ক্রিকেটারদের হুটহাট আইনি ঝামেলায় পড়া নতুন কিছু না। ছোটখাট ক্রিকেটার থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তারকা, লঘু থেকে গুরু সব ধরণের অপরাধেই জড়ানোর উদাহরণ আছে। কেউ কেউ এই ঝামেলা থেকে ফিরে এসেছেন, কারো কারো তো ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে গেছে এতে। তা এই আইনি ঝামেলায় পড়া ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা একাদশ করে ফেললে কেমন হয়?
- মার্ক ভারমিউলেন (জিম্বাবুয়ে) – দর্শক লাঞ্ছনা
২০০৬ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের লিগ ম্যাচে দর্শকের দিকে বল ছুঁড়ে মেরেছিলেন সাবেক জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান মার্ক ভারমিউলেন। এতে তাকে এক বছরের জন্যে নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা শেষে তিনি ফিরে যান জিম্বাবুয়ে। সেখানে গিয়ে বাঁধিয়ে বসেন আরেক বিপত্তি, হারারেতে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের অ্যাকাডেমিতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে অবশ্য তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ প্রমাণ করে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়।
- নভজ্যোৎ সিং সিধু (ভারত) – কালপেবল হোমিসাইড
২০০৬ সালে আগের এক সড়ক দুর্ঘটনাতে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হলে নভজিৎ সিংকে ‘কালপেবল হোমিসাইড’ আইন অনুযায়ী তিন বছরের জেল দেওয়া হয়। মজার ব্যাপার হল, এই সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮৮ সালে, যেটার সাথে সিঁধুর সংযোগ পাওয়া গেছিল।
- পিটার রোবাক (ইংল্যান্ড) – লাঞ্ছনা
সাবেক সমারসেট অধিনায়ক পিটার রোবাককে ২০০১ সালে লাঞ্ছনার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। বোরাকের অপরাধ ছিল, তাঁর কাছে বাসাতে তিনজন দক্ষিণ আফ্রিকান তরুণ ক্রিকেট পাঠ নিতে আসত। তিনি তাদের ওপর প্রহারসহ নানা ধরণের নির্যাতন করতেন। তাদের সাথে বোরাক নানা ধরণের বাজে ব্যাবহারও করতেন।
- হ্যান্সি ক্রনিয়ে (দক্ষিণ আফ্রিকা-অধিনায়ক) – ম্যাচ ফিক্সিং
হ্যান্সি ক্রনিয়ের অপরাধের গল্পটা অবশ্য সবাই জানে। পুরো ক্রিকেট দুনিয়া রীতিমত তোলপাড় হয়ে গেছিল যখন সবাই জানল, কিংবদন্তি দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ফিক্সিংয়ের মত কুৎসিত অপরাধের সাথে জড়িত। এই অপরাধের অপরাধী হিসেবে অবশ্য মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন, সেলিম মালিক আর সালমান বাটের কথাও বলা যায়।
- জ্যাকব মার্টিন (ভারত) – মানব পাচার
১৯৯৯ থেকে ২০০১ – এই সময়ে ভারতের জার্সিতে গোটাদশেক ওয়ানডে খেলেছিলেন জ্যাকব মার্টিন। তবে ক্রিকেটার এই পরিচয়ের বাইরে ২০১১ সালে সবাই নতুন করে চেনে জ্যাকব মার্টিনকে। ২০০৩ সালে এক মানব পাচারের কেসের তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে জ্যাকব মার্টিনের নাম। ধারণা করা হয় এ কাজে মার্টিনের হয়তো একটা নিজস্ব দল আছে আর ২০০৩ সালে সেই দল এক ভারতীয় কিশোরকে যুক্তরাজ্যে পাচার করে।
- কিং হেনরি এইট (ইংল্যান্ড) – ক্রিকেট ত্যাগ
