পাঁচ বোলার খেলানোর সাহস

বাংলাদেশ দলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হয় সাকিব আল হাসানকে। সাকিব দলে থাকলে বাংলাদেশ সাধারণত সাত ব্যাটসম্যান আর পাঁচ বোলার নিয়ে মাঠে নামে। তাই সাকিবের অনুপস্থিতিতে ভারসাম্যপূর্ণ দল নির্বাচন করা বেশ কঠিন বটে। তার অনুপস্থিতিতে একজন ব্যাটসম্যান কিংবা একজন বোলারকে কম নিয়েই খেলতে হয়।

স্বভাবগত দিক থেকে বাংলাদেশ রক্ষণশীল দল। আটজন তো বটেই পারলে নয় ব্যাটার নিয়ে খেলতে নামে তারা। সেজন্য সাকিবের অবর্তমানে বাড়তি ব্যাটার নিয়ে, পরবর্তীতে পার্টটাইমার দিয়ে বোলিংয়ের কাজ চালানো হয়। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দেখা গিয়েছে নতুন দৃশ্য।

সুপার লিগের অংশ না হওয়ায় আগেই ছুটি নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তাই প্রশ্ন উঠেছিল ব্যাটসম্যান নাকি বোলার কোন বিভাগে বেশি জোর দিবেন নির্বাচকরা। শেষপর্যন্ত দেখা গেলো সাহসী এক বাংলাদেশকে, নতুন এক বাংলাদেশ। মাত্র ছয়জন ব্যাটার নিয়েই দল ঘোষণা করেছে ম্যানেজম্যান্ট। অন্যদিকে নেয়া হয়েছে পাঁচজন জেনুইন বোলার।

সুফলও মিলেছে প্রথম ওয়ানডেতে। সাকিবের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া নাসুম আহমেদ বোলিং করেছিল অবিশ্বাস্য কৃপণতার সাথে। ওভার প্রতি মাত্র দুই রান খরচ করেছেন তিনি। আবার অপর পাশ থেকে মিরাজ, শরিফুলরা তুলে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। সবমিলিয়ে ক্যারিবিয়ানদের মাত্র ১৫০ রানের মাঝেই আটকে দিতে সক্ষম হয়েছে বোলাররা।

রান তাড়া করতে নেমে চার উইকেট হারালেও কখনো জয়ের ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি হয় নি। দাপটের সাথেই জিতেছে টিম টাইগার্স। তবে ম্যাচের ফলাফল ছাড়িয়ে আলোচনায় একাদশ নির্বাচনে নির্বাচক আর অধিনায়কের ভাবনা।

ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে অধিনায়ক তামিম তুলে ধরেন নিজের মতামত। তিনি মনে করেন যে একটা ওয়ানডে ম্যাচে পাঁচজন মূল বোলার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। আর তাই বাংলাদেশ একজন বাড়তি ব্যাটার নেয়ার চেয়ে একজন জেনুইন বোলারকেই বেছে নিয়েছে।

দল নির্বাচনে এই যে সাহস দেখানোর ব্যাপারটা, এটি বাংলাদেশ দলে সচরাচর দেখা যায় না। এমনকি বর্তমান টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একটু বেশি রক্ষণাত্মক থাকে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তামিমের নেতৃত্বে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশ দলে। সাহসী অধিনায়কত্বে এর আগেও নজর কেড়েছিলেন দেশসেরা ওপেনার। আর এবার সাহসী সিদ্ধান্তে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে।

সাকিব আল হাসান নেই, নেই মুশফিকুর রহিম এমনকি তরুণ ব্যাটার ইয়াসির আলী রাব্বিও দলের বাইরে। অনভিজ্ঞ আর এভারেজ পারফর্মারদের নিয়েও মাত্র ছয়জনের ব্যাটিং লাইনআপ সত্যিই তামিমের আত্মবিশ্বাসের প্রদর্শনী হয়ে রইলো। ক্রিকেট বিশ্বের পরাশক্তি দলগুলো ছয় ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে ভয় পায় না, তারা জানে জেতার জন্য এই ছয়জনই যথেষ্ট। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশও হয়তো একই পথ অনুসরণ করতে দ্বিধা করবে না।

এছাড়াও এনামুল হককে বাইরে রেখে নাজমুল শান্তকে নেয়ার যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতেও ফুটে উঠেছে আদর্শ নেতৃত্বের প্রতিফলন। আবার মাঠে ডিআরএস নিয়ে আম্পায়ারের সাথে আগ্রাসন দেখানোর ব্যাপারটিও বেশ ইতিবাচক মানসিকতা এনে দিয়েছে মাঠের বাকি দশজনের মাঝে।

তবে বড় একটি সংশয় কিন্তু রয়ে গিয়েছে। সর্বশেষ ম্যাচে সাফল্য পাওয়াতে হয়তো তামিমের ছয় ব্যাটার, পাঁচ বোলার তত্ত্বের প্রশংসা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু যদি এই পরিকল্পনা উল্টো পরাজয়ের দিকে টেনে আনতো তাহলে কি একই মনোভাব থাকতো সবার? বিশেষ করে তামিম, লিটন শুরুতে ফিরে গেলে আর ব্যাটিং কোলাপ্স হলেও প্রশংসিত হতো এমন সাহসী সিদ্ধান্ত?

উত্তরটা ‘না’ হওয়ার সম্ভাবনা-ই বেশি। কেননা আমরা সবাই প্রক্রিয়ার চেয়ে ফলাফলের দিকে বেশি নজর দিয়ে থাকি। ফলাফল অনুকূলে আসলে সব সঠিক আর অন্য কিছু ঘটলে সব ভুল এমন ধারনা আসলে অযৌক্তিক।

মাঠের ফলাফল যাইহোক একাদশ নির্বাচনে এমন সিদ্ধান্ত যথেষ্ট যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী ছিল। অধিনায়ক থাকা অবস্থায় তামিম এভাবেই সাহসিকতা আর আগ্রাসনের মিশেলে নেতৃত্ব দিবেন সেটা আশা করা-ই যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link