গেইলের প্রথম, টি-টোয়েন্টির প্রথম

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অবিসংবাদিত রাজা তিনি। তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের সেরা বললেও ভুল হয় না। ২২ সেঞ্চুরিতে ১৪৫৬২ রান সেটিই প্রমাণ করে।  সাথে ১০৫৬ টা ছক্কা বুঝিয়ে দেয় তিনি এই ফরম্যাটে কতটা বিধ্বংসী। নামটা বোধহয় না বললেও চলে। তিনি যে ক্রিস গেইল, সেটা তো তাঁর ক্যারিয়ারের পাশে থাকা বড় সংখ্যাগুলোর দিকে চোখ মেললেই বোঝা যায়। 

চার্লস ব্যানারম্যান, ডেনিস অ্যামিস আর ক্রিস গেইল। এই তিনজনকে একসাথে রাখার কারণ কী? এদের যোগসূত্রই বা কি? ইতিহাসের ‘প্রথম’ যে কোনো কিছুকেই তো ঐতিহাসিক বলা হয়। এই তিনজনও তেমন ঐতিহাসিক কিছু করেছেন।

আর ভজকট না পাঁকিয়ে বরং বলেই দিই। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলন চার্লস ব্যানারম্যান। ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন ডেনিস এমিস। আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন ক্রিস গেইল। তিনি ফরম্যাটে তিন ‘প্রথম’ সেঞ্চুরিয়ানের সূত্র ধরেই এদের যোগসূত্র।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ততদিনে ১৯ ম্যাচ গড়িয়েছে। ঠিক তার পরের ম্যাচটাই হয়ে যায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। জোহানেসবার্গে মুখোমুখি হলো ওয়েট ইন্ডিজ আর স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথের বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত।

প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। তাই আমেজটাও অন্যরকম। ম্যাচ শুরুর আগে কমেন্ট্রিও যেন আর্কাইভে ধরে রাখার মতো – ‘ক্রিস গেইল এন্ড ডোয়াইন স্মিথ আর টু ওপেনিং ব্যাটসম্যান ফর ওয়েস্ট ইন্ডিজ হোয়াইল শন পোলক টেকস দ্য নিউ বল। দ্য টিমস আর ওয়াকিং অন টু দ্য ফিল্ড।’

শন পোলক প্রথম ওভার বল করার জন্য বোলিং প্রান্তে গেলেন। আর ব্যাটিং প্রান্তে ক্রিস গেইল। বলটা গুড লেন্থেই হলো। কিন্তু স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটারের নাম যে ক্রিস গেইল। পয়েন্টের দিকে ঠেলে দিলে প্রথম বলেই তুলে নিলেন চার। আর সেখান থেকেই শুরু হলো ক্রিস গেইল ঝড়। শন পোলক, মাখায়া এনটিনি থেকে শুরু করে মর্নে মরকেল কাওকেই ছাড় দিলেন না তিনি। ২৬ বলেই তুলে নিলে হাফ সেঞ্চুরি। 

হাফসেঞ্চুরি পূরণ করার পর আরো বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠেন ক্রিস গেইল। একের পর বাউন্ডারিতে ব্যক্তিগত সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এরপর নিজের ৫০ তম বলে স্ট্রেইট ড্রাইভে ২ রান নিয়ে ইতিহাসের প্রথম ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে স্পর্শ করেন ক্রিস গেইল।

সেঞ্চুরির পূরণ করার পর সে ইনিংসটি থেমেছিল ১১৭ রানে। ১১৭ রানের সে ইনিংসে চারের চেয়ে তাঁর ছক্কার মারই বেশি ছিল। সেদিন তিনি একাই মেরেছিলেন ১০ টি ছক্কা। যেখানে চার মেরেছিলেন ৭ টি। 

ডেনিস এমিসের সাথে ক্রিস গেইলের মিল আরেকটি জায়গায়। ডেনিস এমিস ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আর ওয়ানডে ক্রিকেট – দুটিরই প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন। একইভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি করায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট- দুটিতেই প্রথম সেঞ্চুরিয়ানের কীর্তি গড়েন ক্রিস গেইল।

ক্রিস গেইলের পাশে অবশ্য আরেকটি ‘প্রথম’ এর রেকর্ড রয়েছে। তিনি ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্রিস গেইলের সে সেঞ্চুরির বয়স আজ ১৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে তিনি এ সেঞ্চুরিটি করেছিলেন। 

ক্রিস গেইল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আরো গোটা বিশেক সেঞ্চুরি করেছেন। এর মধ্যে আইপিএলে ১৭৫ রানের ইনিংসও তাঁর রয়েছে। কিন্তু তারপরও জোহানেসবার্গে তাঁর খেলা সেই ইনিংসটির মাহাত্ম্য অনেক। কারণ ঐ সেঞ্চুরিতেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট প্রথম শতকের দেখা পেয়েছিল।

যদিও ১১৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেও সেদিন তাকে পরাজিত দলের সদস্য হিসেবেই থাকতে হয়েছিল। তারপরও প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিয়ানের কৃতিত্বে তিনিই ছিলেন সে ম্যাচের নায়ক।  

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link