লিওনেল মেসি কাল রাতে দুর্দান্ত এক ফ্রি কিকে গোল করেছেন। বলের ‘স্পিন’ সামলাতে না পেরে এক খেলোয়াড় তো গিয়ে ধাক্কা খেয়েছে সোজা সাইডবারে। সেই গোলে মাঝরাতে বুঁদ হয়ে ছিল পুরো বাংলাদেশ।
চিন্তা করুন, মেসি যদি এই সাথে আর্জেন্টিনার হয়ে ক্রিকেটও খেলতেন!
ভাবছেন, এমনটা আবার হয় নাকি! হয়। বলা ভালো, একসময় এরকম অনেক ঘটনাই ছিলো। একসময় আমাদের দেশের আমিনুল ইসলাম বুলবুল বা কাজী সালাউদ্দিন একসাথে ফুটবল-ক্রিকেট, দুটোই খেলেছেন। আর ইংল্যান্ডে তো আপনি দুই ধরণের খেলার জাতীয় দলে খেলা খেলোয়াড়ও পাবেন কয়েক জন। আজ বরং দুই খেলার এরকম সব্যসাচীদের নিয়ে আলাপ করা যাক।
- সিবি ফ্রাই
চার্লস বুর্গেস ফ্রাই ছিলেন সর্বগুণে গুণান্বিত। ইংল্যান্ডের হয়ে তো অলরাউন্ডার হিসেবে খেলেছেনই; ২৬ টেস্টে ১২২৩ রানও করেছেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন লং-জাম্পার, শিকারী, রাগবি খেলোয়াড়, লেখক, রাজনীতিবিদ , শিক্ষক আর অতি অবশ্যই ফুটবলার। ক্রিকেটে অলরাউন্ডার হলেও ফুটবলে তিনি ছিলেন নিখাদ রাইটব্যাক। খেলতেন সাউদাম্পটনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে।
- আর্থার মিলটন
আর্থার মিলটনকে দেখে আপনার ঈর্ষা জাগতে বাধ্য। এক জীবনে একজন মানুষ এতকিছু করে ফেলবেন, এমনটাও ভাববেন আপনি। ক্রিকেটার হিসেবে দুর্দান্ত এক ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ার রয়েছে মিল্টনের। গ্লুচেস্টারশায়ারের হয়ে ৬২০ ম্যাচে করেছেন ৩২,১৫০ রান! তবে দেশের হয়ে তাঁর খেলা থেমে গেছে মাত্র ছয় টেস্টেই।
ক্রিকেটার হওয়ার আগে মিল্টন ছিলেন ফুটবল। তাও যেনতেন ফুটবলার নন, খেলেছেন আর্সেনালের মত ক্লাবেই। আর্সেনালে ৮০ এর অধিক ম্যাচ খেলার পর অবশ্য তাকে ব্রিস্টল সিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আর এরপর তিনি ক্রিকেটেই পূর্ণ মনোযোগ দেন।
- ভিভ রিচার্ডস
ভিভ রিচার্ডস এর ক্রিকেটের গল্পটা তো আমরা জানি, ফুটবলেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। একই সাথে ক্রিকেট আর ফুটবল দুই বিশ্বকাপেই খেলেছেন। ক্রিকেটে ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ আর ১৯৮৭ এর বিশ্বকাপে তো খেলেছেনই। কিন্তু তাঁর বয়স যখন বিশ, তখন এন্টিগার হয়ে ১৯৭৪ এর বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে অংশ নেন তিনি। ইংল্যান্ডের ক্লাব বাথ সিটিতেও ট্রায়াল দিয়েছিলেন তিনি।
- এলিস পেরি
এলিস পেরি তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেক ক্যাপ পান ২০০৭ সালে। এই অভিষেক হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহ পর তিনি অস্ট্রেলিয়ান মহিলা ফুটবল দলেও ডাক পান। তিনি কিন্তু একটা ছেড়ে আরেকটাতে যাননি। সমানতালে দুটো খেলাই তিনি চালিয়ে গেছেন। দেশের হয়ে ক্রিকেটে ৭ টেস্ট, ৯৭ ওয়ানডে আর ৯০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তো মাঠে নেমেছেনই। অস্ট্রেলিয়া ফুটবলও তাকে মনে রাখবে ২০১১ এর কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানীর বিপক্ষে গোলটার জন্যে। ২০১৪ সালে অবশ্য ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেটেব মনোযোগ দেন তিনি।
- ডেনিস কম্পটন
টেস্ট ক্রিকেটে কম্পটনের পরিসংখ্যান চমক জাগানিয়া; ৫০.০৬ গড়ে ৫৮০৭ রান! তাঁর সময়ের ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মনে করা হত কম্পটনকে। তবে ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলেও দারুণ ক্যারিয়ার ছিল কম্পটনের। ছিলেন উইংগার, খেলেছেন আর্সেনালের মত দলেই। আর্সেনালের হয়েই জিতেছেন ১৯৩৪ এর লিগ টাইটেল আর ১৯৫০ এর এফ এ কাপ!
