১৪ ই ডিসেম্বর এডটেক স্টার্টআপ ক্লাসপ্লাস সৌরভ গাঙ্গুলিকে তাদের নতুন ব্রান্ড এম্বাসেডর নিযুক্ত করে।
ক্লাসপ্লাস হল ভারত জাতীয় দলের জার্সি স্পন্সর বাইজুসের সবচাইতে বড় প্রতিদ্বন্দী। প্রশ্ন হতে পারে, ভারতীয় দলের স্পন্সরের প্রতিদ্বন্দীর সাথে গাঙ্গুলী কেন যোগসূত্র গাঁথলেন? তবে সে প্রশ্ন তোলার আগে জানিয়ে রাখি, সৌরভ গাঙ্গুলি এটা প্রথম করেননি। এর আগেও তিনি ‘মাই ইলেভেন সার্কেল’ এর সাথে যুক্ত হয়েছিলেন, যেটা কিনা ছিল আইপিএলের স্পন্সর ড্রিম ইলেভেনের সবচাইতে বড় প্রতিদ্বন্দী।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বোর্ড সভাপতির এমন আচরণে স্পন্সরদের সাথে বোর্ডের স্বার্থের সংঘাত দেখা দেবে কিনা? অন্য সব স্পন্সররা একটু হলেও আশাহত হবেন কিনা?
সৌরভ গাঙ্গুলি, যিনি কিনা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এই মুহুর্তে নিজের আসনটাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। এই ক্রিসমাসের পরই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা। যে সভাতে বোর্ডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবার কথা, যার মধ্যে আছে গাঙ্গুলি আর জয় শাহর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রসঙ্গও! ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টও এই সভার দিকে তাকিয়ে আছে।
এদিকে বিসিসিআইয়ের অনেক সিদ্ধান্ত দেখভাল করে সুপ্রীম কোর্ট; অনেক দিন ধরেই। তবে বিসিসিআইও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই সিদ্ধান্তকে ওভারটার্ন করে পূর্ণ দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেওয়ার।
তবে এখানে সমস্যা বেঁধেছে অন্যখানে। জয় শাহর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ এর সেপ্টেম্বরে, সৌরভ গাঙ্গুলিও তার মেয়াদ শেষ করেছেন এই বছরের ২৬ শে জুলাই। তাই বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাদের মেয়াদ শেষ হবার পরও বিসিসিআই কেন নতুন কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না? এ ব্যাপারে অবশ্য নানা মিডিয়া সৌরভ গাঙ্গুলির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সৌরভ বারবারই বলেছেন তিনি বার্ষিক সভার আগে কোন মন্তব্য করবেন না।
এতে গাঙ্গুলির সমালোচনা হচ্ছে যদিও, তাতে গাঙ্গুলি বিশেষ কর্ণপাত করছেন না। অবশ্য সৌরভ তো আজীবনই এমন। যখন তিনি অধিনায়ক ছিলেন তখনও একা হাতে সবকিছু সামলেছেন, রাজনৈতিক নেতার মতই ক্ষুরধার মগজে।
তবে সবকিছুকে একপাশে রাখলেও স্পন্সররা কেন ভারতীয় ক্রিকেটের সাথে নিজেদের নাম জড়াতে চায়? কারণ আবালবৃদ্ধবনিতা সবাইকে নিজেদের ব্রান্ড চেনানোর জন্যে এটাই সবচাইতে ভাল প্লাটফর্ম। আর সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক ইস্যুর চাইতে ব্যাক্তিগত সংযুক্তির বড় হওয়াটা সৌরভের সামনে একটা বড় প্রশ্নই এঁকে দিয়েছে। তবে স্পন্সররা অবশ্য বলেছে, এতে তাদের কোন সমস্যা নেই। ড্রিম ইলেভেনের এক মুখপাত্রই যেমন সৌরভের মাই ইলেভেন সার্কেলে যুক্ত থাকা নিয়ে বলেছে এ ব্যাপারে তাদের প্রতিষ্ঠান জানে আর এতে তাদের কোন অভিযোগও নেই।
অবশ্য সৌরভ গাঙ্গুলি যদি ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর দিকে তাকান, কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। ফিফার গ্লোবাল পার্টনার হল ‘ভিসা” অথচ ইনফান্তিনো যুক্ত আছেন ‘ভিসা’ র সরাসরি প্রতিদ্বন্দী মাস্টারকার্ডের সাথে।
এখন এই ব্যাপারগুলো কি আসলেই স্বার্থের সংঘাত তৈরি করতে পারে? একটা ব্যাপার কিন্তু ভুলে গেলে চলবেনা, বিসিসিআই এর নীতিমালাতে কিন্তু এ ধরণের কোন সংযুক্তি নেই। আরো একটা ব্যাপার, স্বার্থের সংঘাত যদি লাগতই তাহলে শ্রীনিবাসন বিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কিভাবে আইপিএলের দলের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন, সে প্রশ্নটিও কিন্তু সামনে আসবে।
মজার ব্যাপার হল, শ্রীনিবাসন একসাথে আইপিএল আর বিসিসিআই এডমিনিস্ট্রেশন চালাতে পারলেও সৌরভ আর লক্ষণের ক্ষেত্রে কিন্তু নিয়মটা পালটে গেছিল। ২০১৯ এর জুনেই বিসিসিআই এর ‘এথিকস অফিসার’ বলেছিল, তাঁদের দুজনকে হয় কমেন্ট্রিতে থাকতে হবে, না হয় প্রশাসনে; কিন্তু একইসাথে দুটোতে নয়!
তবে এসবের বাইরেও কিন্তু সৌরভ বিপদে আছেন । সাবেক বর্তমান মিলে অনেক ক্রিকেটার, ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিত্ব সৌরভের ওপর নাখোশ। অবশ্য তার কারণও আছে। ঘরোয়া সার্কিটের ৬৫০০ খেলোয়াড়ের কন্ট্রাক্ট এখনও করোনাকালীন সময়ে আলোর মুখ দেখেনি। ৫০০ এর কাছাকাছি ম্যাচ অফিশিয়াল চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তাতে বিসিসিআই কোন ব্যাবস্থাও নেয়নি।
আসলে বিসিসিআই এর প্রেসিডেন্টের মত পদটা সবসময়ই আঁকড়ে থেকেছে কোন ব্যাবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আইনজীবি বা ক্রিকেটের বাইরের কেউ। লক্ষাধিক মানুষের ভালবাসার অধিনায়ক এমন কারো জন্যে এই পদ সামলানোর নজির এবার একেবারেই নতুন একটি উদাহরণ। তাতে সৌরভ ঠিক কুটনৈতিক হতে পারছেন না তা বোঝাই যাচ্ছে। তবে এখানে সৌরভ খুব সম্ভবত নতুন ব্রান্ড যুক্ত করতে চাইছেন যাতে ব্যাক্তি আর প্রতিষ্ঠান সরলরেখায় পাশাপাশি চলতে পারে এমন কোন বার্তা আছে। এখন সেই ব্রান্ড অভিশাপ না হলেই হয় গাঙ্গুলীর জন্যে!