সাধারণত ঘরোয়া পর্যায়ে খেলা কোন ক্রিকেটারের চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামা। খেলোয়াড়ি জীবনের এ ধাপটি প্রায়শই অত্যন্ত কঠিন বলে প্রমাণিত। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার সুযোগ তৈরি করে নেয়াটা যত না কঠিন তার চেয়ে বেশি কঠিন সেখানে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করে টিকে থাকাটা।
সেজন্য ঘরোয়া লিগগুলোতে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে পারফর্ম করে জাতীয় দলে গিয়ে খেই হারানো ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। আজ আমরা এমন কয়েকটি যুগলের সাথে পরিচিত হতে যাচ্ছি যাদের জাতীয় দলের হয়ে একই ম্যাচ বা সিরিজে অভিষেক ঘটলেও সময়ের সাথে তা বিপরীতমুখী রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটেও ঘটেছে এমন কয়েকটা ঘটনা। যেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সেই গানটার মত – তোমার ও পথ আলোয় ভরানো জানি আমার এ পথ আঁধারেতে আছে ঢেকে।
- সাকিব আল হাসান ও ফরহাদ রেজা
২০০৬ সালে প্রথমবারের মত জাতীয় দলের হয়ে খেলতে জিম্বাবুয়ের উদ্দেশ্যে বিমানে চড়েন সাকিব আল হাসান ও ফরহাদ রেজা। সেসময় এ দু’জনকে দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তরুণ প্রতিভা হিসেবে ভাবা হতো।
যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ ফরহাদ রেজা। দেশের হয়ে মোট ৩৪ টি ওয়ানডে ও ৮ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন এই অলরাউন্ডার যেখানে উল্লেখ করার মত তেমন কোন পারফরম্যান্স নেই তাঁর।
জিম্বাবুয়েতে রেজার অভিষেকের দুই ম্যাচ পর অভিষেক ঘটে সাকিব আল হাসানের। সেখান থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। নিজেকে নিয়ে দাঁড় করিয়েছেন বিশ্বসেরার মঞ্চে।
একসময় ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে তিন সংস্করণে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হবার গৌরব অর্জন করেন তিনি। তাছাড়া দুই দফায় জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার পাশাপাশি ঘরোয়া বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক হিসেবে একটি শিরোপাও জিতেন সাকিব আল হাসান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় পারফরমার ফরহাদ। জাতীয় লিগ, প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ, বিসিএল কিংবা বিপিএল – সব জায়গাতেই দারুণ সব ইনিংস আর বোলিং স্পেল আছে তাঁর।
- মাশরাফি বিন মুর্তজা ও ফাহিম মুনতাসির সুমিত
তর্কসাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ওয়ানডে অভিষেক ঘটে ২০০১ সালে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সে ম্যাচে অভিষেক ঘটে ডানহাতি অফস্পিনার ফাহিম মুনতাসির সুমিতেরও। তবে তাঁর এ যাত্রা মোটেও দীর্ঘায়িত হয়নি। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে কেবল তিন টি টেস্ট ও তিন টি ওয়ানডে খেলেই শেষ হয়ে যায় সুমিতের ক্যারিয়ার।
অন্যদিকে দলের পেস বিভাগকে নেতৃত্ব দিতে দিতে একসময় দলের নেতৃত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন মাশরাফি। তাঁর নেতৃত্বে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ও ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সেমিফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। সদ্য অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়া মাশরাফি সাফল্যের দিক দিয়ে ছাপিয়ে গেছেন বাংলাদেশের অন্য যেকোন অধিনায়ককে।
তাঁর নেতৃত্বে খেলা ৮৮টি ওয়ানডের মধ্যে ৫০ টিতেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে আসা মাশরাফি বর্তমানে ওয়ানডেতে বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে সুমিত ঘরোয়া ক্রিকেটই ছেড়ে দিয়েছেন অনেকদিন হতে চললো। সর্বশেষ ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন সেই ২০০৭ সালে। এখন তিনি ব্যস্ত খেলাধুলার সামগ্রীর ব্যবসা-বানিজ্য নিয়ে।