যেন বহুদিন পর প্রাণভরে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিলেন

বাদশাহরা বোধহয় এভাবেই ফিরে আসেন। সমালোচনার সকল রুদ্ধদ্বার ভেঙ্গে রাজসিক এক প্রত্যাবর্তন হয় তাদের। বাবর আজমেরও প্রত্যাবর্তন হলো সেভাবেই। এশিয়া কাপ জুড়ে ছিলেন নিষ্প্রভ, স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা ছিল তো বহু আগে থেকেই, কথা উঠেছিল ব্যাটিং পজিশন নিয়েও। বাবর সব কিছুর উত্তর দিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে। 

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের সিংহাসন হারিয়েছেন এই কিছুদিন হলো। কিন্তু গর্জন তো আর হারাননি। বাবর আজমের সেই গর্জনের সাক্ষী হলো পুরো করাচির গ্যালারি। ফিরে আসার মঞ্চ হিসেবে স্বদেশের মাটির চেয়ে দারুণ কিছু আর কিইবা হতে পারে।

১৭ তম ওভারের পঞ্চম ডেলিভারি। স্যাম কারেনের করা সে বলটা অফ সাইডে ঠেলে বাবর আজম সিঙ্গেল নিলেন। আর সাথে সাথেই শূণ্যে লাফিয়ে উঠে গর্জন। এরপর আকাশের দিকে দুই হাত তুলে নিষ্পলক দৃষ্টি। যেন সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাঁর নির্মোহ কৃতজ্ঞতা। বাবর আজমের চোখেমুখে এরপর দেখা গেল স্বস্তির ছাপ। দিনের পর দিন অসংখ্য প্রশ্নবাণে জর্জর বাবর আজম যেন বহুদিন পর প্রাণভরে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিলেন। নানাবিধ সমালোচনায় বিদ্ধ হয়ে যেন এক ক্লান্তিকর যাত্রার সমাপন। 

রানে ফিরতে খুব একটা বেশি সময় নিলেন না বাবর আজম। অন্তত বিরাট কোহলির মতো ক্রিকেট সমর্থকদের সহস্র দিন তো আটকে রাখলেন না এ ব্যাটার। তবে টানা রান না পাওয়ায় একটা গুমোট ভাব তো বিরাজমান হয়েছিলই। অবশেষে সে ভাবটা কেটে গিয়েছে। স্বস্তি ফিরেছে বাবর আজমের মনে, একই সাথে পাকিস্তান শিবিরেও। বিশ্বকাপের আগে তাদের অধিনায়কের ফিরে আসাটা যে বড্ড দরকার ছিল। 

১১ চার আর ৫ ছক্কায় ৬৬ বলে ১১০ রানের ইনিংস। স্ট্রাইক রেট ১৬৬.৬৭। অর্থাৎ এক ইনিংসেই ফর্ম, ব্যাটিং পজিশন, স্ট্রাইক রেট নিয়ে এতদিনে উদ্ভূত সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিলেন বাবর। দুর্দান্ত এ ইনিংস খেলার পথে প্রায় সবদিকেই সমান শট খেলেছেন তিনি। তবে অনড্রাইড থেকে পেয়েছেন সর্বোচ্চ রান। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বাবর আজমের ব্যাটিং এলিগেন্স মুগ্ধ করেছিল সারা ক্রিকেট বিশ্বকে। করাচির মাঠেও এ দিনে এক্সট্রা কভার থেকে শুরু করে স্কোয়ার লেগ, ডিপ কভার দিয়ে দারুণ সব শট খেলেছেন বাবর। 

সেঞ্চুরি করার দিনে বেশ কটি রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে পূরণ করেছেন ১০ সেঞ্চুরি। মাত্র ৮৪ ম্যাচেই তিনি এ কীর্তি অর্জন করেন। পাকিস্তানের প্রথম ব্যাটার হিসেবে পেয়েছেন দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির দেখা।

এ ছাড়া রিজওয়ানের সাথে জুটিতেও গড়েছেন বেশ কিছু কীর্তি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার শতরানের জুটি এখন তাঁদের। এ ছাড়া সফল রান চেজের ক্ষেত্রে তাদের গড়া ২০৩ রানের জুটিই এখন নতুন বিশ্বরেকর্ড।

বাবর আজম ফুরিয়ে যান নি, এর আগে ফুরিয়ে যাওয়ার পাত্রও অবশ্য তিনি ছিলেন না। তারপরও কিছু শঙ্কা তো ছিলই। সাথে লেপ্টে ছিল কিছু অস্বস্তিবোধও। সবকিছু ছাপিয়ে বাবর আজম আবারও স্বস্তিতে ফিরেছেন, নির্ভার হয়েছেন, বীরদর্পে আবারও বাদশাহী রূপে প্রত্যাবর্তন করেছেন। এ রূপের প্রস্থান নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়ি হবে না। বরং বিশ্বকাপের রুপালি ট্রফির আভায় আলোকিত চোখের দৃশ্যে ব্যক্ত চাওয়ায় বাবর আজমের দিকে তাকিয়ে থাকবে পৃথিবীর লক্ষ কোটি সমর্থক।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link