ব্রিটিশদের এই রাজা অবশ্য অপরাধী আমাদের মানে ক্রিকেটপ্রেমিদের হিসেবে। ১৫৩৬ সালী দিকে তিনি তাঁর রাজ্যের তরুণদের নির্দেশ দেন ক্রিকেটের মত (তৎকালীন ক্রিক-এ-উইকেট) খেলা ছেড়ে আর্চারিতে মনোযোগ দিতে। অবশ্য ব্রিটেনের প্রিভি কাউন্সিল এর সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান।
- এডওয়ার্ড পুলি (ইংল্যান্ড-উইকেটরক্ষক) – জুয়া খেলা, ম্যাচ ফিক্সিং
১৮৭৭ সালের মেলবোর্ন টেস্টে পুলির অভিষেকটা প্রায় হয়েই যেত, অন্তত ইংল্যান্ডের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান বেশ ভালভাবেই নজরে ছিল নির্বাচকদের। সবকিছুই যখন ঠিকঠাক, তখনই পুলির দিকে আঙুল ওঠে এর আগে এমসিসির এক সফরে তিনি ম্যাচ ফিক্সিং আর জুয়ার মত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন। এডওয়ার্ড পুলি এরপর আর কোনদিন দলে ডাক পাননি।
- ক্রিস লুইস (ইংল্যান্ড) – মাদক পাচার
সাবেক এই ইংলিশ অলরাউন্ডার জুসের বোতলে তরল মাদক ভর্তি করে নিজের কিটব্যাগে রাখতেন আর সেগুলো ইংল্যান্ডে পাচার করতেন- ২০০৯ সালে এমনই এক অভিযোগ ওঠে ক্রিস লুইসের বিরুদ্ধে। ইংল্যান্ডের আদালতে অভিযোগে লুইসকে ১৩ বছরের জেল দেয়।
- মনট্যাগ ড্রুইট (ইংল্যান্ড) – সিরিয়াল কিলিং
ড্রুইট ছিলেন উইনচেস্টার কলেজ আর মডার্ন ক্রিকেট ক্লাবের ক্রিকেটার। তা এদিকে ড্রুইটের সম্ভাবনাও ছিল প্রচুর। যদিও সে সম্ভাবনার পুরোটা ড্রুইট কাজে লাগাতে পারেননি। যা হোক, সে কারণে ড্রুইটকে এখন আর কজন মনে রাখে। সিরিয়াল কিলিং এর জগতে দুর্ধর্ষ ঘটনা ‘হোয়াইটচ্যাপেল মার্ডার’ ঘটনায় যখন ড্রুইটের নাম বেরিয়ে আসে।
- টেরি জেনার (অস্ট্রেলিয়া) – ডাকাতি
১৯৭০ এর দিকে অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে নয় টেস্ট খেলেছিলেন তেরি জেনার। এরপর খুব দল থেকে বাদ পড়লে খুব বেশি সময় নিজের ক্যারিয়ার টেনে নিতে পারেননি তিনি, দ্রুতই অবসর নিয়ে নেন। কিন্তু ১৯৮৮ সালে তিনি ডাকাতির অভিযোগে ধরা পড়েন আর তাকে সাড়ে ছয় বছরের মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। পরে অবশ্য আঠারো মাস পর তিনি ছাড়া পেয়ে যান।
- লেসলি হিলটন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) – খুন
১৯৩০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে খেলা পেসার লেসলি হিলটন ইতিহাসেরই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি কিনা খুনের আসামী হিসেবে অভিযুক্ত। ছয় টেস্ট খেলা এই ক্রিকেটারকে গ্রেফতারের অভিযোগ ছিল তিনি নিজ বাসায় তাঁর স্ত্রীকে খুন করেছিলেন। অবশ্য হিলটনের আইনজীবির ভাষ্যমতে হিলটন তাঁর স্ত্রীকে নয়, বরং আত্মহত্যা করতে গুলি ছুড়েছিলেন কিন্তু তা গিয়ে তাঁর স্ত্রীর গায়ে লাগে। অদ্ভুত!
- শাহাদাত হোসেন (বাংলাদেশ-দ্বাদশ ব্যক্তি): নারী ও শিশু নির্যাতন
পরিসংখ্যান বলে, শাহাদাত হোসেন রাজিব টেস্টে বাংলাদেশের সেরা পেসারদের একজন। তবে, তিনিও আইনের চোখে অপরাধী ছিলেন। ২০১৫ সালে স্ত্রীর সাথে ১১ বছর বয়সী গৃহকর্মীকে নির্যাতন করায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। ঘটনাটা এতটাই গুরুতর ছিল যে, তাঁকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) নিষিদ্ধ করে।