচেই হাঁকান দারুণ এক সেঞ্চুরি। ১৯৯২ সালে ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ছয়ে নেমে ১২১ রানের অধিনায়কোচিত এক ইনিংস খেলেন তিনি।
পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে একবারও শূন্য রানে আউট হননি এই ব্যাটসম্যান, একবারো ডাক মারা ব্যতীত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও তার দখলেই। জিম্বাবুয়ের সোনালি সময়ের অন্যতম সেরা এই তারকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়মিত খেলেছেন প্রায় দেড়যুগ। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জিম্বাবুয়ের হয়ে ২২ টেস্ট এবং ৬৩ ওডিয়াই খেলেছেন সংগ্রহ করেছেন তিন হাজারের অধিক আন্তর্জাতিক রান।
- জর্জ বেইলি (অস্ট্রেলিয়া)
যুগে যুগে অস্ট্রেলিয়া উপহার দিয়েছে কালজয়ী সব অধিনায়ককে। অ্যালান বোর্ডার, স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্করা ক্রিকেটবিশ্বকে দেখিয়েছেন একজন অধিনায়ক কতোটা সাহসী এবং কুশলী হতে পারেন। তাদের উত্তরসূরি জর্জ বেইলির আগমনও দারুণ আলোচনা ছড়িয়েই।
তাসমানিয়ার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ সময় কাটানোর পর নির্বাচকরা তাকে সুযোগ দেন জাতীয় দলে খেলবার। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজের টি টোয়েন্টি অভিষেকের আগেই দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন তিনি। এমনকি মাইকেল ক্লার্কের অনুপস্থিতিতে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৫ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেও দলের নেতৃত্বভার বর্তায় তার কাঁধে। সে ম্যাচে ৫৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন তিনি।
যদিও বেইলি এবং জাতীয় দলে তার মধুচন্দ্রিমা খুব বেশিদিন টেকেনি। ফর্মহীনতার কারণে দল থেকে বাদ পড়ার পর আর দলে ফিরতে পারেননি তিনি। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক হিসেবে নিযুক্ত আছেন এই সাবেক অধিনায়ক।
- টনি লুইস (ইংল্যান্ড)
তৎকালীন ইংরেজ অধিনায়ক রে ইলিংওর্থ বিশ্রামজনিত কারণে ১৯৭২-৭৩ মৌসুমের ভারত,পাকিস্থান, শ্রীলংকা সফরের জন্য নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিলে নতুন অধিনায়ক নির্বাচিত হন টনি লুইস। অথচ জাতীয় দলের হয়ে এর আগে কোনো ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না তার।
তবুও, নিজের অভিষেক ম্যাচেই অপরাজিত ৭০ রানের ইনিংস খেলেই দলকে জয় এনে দেন তিনি। তাঁর অধীনে ভারতের বিপক্ষে এক ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি পাঁচটি ম্যাচে ড্র করে ইংল্যান্ড। যদিও কানপুরে এক টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ১২৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন তিনি। তবে রে ইলিংওর্থ দলে ফিরে আসলে টনি লুইস সহ-অধিনায়ক হিসেবে দলে বহাল থাকেন।
- নাইজেল হাওয়ার্ড (ইংল্যান্ড)
ল্যাংকারশায়ারের হয়ে টনি হাওয়ার্ডের অভিষেক হয় ১৯৪৬ মৌসুমে। তাদের হয়ে দারুণ খেলার সুবাদে জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। ১৯৫১ সালে ইংল্যান্ডের ভারত এবং পাকিস্থান সফরের সময় হাওয়ার্ডকে জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
যদিও ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান সেই সফরে মাত্র চারটি ম্যাচেই মাঠে নামতে পারেন অসুস্থতার জন্য। সেই সফরে বাজে ফলাফলের জন্য সিরিজ শেষেই অধিনায়কত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয় তাকে। এমনকি এরপরে আর কখনো জাতীয় দলেও কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি।