দুর্গের নাম বাবর আজম!

প্রাচীনকালে দুর্গ ব্যবহৃত হতো শত্রুপক্ষের আক্রমণ থেকে রাজ্য রক্ষা করার কাজে। চলমান শ্রীলঙ্কা পাকিস্তান টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টটিতে গল ক্রিকেট মাঠে দেখা পাওয়া গেল সেরকম একটি দুর্গের! তবে এই দুর্গ ইট পাথরের নয়, বরং রক্ত মাংসের গড়া এক মানুষরুপী দুর্গ।

প্রাচীনকালে দুর্গ ব্যবহৃত হতো শত্রুপক্ষের আক্রমণ থেকে রাজ্য রক্ষা করার কাজে। চলমান শ্রীলঙ্কা পাকিস্তান টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টটিতে গল ক্রিকেট মাঠে দেখা পাওয়া গেল সেরকম একটি দুর্গের! তবে এই দুর্গ ইট পাথরের নয়, বরং রক্ত মাংসের গড়া এক মানুষরুপী দুর্গ।

পাকিস্তানের হয়ে প্রথম ইনিংসে চরম ব্যাটিং ধ্বসের মাঝেই ঠিক দুর্গের ন্যায়ই পাকিস্তানকে আগলে ধরে রেখেছিলেন বাবর আজম। অধিনায়কের দায়িত্বটা নিজের কাঁধে নিয়েই শ্রীলঙ্কার মাটিতে এসেছেন তিনি। দলের উপরের দিকের ব্যাটাররা একে একে সাঁজঘরে ফিরে যাচ্ছেন, এমন অবস্থায় চার নম্বরে মাঠে নামলেন বাবর।

তিনি নামলেন, ঠাণ্ডা মাথায় খেলে গেলেন। দলের বাকি ব্যাটাররা তখনো আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেন, অন্যদিকে তিনি শেষ অব্দি শক্ত হাতে ও ধীরচিত্তে রানের চাকা ঘুরাতে লাগলেন প্রায় একাই। বাবর খেললেন এবং দেখালেন এভাবেই দলকে একাহাতে নেতার মতো এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়।

শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২২২ রান করেছিল। পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং এ নেমে মাত্র দলীয় রান ১২ এর ঘরে থাকতেই এক উইকেট হারায়। তারপর ২১ রান ও ২৪ রানের ঘরে আরও দুইটি হারিয়ে বেশ নড়বড়ে অবস্থায় চলে যায়।

এরপর বাবর আজম দুর্গ হয়ে দলকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নেয়ার প্রচেষ্টা চালাতে থাকলেন। বাবর ছাড়া এই ইনিংসটিতে পাকিস্তান দলের আর কোন ক্রিকেটারই বিশ রানের ঘরও পেরোতে পারেন নি। বাকি ব্যাটাররা যেখানে ছোট ছোট ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যাচ্ছিলেন, বাবর তখন দৃঢ়চিত্তে ব্যাটিং করে চলেছেন।

এলবিডব্লিউ এর খপ্পরে পড়ে ফিরে যাওয়ার আগ অব্দি ২৪৪ টি বল খেলে বাবর ১১৯ রান করেছেন, যার জন্যই মূলত পাকিস্তানের রান ২০০ পেরোতে সক্ষম হয়েছে। বাবরের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তান দল ২১৮ রান করে শ্রীলঙ্কার থেকে মাত্র চার রান পিছিয়ে থেকে তাদের ইনিংসটি শেষ করতে পেরেছে।

এই টেস্ট ম্যাচটি তাঁর ক্যারিয়ারের ৪১ তম টেস্ট ম্যাচ ছিল এবং তিনি এটিতে তাঁর ক্যারিয়ারের সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরিটি তুলে নেন। ১৯৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করা এই ক্রিকেটার বর্তমানে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের তিন ফরম্যাটের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। চলমান টেস্টে  তিনি যে যোগ্য অধিনায়ক সেই ছাপটা রাখলেন আরেকবার। সাহসী নেতৃত্বের পাশাপাশি একজন দুর্দান্ত ব্যাটারও তিনি। পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার তিনি।

২০১৮ এবং ২০১৯ সালের সময়কালে তিনি পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট রান সংগ্রাহক ছিলেন। আবার ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে পাকিস্তান দলের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন বাবর আজম। এমনকি ২০১৭ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টি টোয়েন্টি রান সংগ্রাহক এবং ২০১৯ সালে পাকিস্তান দলের হয়ে শীর্ষ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি।

২০১৭ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের বর্ষসেরা একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার নির্বাচিত হন এবং ২০১৮ সালে টিটোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। ৭ এপ্রিল ২০২১ তারিখে তিনি বিরাট কোহলিকে ছাড়িয়ে ওডিআইতে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটারের মর্যাদা লাভ করেন। তিনি যে বেশ একজন শক্তিশালী ব্যাটার তা উপরের বাক্যগুলোই প্রমাণ দেয়।

সাধারণত ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে একই সাথে দুর্দান্ত খেলোয়াড় ও ভালো নেতৃত্বগুণ দুটো একসাথে পাওয়াটা সচরাচর দেখা যায়না। কিন্তু বাবর আজম এদিক থেকে দুটি গুণেই গুণান্বিত। তিনি একদিকে হাল না ছাড়া মনোভাবের একজন দারুণ ব্যাটার আবার একইসাথে সযতনে পুরো দলকে আগলে রাখার মতো কঠিন এক দুর্গও বটে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...