২০০৭ বিশ্বকাপে ভরাডুবি হয়েছে ভারতের, দেশের জনগণ তখন বিক্ষুব্ধ; শচীন টেন্ডুলকার, বীরেন্দর শেবাগের মত তারকারা নিজেদের বন্দি করে রেখেছিলেন হোটেল। সেই গুমোট পরিস্থিতির মাঝেই দুই তরুণ সতীর্থকে নিয়ে মুভি দেখতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন আরেক তারকা; আত্মবিশ্বাসের সাথে তাঁদের বলেছিলেন আমরা ঘুরে দাঁড়াবোই।
প্রচণ্ড মানসিক দৃঢ়তা সম্পন্ন সেদিনের সেই মানুষটা ভারতের হেড কোচ, রাহুল দ্রাবিড়। বিশ্বকাপ শেষে দুই বছর চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও তাঁর সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে বিসিসিআই। করবেই না বা কেন, কি দুর্দান্ত ভাবেই তিনি গুছিয়ে নিয়েছেন দলটা। ফাইনাল ছাড়া বাকি সব ম্যাচের ফলাফল সেটারই সাক্ষ্য দেয়।
দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বকালীন সময়ে কোচের সিদ্ধান্ত সব সময় চূড়ান্ত ছিল; সেজন্য সমালোচিত হতে হয়েছিল তাঁকে। নিজে কোচ হয়ে অবশ্য সেই কাজ করেননি তিনি, ক্রিকেটারদের সুযোগ দিয়েছেন নিজস্ব মতামত প্রদানের। তাই তো সাবেক কোচ প্যাডি উপটন বলেছেন, ‘রাহুল শিষ্যদের ওপর ছড়ি ঘোরানোর বদলে তাঁদের সাথে মিশে গিয়েছে, যা ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন কিছু।’
উপটন এরপর মনে করিয়ে দিয়েছেন আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা। তিনি বলেন, ‘দলের মধ্যে নিজেকে নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগেই। অথচ দেখুন, ১৮ মাসের মত সময় পেয়েই রাহুল কত কাজ করলো!’
এই ডান-হাতি অল্প সময়ে সফলতা পেয়েছেন এটা ভাবলে ভুল করবেন। তিনি আসলে পর্দার আড়ালে থেকেই নিজেকে সাফল্যের পথে পৌঁছে দিয়েছেন। অনেক বছর আগে সাবেক এই ব্যাটার একবার বলেছিলেন, ‘তুমি একটা চাইনিজ বাঁশ রোপণ করে পরিচর্যা করবে, দেখবে পাঁচ বছরেও এটি গজাবে না। হঠাৎ একদিন ছোট্ট একটা মাথা বেরুবে, এরপর ছয় মাসের মধ্যে নব্বই ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে যাবে’
দ্রাবিড় আসলে চাইনিজ বাঁশের মতই, উপরে ওঠার আগে ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নেন। এরপর হুট করেই আরোহণ করেন সাফল্যের শিখরে। নিজের ফেস-ভ্যালু ব্যবহার করে চাইলে সরাসরি ভারতের কোচ হতে পারতেন তিনি; কিন্তু সেটা না করে এনসিএ, যুব দল, এ দলের কোচিং করিয়ে তারপর আজকের জায়গায় এসেছেন।
অন্যকে শেখানোর আগে ‘দ্য ওয়াল’ নিজে শিখেছেন কিভাবে শেখাতে হয়; শিখেছেন কিভাবে ক্রিকেটারদের বন্ধু হতে হয়, কিভাবে তাঁদের ছোট ছোট ভুল গুলো শুধরে দিতে হয়। খারাপ সময়ে অভিভাবকের মত পাশে দাঁড়াতেও শিখেছেন – এসব শিক্ষার কল্যাণেই আজ রোহিত শর্মাদের ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি।
এই কিংবদন্তি যখন অবসর নিয়েছিলেন তখন তাঁর স্ত্রী বলেছিলেন, তিনি এখন থেকে বিশ্রাম নিবেন, বই পড়বেন আর গিটার বাজাবেন। জানা নেই, রাহুল দ্রাবিড় গিটারিস্ট হতে পেরেছেন কি না; তবে বাঁশিওয়ালা ঠিকই হয়েছেন। আর বাঁশির সুরে টিম ইন্ডিয়াকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বসেরা থেকে অপরাজেয় হওয়ার দিকে।