- মাইক গ্যাটিং
শেন ওয়ার্নের ‘বল অফ দা সেঞ্চুরি’র কথা মনে আছে তো। সেই বলটার ভিক্টিম ছিলেন মাইক গ্যাটিং। ইংলিশ অধিনায়কের ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা ছিল দারুণ। খেলেছেন ৭৯ টেস্ট আর ৯২ ওয়ানডে, ঘরোয়া ক্রিকেটেও ৫৫১ ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ আর সমসংখ্যক লিস্ট-এ ম্যাচ খেলার রেকর্ড আছে তাঁর। তবে ক্রিকেটের ছাড়াও ফুটবলেও আগ্রহ ছিল গ্যাটিংয়ের। অবশ্য সেই যোগ্যতাও ছিল তাঁর, এমনিতে কি আর ওয়াটফোর্ডের মত দল ডেকে নেয় তাঁকে!
- ইয়ান বোথাম
ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন মনে করা হয় ইয়ান বোথামকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর রান ৭৩১৩, উইকেটসংখ্যাও ৫২৮! খুব কম রেকর্ডই আছে যেগুলো তিনি নিজের করে নিতে পারেননি। তবে ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবলটাও কিন্তু বেশ ভাল খেলতেন ইয়ান বোথাম। সেন্টার হাফের এই ফুটবলার দুই বছর খেলেছেন ইংল্যান্ডের ক্লাব ইয়োভিল টাউনের হয়ে। এছাড়া স্কুনথর্প ইউনাইটেডের হয়েও ১১ ম্যাচ খেলার খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর।
- টিপ ফস্টার
টিপ আরস্কাইন ফস্টার ইংল্যান্ডের হয়ে ফুটবল আর ক্রিকেট দুটো খেলাতেই অধিনায়কত্ব করেছেন। ক্রিকেটে সিডনী টেস্টে তাঁর অভিষেক ম্যাচে ২৮৭ রানের ইনিংসটা যেকোন ক্রিকেটানুরাগী মনে রাখবে। পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে ৪৬.৩০ গড়ে করেছেন ৬০২ রান। তবে এর আগে ১৯০০ সালে ফুটবলেও অভিষেক হয়ে গেছে টিপ ফস্টারের। সেই ফুটবল ক্যারিয়ার অবশ্য ১৯০২ সালে ওয়েলসের সাথে ম্যাচের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায়।
- গেরি গোমেজ
ত্রিনিদাদে জন্ম নেওয়া গেরি গোমেজ ১৯৩৯-১৯৫৪ সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। ২৯ টেস্টে ১২৪৩ রান আর ৫৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এমনকি ১৯৪৮ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। তবে ক্রিকেট খেললেও ফুটবলেও দারুণ আগ্রহ ছিল তাঁর । ত্রিনিদাদের আন্তর্জাতিক দলটাতে তো তিনি খেলেছেনই, অবসরের পর হয়ে গেছেন সেখনকার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট।
- আর্নি সাইডবটম
ইংলিশ এই মিডিয়াম পেসার দেশের হয়ে মাত্র এক টেস্টে নামলেও দুর্দান্ত এক ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ার আছে তাঁর। ইয়োর্কশায়ার আর অরেঞ্জ ফ্রি এস্টেটের হয়ে ২২৮ ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে মাঠে নেমেছেন তিনি। তবে ফুটবলার হিসেবেও আর্নি ছিলেন দুর্দান্ত। ম্যানচেস্টার সিটি, হার্ডার্সফিল্ড, হ্যালিফ্যাক্স এর মত দলের হয়ে খেলেছেন তিনি পেশাদার ফুটবলে।
তবে আর্নির ক্রিকেট ক্যারিয়ার এক টেস্টে থেমে যাবার পেছনে ফুটবলের দোষ দেওয়া হয় খুব কম। ধারণা করা হয়, ১৯৮২ এ বিদ্রোহী ট্যুরে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাবার পর ইংলিশ ক্রিকেট কর্তাদের কুনজরে পড়ে যান তিনি।
- কেন হফ
ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসার নিউজিল্যান্ডের হয়ে মাত্র দুই টেস্টে মাঠে নেমেছেন, ১৯৫৯ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে। দুই ম্যাচে টেস্ট ক্যারিয়ার থেমে গেলেও নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট আর অকল্যান্ডের হয়ে ২৮ ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে মাঠে নেমেছেন তিনি। তবে ফুটবলে তিনি খেলেছেন দুটি জাতীয় দলে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার পর তিনি যোগ দেন নিউজিল্যান্ড ফুটবল দলে। পেশাদার ফুটবলে তিনি খেলতেন গোলকিপার হিসেবে।