ছোট্ট কিশোর ঘর ছেড়েছে, সে দুনিয়া দেখেছে। পরিশেষে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত হয়ে সে আবার বাড়ি ফিরেছে। ক্লান্তি ধকল সয়ে নিয়ে তিনি যেন ঘরের জন্যে কিছু একটা করতে চাইছে। কিন্তু করা হয়ে উঠছে। এর মধ্যে শোনা যাচ্ছে ঘরের কর্তার পরিবর্তন একেবারে সুনিশ্চিত। প্রশ্ন তবে ঘরের ছেলের কি হবে?
এই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মানুষটা হচ্ছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সেই ২০০৩ মৌসুমে পর্তুগাল থেকে তরুণ রোনালদো হাজির হয়েছিলেন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। সেখানেই তো তিনি ক্রমশ হয়ে উঠতে শুরু করলেন ভবিষ্যৎ দিনের তারকা। বিন্দু বিন্দু করে বাড়তে থাকে আবেগের তীব্রতা। সে মায়ার বাঁধন ছিড়ে ২০০৯ সালে তিনি ছাড়লেন ঘর।
এরপর রাজত্ব করলেন স্পেনে, ঘুরে দেখলেন ইতালিও। তবে বয়সটা তো থেমে নেই। বাড়তে থাকা বয়সে যেন বাড়ির প্রতি একটা টান অনুভূত হতে শুরু করল। রোনালদোর বাড়ি তো সেই ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। এই ‘থিয়েটার অব ড্রিম’ তাকে বড় স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিল। তারপরের ইতিহাস আমরা সবাই কমবেশি জানি। সবকিছু ফেলে তিনি আবার ফিরলেন। নিজের চিরচেনা জায়গায়।
আবার গায়ে জড়ালেন কৃষ্ণচূড়া। প্রত্যাশা হয়ত তিনি নিজেও করেছিলেন যে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে তিনি আবার নিজের ক্লাবটাকে ফেরাবেন স্বরুপে। আবারও বলে কয়ে সবাইকে ম্যাচ হারিয়ের একের পর এক শিরোপা ঘরে তুলবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সবার মুখে ক্রমাগত উচ্চারিত হবে ‘ম্যানচেস্টার ইজ রেড’। তবে হায় আফসোস!
ক্লাবটির ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সময়টাই এবার পার করেছে রেড ডেভিলরা। ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে কম পয়েন্ট নিয়ে এবারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ যাত্রা শেষ করেছে। কেবলমাত্র ৫৮টি পয়েন্ট রয়েছে তাদের নামের পাশে। অন্যদিকে এবারের মৌসুমেই সর্বাধিক ৫৬ খানা গোল হজম করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রক্ষণ। এত সব নেতিবাচকতার মাঝে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক যে, কি করলেন তবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো?
আসলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর উপর এই ব্যর্থতার দায় দিয়ে দেওয়া অন্যায়। রক্ষণের বেশ দূর্বলতা ছিল একেবারে চোখে পড়ার মত। তাছাড়া সত্যি বলতে ৩৭ বছর বয়সী রোনালদো আক্রমণ মোটামুটি সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। রোনালদো রেড ডেভিলদের হয়ে এই মৌসুমে সর্বোমোট ৩৮টি ম্যাচ খেলেছেন। এ সময়ে তিনি গোল করেছেন ২৪টি। গোল করিয়েছেন তিনটি।
ম্যানচেস্টার ইউনাটেডের হয়ে ভাল পারফরমেন্সের কারণে তিনি চারবার ইউনাইটেডের মাস সেরা খেলোয়াড় পুরষ্কারও জিতেছেন। তাছাড়া ইউনাইটেডের করা গোলের ৪২% গোলে ছিল রোনালদোর অবদান। যেখানে কেবলমাত্র ব্রুনো ফার্নান্দেজ পার করেছেন দুই সংখ্যা। ব্রুনোর গোল দশটি, তিনি অবশ্য ১৪টি গোল করিয়েছেনও। সুতরাং রোনালদো নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে যাওয়ার চেষ্টা এখনও করে যাচ্ছেন।
এরিক টেন হাগ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নতুন কোচ তিনি নিশ্চয়ই এই পরিসংখ্যানগুলো জানেন। আর তাছাড়া এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি রোনালদোর কাছ থেকে কি প্রত্যাশা করেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাগ স্বলভাষ্য ব্যবহার করলেও স্পষ্ট করেই বলেছেন যে তিনি গোল চান রোনালদোর কাছ থেকে। অতএব রোনালদো হয়ত এই মৌসুমেই ছেড়ে যাচ্ছেন না ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
ছেড়ে যাওয়ারও কথা নয়। রোনালদো ছাড়া ২০২১/২২ মৌসুমে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে মোট আটটি ম্যাচ খেলেছেন রেড ডেভিলরা। যার মধ্যে পাঁচটিতে তারা হেরেছে হার ড্র করেছেন দুইটিতে। একটি ম্যাচ জিতেছিল অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে এফ এ কাপে। তাও আবার মাত্র ১-০ ব্যবধানে। রোনালদো ছাড়া ম্যানচেস্টার যে খুব ভাল করছে তেমনটাও তো বলার সুযোগ নেই। নয়ত বয়স বেড়ে যাওয়া রোনালদো দলের বোঝা বলে দায় চাপানো যেত।
হয়ত এরিক টেন হাগের ট্যাকটিস এবং ফরমেশনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগবে খানিক। তবে রোনালদো এই মুহূর্তে অন্তত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অন্যতম সেরা পারফরমার। তাকে বাদ রেখে পরিকল্পনা সাজানোর ইচ্ছে হয়ত নেই টেন হাগের। তবে সময় বলে দিবে শেষ অবধি বল গড়িয়ে কতদূর যাবে।