ক্লাইভ রাইস, বঞ্চিত এক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার

আশির দশকের সেরা অলরাউন্ডার কে? এই প্রশ্নের উত্তরে অবধারিতভাবে চলে আসে চারটা নাম। ইমরান, কপিল, বোথাম আর হ্যাডলি। ক্লাইভ রাইসের নামটা আড়ালেই থেকে যায়৷ হ্যাঁ, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাইভ রাইস! কখনো টেস্ট না খেলা সেরা ক্রিকেটার হিসেবে যাকে একবাক্যে মেনে নেয় সবাই।

আশির দশকের সেরা অলরাউন্ডার কে? এই প্রশ্নের উত্তরে অবধারিতভাবে চলে আসে চারটা নাম। ইমরান, কপিল, বোথাম আর হ্যাডলি। ক্লাইভ রাইসের নামটা আড়ালেই থেকে যায়৷ হ্যাঁ, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাইভ রাইস! কখনো টেস্ট না খেলা সেরা ক্রিকেটার হিসেবে যাকে একবাক্যে মেনে নেয় সবাই। প্রতিভা কিংবা দক্ষতায় ফ্যাব-ফোরের চাইতে কোন অংশে কম ছিলেন না তিনি।

তা ঠিক কতটা ভালো অলরাউন্ডার ছিলেন ক্লাইভ রাইস? ওয়েল, যেহেতু টেস্ট খেলার সুযোগ হয় নি; তাই ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের পরিসংখ্যানটাই বলি ৷ ৪০.৯৫ গড়ে ২৬,৩৩১ রান এবং ২২.৪৯ গড়ে ৯৩০ উইকেট! ব্যাট হাতে ৪৮টা সেঞ্চুরি আর বল হাতে ২৩টা ফাইভ-ফার। এর সাথে যোগ করুন লিস্ট-এ ক্রিকেটে ১৩,৪৭৪ রান ও ৫১৭ উইকেট! দিস ইজ ক্লাইভ এডওয়ার্ড বাটলার রাইস ফর ইউ।

১৯৭৫ থেকে ১৯৮৭ — টানা ১৩টি ইংলিশ সামারের প্রতিটা সিজনেই হাজারের অধিক রান করেছেন ক্লাইভ রাইস৷ আই রিপিট প্রতিটা সিজনেই! ৪৪.২৯ গড়ে মোট করেছেন ১৭,০৫৩ রান! লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলতেন বলে সেঞ্চুরি খুব বেশি নেই, তাও ৩৭টা। এর মধ্যে চার সিজনে ব্যাটিং গড় ছিল ৬০ এর কাছাকাছি বা ৬০ এর ওপরে!

আর বোলিংয়ের কথা কি বলব? ইনজুরির কারণে দুটো মৌসুম বলই হাতে নিতে পারেন নি। তবে বাকি সিজনগুলোতে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ‘প্রচুর’ উইকেট পেয়েছেন এ কথা বলা যাবে না, তবে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে গেছেন। প্রতি সিজনেই গড়ে অন্তত ৪০-৪৫টি করে উইকেট শিকার করেছেন রাইস৷ ২৩.৫৮ গড়ে সব মিলিয়ে নিয়েছেন ৪৭৬ উইকেট!

ক্লাইভ রাইসের নিউ বল পার্টনার ছিলেন রিচার্ড হ্যাডলি। দুই ‘কমরেড’ মিলে নটিংহ্যামশায়ারের ঘরের মাঠ ট্রেন্টব্রিজকে এক অভেদ্য দুর্গে পরিণত করেছিলেন৷ উইকেটে সামান্য ঘাস থাকলেই হল, হ্যাডলি-রাইস আতঙ্কে কাউন্টি দলগুলোর রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেত!

নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে টানা নয় সিজন ক্যাপ্টেন্সিও করেছেন রাইস৷ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতিয়েছেন দুইবার, ১৯৮১ ও ১৯৮৭ সালে।

১৯৭৮ সিজনটা রাইসের জন্য ছিল একেবারে সোনায়-সোহাগা। ব্যাট হাতে কাটানো ক্যারিয়ারের সেরা মৌসুমে তাঁর সংগ্রহ ছিল ৬৬.৮২ গড়ে ১৮৭১ রান; দুইটা ডাবল হান্ড্রেডসহ হাঁকিয়েছিলেন ৫টা সেঞ্চুরি। শুধু কি তাই? বল হাতে মাত্র ২০.৩৬ গড়ে নিয়েছিলেন ৪১ উইকেট।

মেলবোর্ন, ১৯৭৯। ক্যারি প্যাকার ওয়ার্ল্ড সিরিজে বিশ্ব একাদশের মুখোমুখি ক্লাইভ লয়েডের ‘সর্বজয়ী’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভিক্টোরিয়া পার্কের গতিময় বাউন্সি উইকেটে রবার্টস, গার্নার, ওয়েইন ড্যানিয়েলদের রুদ্রমূর্তির সামনে বিশ্ব একাদশের ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ১০২ রানে!

জবাব দিতে নেমে ইমরান আর রাইসের তোপে দিশেহারা উইন্ডিজ অলআউট হয় মাত্র ৬৭ রানে! ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েড, গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্সদের সবাই ছিলেন ব্যর্থ; এক কলিস কিং বাদে কেউ দুই অঙ্কই স্পর্শ করতে পারে নি! সেদিন যারা মাঠে উপস্থিত ছিলেন, তাদের বেশিরভাগের মতে দিনের ‘সেরা’ বোলার ছিলেন ক্লাইভ রাইস (৭.৩-৩-১৬-৩)।

ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলার পাশাপাশি ট্রান্সভালের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া লিগও মাতিয়েছেন রাইস। দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন; গ্রায়েম পোলক, জিমি কুক, সিলভেস্টার ক্লার্কদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটা দুর্দান্ত ইউনিট। ট্রান্সভালকে তিনটি ‘কুরি কাপ’ জেতানো ‘বাই বর্ন লিডার’ ক্লাইভ রাইসের অর্জন ৭৬৩২ রান ও ৩৬৪ উইকেট।

ক্লাইভ রাইসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা বলতে ছিল ক্যারি প্যাকার সিরিজ আর দেশের মাটিতে আয়োজিত ‘রেবেল’ ট্যুরগুলো। পরিসংখ্যান বলছে, এসব ম্যাচে ‘বোলার’ হিসেবেই বেশি সফল ছিলেন রাইস। কেননা ব্যাটিং গড় যেখানে ৩০, বোলিং গড় সেখানে ২৪।

নির্বাসন কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরল, রাইসের বয়স তখন ৪২। নিজের সেরা সময়টা অনেক আগেই পেছনে ফেলে এসেছেন। টেস্ট খেলার সৌভাগ্য হয় নি, তবে শেষ বয়সে এসে ওয়ানডে খেলেছেন। দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৯৯২ সালের ভারত সফরে। তিনটি ওয়ানডে খেলে তাঁর সংগ্রহ ২৬ রান ও দুটি উইকেট।

২০১৫ সালে জোহানেসবার্গের একটি হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ক্লাইভ রাইস। এর আগে বেশ কিছুদিন ধরে দুরারোগ্য ব্যাধি ব্রেইন টিউমারে ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর৷

শেষ করব একটি চমৎকার পরিসংখ্যান দিয়ে৷ লিস্ট-এ ক্রিকেটে ৫০০০ রান ও ৫০০ উইকেটের ‘ডাবল’ অর্জনকারী প্রথম অলরাউন্ডার হলেন ক্লাইভ রাইস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link