জাদেজার হাত ধরে চেন্নাইয়ের পঞ্চম শিরোপা জয়

রূপকথা বুঝি এভাবেই লেখা থাকে। মোহিত শর্মা যখন শেষ বলটা করার জন্য দৌড় শুরু করলেন তখন চোখ বন্ধই রাখলেন ধোনি। নিজের সম্ভাব্য শেষ আইপিএল ফাইনালটা নিশ্চিত ভাবেই হেরে শেষ করতে চাননি চেন্নাইয়ের প্রিয় ‘থালা’। ধোনিকে হারতে দেয়নি চেন্নাই, দেননি জাদেজা। শেষ দুই বলে ১০ রান নিয়ে চেন্নাইয়ের জয়ের নায়ক রবীন্দ্র জাদেজা।

সাই সুদর্শনের দুর্দান্ত ইনিংসের পর নুর আহমেদ, মোহিত শর্মাদের দারুণ বোলিংয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের পথেই ছিলো গুজরাট। তবে ক্রিকেট বিধাতা শিরোপাটা ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়কের জন্যই লিখে রেখেছিলেন। পঞ্চম আইপিএল শিরোপা জিতলেন চেন্নাইয়ের প্রিয় মাহি।

আহমেদাবাদে ফাইনালের রিজার্ভ ডে তে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ব্যাট করতে নামা গুজরাটকে দারুণ সূচনা এনে দেন অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা শুভমান গিল ও ঋদ্ধিমান সাহা। পাওয়ার প্লেতে ৬৭ রান তোলেন এই দুই ব্যাটার। গত পাঁচ ম্যাচ তিন সেঞ্চুরি হাঁকানো গিল এদিনো শুরুটা করেছিলেন দুর্দান্ত। গত ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন আজকে যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন গিল।

তবে মাহেন্দ্র সিং ধোনির অবিশ্বাস্য রিফ্লেক্সের কাছে থামতে হয় গিল করে।প ২০ বলে সাত চারে ৩৯ রান করে রবীন্দ্র জাদেজার বল ধোনির দারুণ এই স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক গিল।

তবে চেন্নাইয়ের জন্য এদিন অনেকটাই সারপ্রাইজ প্যাকেজ হয়ে আসেন সাই সুদর্শন। গিল আউট হবার পর যেন চেন্নাইয়ের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দিতে থাকেন সুদর্শন। দ্বিতীয় উইকেটে ৪২ বলে ৬৪ রানের জুটি গড়েন সুদর্শন ও ঋদ্ধিমান। ২১ বছর বয়সী সুদর্শনের কাছে যেন অসহায় ছিলো পুরো চেন্নাইয়ের বোলিং লাইনআপ। ৩৩ বলে ফিফটি তুলে নেবার পর যেন আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন তিনি।

তবে নিজের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া হয়নি সুদর্শনের। ৪৭ বলে ছয়টি ছক্কা ও সাতটি চারে ৯৬ রানে পাথিরানার শিকার হন এই তরুণ। অন্যপ্রান্তে ৩৯ বলে ৫৪ রান করে সুদর্শনকে দারুণ সঙ্গ দেন সাহা। শেষদিকে অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার ১২ বলে ২১ রানের ক্যামিওতে ২১৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

২১৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা চেন্নাইয়ের ইনিংসের প্রথম ওভারেই হানা দেয় বৃষ্টি। প্রায় দুই ঘন্টারও বেশি সময় বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকার পর ডাক ওয়ার্থ লুইস মেথডে চেন্নাইয়ের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫ ওভারে ১৭১ রান। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার ঋতুরাজ গায়কোয়াদ ও ডেভন কনওয়ের ব্যাটিংয়ে এই লক্ষ্য বেশ ছোটই মনে হচ্ছিলো।

মাত্র ৩৯ বলে ৭৪ রানের পার্টনারশিপে চেন্নাইকে পঞ্চম শিরোপার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন এই দুই ব্যাটার। তবে গুজরাটকে দারুণ ভাবে ম্যাচে ফেরান আফগান চায়নাম্যান নুর আহমেদ। সপ্তন ওভারে দুই ওপেনারকেই নিজের শিকার বানান নুর। ১৬ বলে ২৬ করে গায়কোয়াদ ও ২৫ বলে ৪৭ রান করে আউট হন কনওয়ে।

তবে চার নম্বরে নেমে ঝড় তোলেন এবারের টুর্নামেন্টে নতুন ভাবে ফিরে আসা আজিঙ্কা রাহানে। ১৩ বলে দুই ছক্কা ও দুই চারে ২৭ রান করেন রাহানে। এরপর আইপিএলে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নামা আম্বাতি রাইডুও আট বলে দুই ছক্কায় ১৯ রানের ক্যামিও খেললে জমে ওঠে ফাইনাল।

তবে পরপর দুই বলে রাইডু ও ধোনিকে ফিরিয়ে গুজরাটকে আবারো ম্যাচে ফেরান মোহিত শর্মা। নিজের সম্ভাব্য শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে প্রথম বলে কোনো রান না করেই আউট হন ধোনি।

এরপরেও চেন্নাই ম্যাচে ছিলো। সেটা সেট ব্যাটার শিভম দুবে উইকেটে থাকার জন্য। কিন্তু ম্যাচটা জেতালেন রবীন্দ্র জাদেজা। শেষ দুই বলে যখন দশ রান দরকার তখন গুজরাটকেই ফেভারিট মানতে হতো। কিন্তু শেষ দুইবলে ছক্কা ও চার হাঁকিয়ে চেন্নাইকে পঞ্চম শিরোপা এনে দেন জাদেজা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link