Social Media

Light
Dark

কিলার হয়ে মিলারের ফেরা

নামের আগে ‘কিলার’ তকমা। কিলার মানেই তো খুনি। হ্যাঁ, ক্রিকেট মাঠে নিয়মিত প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর খুনে মেজাজে ব্যাট করাটা তাঁর স্বভাব। তবে সেটা মোটেও ঠান্ডা মাথায় নয়, তিনি ক্রিকেট পাড়ার গরম মেজাজের এক খুনি। মিলারের সাথে কিলার নামটার সার্থকতা তিনি সবসময়ই প্রমাণ করে আসছেন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর খুনে মেজাজে প্রতিপক্ষ নাস্তানাবুদ হয়েছে বহুবার।

সবশেষ তাঁর শিকার চেন্নাই সুপার কিংস। অথচ, এই মিলারই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নিলামের প্রথম দিন ছিলেন অবিক্রিত। দ্বিতীয়দিন অনেকটা নামমাত্র দামেই তাঁকে দলে নেয় গুজরাট টাইটান্স।

পুনের তীব্র গরমে অতিষ্ট সবাই। এই দাবদাহে একটা ঝড়ই যেন বয়ে আনতে পারে স্বস্তি। পুনেতে ঝড়টা ঠিক এসেছে তবে আকাশ চিরে বৃষ্টি রূপে নয়; সেটা ডেভিড মিলারের ব্যাটে। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে গেল রাতে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়েছেন মিলার। এর অধিকাংশটাই গেছে পেসার ক্রিস জর্ডানের উপর দিয়ে।

চেন্নাইর দেওয়া ১৭১ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গুজরাট। ৮৭ রানেই নেই দলের ৫ উইকেট। এরপরই মিলারের টর্নেডো ইনিংস। ৫১ বলে ৬ ছক্কা আর ৮ চার। ব্যাস ম্যাচ শেষ। হারের মুখ থেকে মিলারের বিধ্বংসী ইনিংসে শেষ পর্যন্ত এক বল বাকি থাকতে তিন উইকেটের দুর্দান্ত জয় পায় গুজরাট। অধিনায়ক হিসেবে আইপিএল ক্যারিয়ারে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ২১ বলে ৪০ রানের ক্যামিও অবশ্য দলের জয়ে অনেকটা বড় অবদান রাখেন রশিদ খান।

লোয়ার অর্ডারে মিলারের বিধ্বংসী রূপটা সবারই জানা। দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে কিংবা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) – ফিনিশিংয়ে মিলার থাকা মানেই ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংস। ক্লিন হিটে বলকে সীমানা ছাড়া করাটা রীতিমতো মিলারের এক অভ্যাস। তবুও আইপিএলে গেল কয়েক আসর ধরেই তিনি ছিলেন অনেকটাই উপেক্ষিত। তবে সেই উপেক্ষার কাল ছায়া সরিয়ে এবারের আসরে বিধ্বংসী রূপে দেখা গেছে এই প্রোটিয়া তারকাকে।

২০১৬ সালের পর থেকে আইপিএলে দল পেলেও তিন ছিলেন অনিয়মিত এক মুখ। খেলেছেন ব্যাকআপ খেলোয়াড় হিসেবেই! বেঞ্চে কাটিয়েছেন মৌসুমের বেশিরভাগ ম্যাচেই। ২০১৭ আসরে ৫ ও ২০১৮ আসরে খেলেন মাত্র তিন ম্যাচে। অবশ্য রাজস্থান রয়্যালসে তারকাদের ভীড়ে টিম কম্বিনেশনের কারণে জায়গা হয়নি মিলারের। দূর্ভাগা মানতেই পারেন নিজেকে। মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার অর্ডারে খেললেও মূলত দলের ফিনিশিংয় ভূমিকায় বিবেচনা করা হয় এই প্রোটিয়া তারকাকে।

মিডল অর্ডারে বিদেশি কোটায় অলরাউন্ডার খেলানোয় স্রেফ ব্যাটার হওয়ায় তাই কপাল পুড়ে মিলারের। ভাগ্যকে মেনে নিয়ে অপেক্ষা করেছেন সুযোগের। গেল দুই আসরে অবশ্য রাজস্থানের তারকা অলরাউন্ডার বেন স্টোকসের ইনজুরিতে অনেক ম্যাচ খেলেছেন মিলার। ২০১৯ আসরে ১০ ও গেল আসরে ম্যাচ পেয়েছিলেন ৯টি। মাঝে ২০২০ সালে কোনো ম্যাচেই সুযোগ পাননি তিনি! যদিও গেল আসরে ব্যাট হাতে চিরচেনা আগ্রাসী মিলারের দেখা মিলেনি।

এবারের আসরে দেখা মিললো সেই খুনে মেজাজের মিলারকে। প্রথম ম্যাচ থেকেই পেয়েছেন একাদশে সুযোগ। আর সেই সুযোগের স্বদ্যব্যবহার করে দলের আস্থার প্রতিদানটা দিচ্ছেন ব্যাট হাতে। এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ১৬১ স্ট্রাইক রেট আর প্রায় ৯৭ গড়ে রান করেছেন ১৯৩! গড় কিংবা স্ট্রাইকরেট দুটোই আকাশচুম্বি।

নিলামের প্রথম দিনে ছিলেন অবিক্রীত। ১ কোটি টাকা ভিত্তিমূল্য থাকলেও কেউই আগ্রহ দেখায়নি ডেভিড মিলারের উপর। নিলামের দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে অবিক্রীত থাকা কিছু তারকা ক্রিকেটারের নাম পুনরায়ন তোলা হল। সেই তালিকায় ছিলেন মিলারও। এবার অবশ্য ডাক উঠলো। রাজস্থান রয়্যালসের সাথে অনেকটা প্রতিযোগিতা করেই মিলারকে দলে ভেড়ায় নব্য দল গুজরাট টাইটান্স। প্রথম দিনে দল না পাওয়া মিলার নিলামের একদম শেষ অংশে বিক্রি হলেন ৩ কোটি রুপিতে।

নিজেকে মিলার ভাগ্যবান মনে করতেই পারেন। এবারের আসরেও তাঁকে দলে ভেড়াতে নিলামে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল রাজস্থান রয়্যালস। পূর্বের অভিজ্ঞতায় এবারও হয়তো বেশিরভাগ ম্যাচে বেঞ্চে থাকতে হত এই প্রোটিয়া তারকাকে। গুজরাটের হয়ে নতুন জার্সিতে যেন আবার প্রাণ ফিরে পেলেন এই বিধ্বংসী তারকা।

চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে তাণ্ডবময় ইনিংসে ‘কিলার মিলার’ নামটা যেন আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিলেন ক্রিকেট বিশ্বকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link