এখনকার যুগে নতুন কোন সিনেমা মুক্তি পাওয়ার আগে তাঁর একটা ট্রেইলার মুক্তি পায়। মানুষ উৎসাহ নিয়ে সে ট্রেইলার দেখে। সেটা নিয়ে আলোচনা হয়, সমালোচনা হয়। তেমনই এক ট্রেইলার যেন ছিল কনফেডারেশন্স কাপ। ফিফা বিশ্বকাপের এক জমজমাট ট্রেইলার। বিশ্বকাপের আগেই আন্তর্জাতিক ফুটবলের এক হাড্ডা হাড্ডি লড়াই। এই টুর্নামেন্ট থেকেই যেন এক আভাস মিলত বিশ্বকাপের।
১৯৯২ সালে প্রথম আসর বসেছিল এই টুর্নামেন্টের। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে বসেছিল সে আসর। অংশগ্রহণকারী দল ছিল কেবল চারটি। সেবার ফাইনালে স্বাগতিকদের হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর থেকেই নিয়মিত হতে শুরু করে ফিফা আয়োজিত কনফেডারেশন্স কাপ। বিশ্বকাপের ঠিক বছর খানেক আগেই একটা প্রস্তুতির ব্যবস্থা।
পরবর্তীতে টুর্নামেন্টটা আয়োজিত হয়েছে আরও বড় পরিসরে। দলের সংখ্যা বেড়েছে। চারটা থেকে আটটা হয়েছে। ছয় অঞ্চলের চ্যাম্পিয়নদের সাথে ডিফেন্ডিং বিশ্বকাপ জয়ী দলকে নিয়ে আয়োজিত হতে থাকে মধ্যবর্তীকালীন এই টুর্নামেন্ট। শেষ আয়োজিত হয়েছিল ২০১৭ সালে। সেবার শিরোপা ঘরে তুলেছিল জার্মানি। তবে এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিল।
চারটি শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে দেশটি। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নিজেদের সফলতা যেন থেমে যেতে দিতে নারাজ ব্রাজিল। দর্শকদের বাড়তি একটা বিনোদনের ব্যবস্থাও হত। তবে হঠাৎ করেই এই টুর্নামেন্টটা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়। ক্লাব ফুটবলের ডামাডোলের মাঝে আন্তর্জাতিক ফুটবল ঠিক কেমন একটা চাপা পড়ে যায়। তবুও আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ে ভক্ত-সমর্থক কিংবা অতি সাধারণ দর্শকদের আগ্রহের কমতি থাকে না।
তবে ফিফার সিদ্ধান্ত ক্লাব বিশ্বকাপটা করা হবে আরও বড় পরিসরে। আয়োজনটা হবে ২৪ দল নিয়ে। সে আয়োজনের সময় বাড়াতেই কর্তন হয়েছে গোটা কনফেডারেশন্স কাপ। তাছাড়া করোনার থাবায় পিছিয়ে যায় ইউরো ও কোপা আমেরিকা। সে সব আয়োজন করতে গিয়েই আর সুযোগ হয়ে ওঠেনি ক্লাব বিশ্বকাপ বড় পরিসরে আয়োজন করা।
ফুটবলের একটা বড় অংশ দখল করে রেখেছে ক্লাব ফুটবল। পঞ্জিকাবর্ষের পুরোটাই থাকে ক্লাব ফুটবলের দখলে। এ কারণে হয়ত ক্লাব ফুটবলের দিকেই ঝুকছে ফিফা। ক্লাব ফুটবলকে আরও বেশি সুসজ্জিত করবার পরিকল্পনার যেন কোন কমতি নেই। তবে দ্বিমত যে নেই তা কিন্তু নয়। এখনও গোটা বিশ্বে আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই।
চার বছর বাদে একবার করে বিশ্বকাপ আয়োজন করা ছাড়া আর তেমন কিছুই যেন করার নেই ফিফার। অথবা বলা যেতে পারে যে ইচ্ছে নেই। অথচ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে মাঠে কোন শিরোপা জয় যে ঠিক কতটা আনন্দের তা যেন ২০১৩ কনফেডারেশন্স কাপ জেতা নেইমার, ২০২১ কোপা আমেরিকা জয়ের পর লিওনেল মেসি আর ইউরো ২০১৮ জেতার পর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ক্রন্দনরত চেহারাগুলোই মনে করিয়ে দেয়।
তবুও আরও একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করা হল খেলোয়াড়দের। আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টগুলো নিঃসন্দেহে ফুটবলের শোভা বাড়ায়। আর আপামর ফুটবল দর্শকদের ভাসায় আনন্দ উল্লাসে। এক বিশ্বকাপকে ঘিরে এই ছোট্ট দেশ বাংলাদেশেও তো কম উন্মাদনা চোখে পড়ে না। ক্লাব ফুটবল নিয়ে হইচই যদিও কম নয়, তবে তা অপেক্ষাকৃত কমই বটে।
ছয়টা ভিন্ন অঞ্চলের চ্যাম্পিয়নদের একদফা মুখোমুখি লড়াই বাড়তি উন্মাদোনার জোগান দিত নিশ্চয়ই। হয়ত ফিফা আবার ঝুকবে আন্তর্জাতিক ফুটবলের নানান সব আয়োজনে। অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে।