দৃশ্য ১
১৯৯১ সালের ১৩ নভেম্বর। ডেনমার্কের ওডেনসে স্টেডিয়াম। কিছুক্ষন আগে শেষ হয়েছে ১৯৯২ ইউরোর যোগ্যতা অর্জনের জন্য গ্রুপ-৪ এর শেষ ম্যাচ ডের খেলা । কিন্তু স্টেডিয়ামে যেন শ্মশানের স্তব্ধতা। মাথা নিচু করে ফিরে যাচ্ছে হতাশ দর্শকরা । মাঠের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, হতাশ ড্যানিশ ফুটবলাররা। স্মাইকেলস, পোভেলসেন, হেনরিক লারসেন, লার্স ওলসেনদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন ড্যানিশ কোচ রিচার্ড মোলার নিয়েলসন। কিন্তু এমনটা তো হবার কথা নয়।
ডেনমার্ক কি হেরে গেছে নিজেদের ঘরের মাঠে? কিন্তু স্কোর বোর্ড তো অন্য কথা বলছে। তখনও স্কোর বোর্ডে জ্বল জ্বল করছে ডেনমার্ক-২ , উত্তর আয়ারল্যান্ড -১। তাহলে কেন এই হতাশা ? আসলে সুইডেনের অনুষ্ঠিতব্য ১৯৯২ ইউরোর মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করতে হলে এই ম্যাচে শুধু জিতলেই হতো না ডেনিশ দের। তাকিয়ে থাকতে হতো সুদূর অস্ট্রিয়ায়, যেখানে যুগোস্লাভিয়াকে হারতেই হতো অস্ট্রিয়ার কাছে।
তাই নিজেদের ঘরের মাঠে ডেনমার্ক, উত্তর আয়ারল্যান্ডকে হারালেও শিবরাত্রির সলতের মতো জ্বলতে থাকা শেষ আসাটি কিন্তু নিভে গেছিলো খেলার শেষে, যখন খবর এসে পৌঁছায় ঘরের মাঠেও অস্ট্রিয়া হেরে গেছে দুর্ধর্ষ ফর্মে থাকা যুগোস্লাভদের কাছে। তাই গ্রূপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইউরোর মূলপর্বে স্থান করে নিয়েছে যুগোস্লাভিয়া , আর ডেনমার্ক, গ্রূপ রানার্স হয়েও ১৯৯২ ইউরোর মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই ম্যাচ জিতেও হতাশায় নিমজ্জিত সারা ডেনমার্ক।
দৃশ্য ২
২৬ জুন, ১৯৯২। সুইডেনের উল্লেভি স্টেডিয়াম। কিছুক্ষন আগে শেষ হয়েছে ১৯৯২ ইউরোর ফাইনাল ম্যাচ। কিন্তু মাঠে তখনও উল্লসিত ডেনমার্ক দর্শকদের ফিরে যাবার নাম নেই। মাঠের মধ্যে বাধনহারা আনন্দে , উল্লাসে নেচে চলেছেন আত্মহারা ডেনিশ ফুটবলাররা।স্মাইকেলস , পোভেলসেন , হেনরিক লারসেন , লার্স ওলসেনদের ইউরো কাপ হাতে ভিক্টরি ল্যাপ তখনও শেষ হয়নি। ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে ড্যানিশ কোচ রিচার্ড মোলার নিয়েলসন। মুখে আত্মতৃপ্তির হাসি।তখনও স্কোর বোর্ডে জ্বল জ্বল করছে ডেনমার্ক-২ , জার্মানি -০। ১৯৯২ সালের ইউরো কাপ জিতে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে ডেনমার্ক ফুটবল দল।
কিন্তু কিভাবে সম্ভব হল এই অসম্ভব কাহিনী। মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে কি এমন হলো যাতে যে দলটি ইউরোর মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জনেই অসফল হয়েছিল, তাদের হাতেই উঠলো চ্যাম্পিয়নের খেতাব। কি ভাবে বাস্তব হলো এই রূপকথার গল্প? তিন পর্বে বিভক্ত এই গল্পের গোড়া থেকে জানতে হলে ফিরে যেতে হবে আরও কিছু সময় পিছনে।
প্রথম পর্ব
আটের দশকের মাঝামাঝি সময়ের সেই দুর্ধর্ষ , বিস্ফোরক ডেনমার্ক দল, যারা ফুটবল মহলে ‘ড্যানিশ ডিনামাইট’ নামেই পরিচিত ছিল , নয় দশক শুরুর বছর দুয়েক আগে থেকেই ধীরে ধীরে তাদের তেজ হারাতে থাকে। মর্টেন ওলসেন, প্রেবেন এলকেয়ার লারসেন, সোরেন লারবি, জেসপার ওলসেনদের মতো ডেনমার্কের সেই সোনালী প্রজন্মের একাধিক প্রতিনিধি একে একে ফুটবল বুটজোড়া তুলে রাখলে ডেনমার্ক দলে সৃষ্টি হয় এক শূন্যতা ও অসামঞ্জস্যতা।
যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পরে খেলার ফলাফলে। নতুন প্রতিভা উঠেও আসছিলো না সেভাবে , যারা পূরণ করতে পারে সেই সব কিংবদন্তি ফুটবললারদের অভাব। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে সারা জাগানো ডেনিস ডিনামাইটরা ১৯৯০ বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জনেই ব্যর্থ হয়। এরপরেই ড্যানিশ জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া হয় রিচার্ড মোলার নিয়েলসনের হাতে। ডেনমার্ক ফুটবলের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
কিন্তু, তার কঠোর হাতে দল পরিচালনা ও অতি রক্ষণাত্মক ফুটবল প্রথমথেকেই ভালো ভাবে নিতে পারেননি কিছু তারকা ফুটবলার। তাই ১৯৯১ সালের শুরুর দিকে , ইউরোর যোগ্যতা অর্জনের গ্রূপ পর্যায়ের খেলার মাঝপথেই বিদ্রোহ করে বসলেন সেই সময়ের ডেনমার্ক দলের মহাতারকা , সেই সোনালী প্রজন্মের একমাত্র টিকে থাকা প্রতিনিধি মাইকেল লাড্র্যাপ।
কোচের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন তিনি , তার পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন তারই ছোট ভাই আরেক উঠতি তারকা ব্রায়ান লাড্র্যাপ ও নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার জ্যাঁ মোলবী । সংবাদমাধ্যমও পক্ষ নেয় মহাতারকা মাইকেল লাড্রাপের। তারা লেখেন, মাইকেল লাড্রাপের মত মহাতারকাকে সামলানোর যোগ্যতা নেই এককালে ডেনমার্কের হয়ে গোটা তিনেক ম্যাচে খেলা কোচ নিয়েলসেনের। দমে যাননি কোচ , ভাঙা চোরা দল নিয়েই বাকি ম্যাচ খেলে ডেনমার্ক , এবং অল্পের জন্য ইউরো মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
দ্বিতীয় পর্ব
এই পর্বটি পুরোটাই রাজনৈতিক এবং এর সাথে ডেনমার্কের কোনো সরাসরি যোগাযোগ নেই। ১৯৯১ সাল থেকেই রাজনৈতিকভাবে অশান্ত হয়ে উঠতে থাকে যুগোস্লাভিয়া। রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে একে একে গৃহযুদ্ধে অবতীর্ণ হয় যুগোস্লাভিয়ার শাসনাধীন স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া অঞ্চল। ইতিহাসে এই যুদ্ধ যুগোস্লাভিয়া যুদ্ধ নামেই পরিচিত। চূড়ান্ত সামরিক পরিমণ্ডলে ফুটবল সরে যায় পিছনের সারিতে।
অবশেষে ১৯৯২ সালের ৩১ মে , ফিফা ও উয়েফা একযোগে সব রকম প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল থেকে বহিস্কার করে যুগোস্লাভিয়া ফুটবল দলকে। দুর্ধর্ষ ফর্মে থাকা যুগোস্লাভিয়া বঞ্চিত হয় ১৯৯২ ইউরোর মূলপর্বে খেলা থেকে। উয়েফা যখন যুগোস্লাভিয়াকে বহিস্কার করে, ১৯৯২ ইউরোতে তাদের পরিবর্তে সেই গ্রূপের রানার্স দল ডেনমার্ককে খেলার সুযোগ করে দেয় , ইউরো -১৯৯২ শুরু হতে তখন মাত্র দিন দশেক বাকি।
তৃতীয় পর্ব
পরে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো হঠাৎ করে ইউরোর মূলপর্বে খেলার সুযোগ যখন ডেনমার্ক পেলো , তখন তাদের ফুটবলাররা অধিকাংশই ক্লাব মৌসুম শেষ করে লম্বা ছুটির আমেজে। ইউরোর মূলপর্বে যেহেতু তারা ছিলোনা তখনও , অনেক ফুটবলারই সেই হতাশা কাটাতে সপরিবারে ছুটি কাটাতে ব্যস্ত ছিল , আবার অনেকে বুকে পাথর রেখে টিভির পর্দায় ইউরো দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। হঠাৎই মূলপর্বের ছাড়পত্র পেয়ে কোচ নিয়েলসেন জরুরি তলব করলেন সব ফুটবলারদের। আহবান জানালেন বিদ্রোহী ফুটবলারদেরও।
