শচীনের শেষে প্রশান্তের শুরু

ওয়াংখেড়ে সেদিন কানায় কানায় পূর্ণ। দর্শকদের হৈচৈ-চিৎকার আর করতালির মাঝেই ২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন কিংবদন্তি ভারতীয় তারকা শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। সেই ম্যাচে বল বয় হিসেবে ছিলেন প্রশান্ত সোলাঙ্কি নামের ক্ষুদে এক শিশু।

সেসময় প্রশান্তের বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। ওয়াংখেড়েতে শচীনে বিদায়ী টেস্টে কাজ করেছিলেন বল-বয় হিসেবে। সেখান থেকে উঠে আসেন পেশাদার ক্রিকেটে। এরপর ধীরে ধীরে ২২ বছর বয়সে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মঞ্চে পদার্পণ এই তরুণ লেগ স্পিনারের। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলছেন তিনি।

ওই ম্যাচে শচীনের সাথে অল্প সময়ের জন্য কথাও হয় প্রশান্তের। সেই স্মৃতি মনে করে চেন্নাইয়ের এক ভিডিওতে প্রশান্ত বলছিলেন, ‘আমি ওয়াংখেড়েতে ছিলাম তার (শচীন) ম্যাচ দেখার জন্য। ওনার শেষ ম্যাচে ওয়াঙখেড়েতে আমি বল-বয় হিসেবে ছিলাম। আমি শচীন টেন্ডুলকার স্ট্যান্ডের সামনেই ছিলাম।’

প্রশান্ত আরও বলেছেন, ‘একটা ঘটনা মনে আছে। সে বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করতে আসলো, আমি সেখানে বসে ছিলাম। আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম। সে আমাকে ডাকছিল পানি ও একটু এনার্জি ড্রিংকের জন্য। আমি অবাক চোখে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি একটা শব্দও শুনতে পারিনি সে কি বলছিল কারণ দর্শকরা এত চিৎকার করছিল।’

শচীনকে দূর থেকে দেখছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে সামনে থেকে ডাকায় যেন বেশ হকচকিয়ে যান ১৩ বছর বয়সী প্রশান্ত। তিনি বলেছেন, ‘এরপর সে আমার কাঁধে হাত রাখলো, আমাকে কাছে টানলো এবং বললো আমার জন্য একটা এনার্জি ড্রিংক আনো।’ সেটা ছিল আমার জন্য দিনের সেরা মূহুর্ত। আমার জন্য সেটা একটা স্মরণীয় স্মৃতি।

আইপিএলের পঞ্চদশ আসরের মেগা নিলামে রাজস্থান রয়্যালসের সাথে অনেকটা লড়াই করে ১.২ কোটি রুপিতে প্রশান্ত সোলানকিকে দলে ভেড়ায় চেন্নাই সুপার কিংস।প্রথম ১২ ম্যাচে বেঞ্চে বসেই কাটিয়েছেন তিনি। চেন্নাইয়ের বিদায় ঘন্টা বেজে যাওয়ার পর শেষে এসে সুযোগ পেলেন এই তরুণ লেগ স্পিনার। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে অভিষেক হয় সোলানকির। অভিষেকে উইকেটশূন্য থাকলেও ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দেন তিনি।

এরপর নিজেদের শেষ ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে দেখা পান উইকেটের। এদিনও বেশ ভাল বোলিং করেন এই লেগ স্পিনার। ২ ওভারে ২০ রান দিলেও শিকার করেন শিমরন হেটমায়ার ও যশস্বী জ্যাসওয়ালের উইকেট।

বছর খানেক আগে মুম্বাইয়ের হয়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক হয় সোলাঙ্কির। এরপর চলতি বছরের শুরুতে গোয়ার বিপক্ষে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় এই লেগ স্পিনারের।

গেল আসরে আরব আমিরাতে নেট বোলার হিসেবে চেন্নাইয়ের সাথে ছিলেন প্রশান্ত সোলাঙ্কি। সেখান থেকে বছর ঘুরতে সুযোগ পেয়ে গেলেন ফ্র‍্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসরে খেলার।

মূলত শার্দুল ঠাকুরের হাত ধরেই আইপিএলে আসা সোলাঙ্কির। ঠাকুরের কথাতেই ট্রায়ালে ডাকা হয় প্রশান্তকে। নেটে মহেন্দ্র সিং ধোনি সহ বেশ কয়েকজনকে বল করেন এই লেগ স্পিনার। এরপর গেল আসরে নেট বোলার হিসেবে চেন্নাইয়ের সাথে আরব আমিরাতে পাড়ি দেন তিনি। আর গল্পের বাকিটা? বাকিটা তো স্রেফ ইতিহাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link