দেশের সম্মানরক্ষার্থে সব কিছু ভুলে এক হয়ে মাঠে নামতে ডাক দিলেন তিনি । মাঝপথে ছুটি মুলতুবি করে আবাসিক ক্যাম্পে যোগ দেয় সব ফুটবলাররা , এমনকি বিদ্রোহী ছোট লাড্র্যাপ ব্রায়ান ও জ্যাঁ মোলবীও। কিন্তু মহাতারকা মাইকেল লাড্র্যাপ তখনও অনড়। মাইকেল বিবৃতি দিয়ে জানালেন তিনি এই কোচের অধীনে দেশের হয়ে খেলতে ইচ্ছুক নন, কারণ তিনি জানেন এই ডেনমার্ক দলের পক্ষে লোক হাসানো ছাড়া আর ভালো কিছু করা সম্ভব নয় ইউরোর মতো বড় আসরে। মাইকেল লাড্র্যাপকে ছাড়াই , ডেনমার্ক এসে পৌঁছায় সুইডেনে , মূলপর্বের ইউরো খেলতে। বিশ্বের ফুটবল বিশেষজ্ঞরাও কোনো গুরুত্ব দেন নি ডেনমার্ককে।
একে সেই ‘ড্যানিশ ডিনামাইট’ এখন ন্যাতানো অবস্থা , তার উপরে একমাত্র তারকা মাইকেল লাড্র্যাপও অনুপস্থিত। ‘বিড়ালের কপালে সিকে ছেঁড়ার’ মতো হঠাৎ সুযোগ পেয়ে কোনোরকমে দল গড়ে খেলতে এসেছে। গ্রূপ পর্ব থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া তো অসম্ভবই , সব ম্যাচেই হারা উচিত ডেনিশ দের , এমনি ধারণা করলেন বিশেষজ্ঞ থেকে জুয়াড়ি সকলেই। তাই ইউরোর গ্রূপ -১ এ আয়োজক সুইডেন , ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স এর সাথে যখন ডেনমার্ককে রাখা হয় , সেই গ্রূপ থেকে সেমিফাইনালে ওঠার প্রধান দুই দাবিদার হিসাবে ফ্রান্স ও ইংলান্ডকেই বেছে নেন সবাই।
১১ জুন , প্রথম ম্যাচ খেলতে নাম ডেনমার্ক , প্রতিপক্ষ দু’বছর আগের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড। চূড়ান্ত রক্ষণাত্মক খেলে এবং উঠতি প্রতিভা পিটার স্মাইকেলেসের অসাধারণ গোলকিপিংয়ে ভর করে গোলশূণ্য ভাবে ম্যাচ শেষ করে ডেনমার্ক। ডেনমার্কের এই অতিরক্ষণাত্মক নেতিবাচক ফুটবল ভীষণ ভাবে সমালোচিত হয় সারা বিশ্বে, এমনকি খোদ ডেনমার্কেও।
১৪ জুন দ্বিতীয় ম্যাচে সুইডেনের বিরুদ্ধে আবারো সেই চূড়ান্ত রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেও , শেষরক্ষা করতে পারলো না তারা। টমাস ব্রোলিনের একমাত্র গোলে পরাজিত হয় ডেনমার্ক। দেশে তখন মাইকেল লাড্র্যাপ ও তার অনুগামীরা কোচের মুণ্ডপাত করছেন। ইউরোপের ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলতে লাগলেন, কোথায় সেই আটের দশকের বিষ্ফোরক আক্রমণাত্মক ডেনমার্ক, যাদের তুলনা করা হতো ডিনামাইটের সাথে । এই ডেনমার্কের সাথে তো তুলনা চলে ভিজা ও নেতানো ডিনামাইটের।
দুই ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট সংগ্রহ করে ১৭ জুন তারা খেলতে নামে মিশেল প্লাতিনির কোচিংয়ে খেলতে আসা তারকা খচিত ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। ফ্রান্সের জয়ের বিশয়ে কারো কোনো সন্দেহ ছিলোনা শুরু থেকেই। ডেনমার্কও শুরু করে সেই চূড়ান্ত রক্ষণাত্মক ফুটবল। ডিনামাইটে যেন সত্যি জল ঢেলে দেওয়া হয়েছে। খেলার শুরু থেকেই ফরাসি তারকা স্ট্রাইকার জুটি , জ্যাঁ পিয়েরে পোঁপা আর এরিক ক্যাঁটোনা ঝড়ের মতো আক্রমণ করতে থাকে ডেনমার্কের গোলে। কিন্তু প্রাচীর হয়ে দাঁড়ানো স্মাইকেলসের কাছে এসে প্রতিহত হতে লাগলো সব আক্রমণই।
জেতার জন্য শুরু থেকেই মরিয়া হয়ে অল আউট আক্রমণে যেতে থাকে প্লাতিনির দল। কিন্তু হঠাৎই প্রতিআক্রমণে বল পেয়ে ডেনমার্ককে এগিয়ে দেন হেনরিক লারসেন। জ্যাঁ পিয়েরে পোঁপা ৬০ তম মিনিটে গোল শোধ করলেও , সুপার সাব এলস্ট্রুপ, আরেকটি প্রতি আক্রমণ থেকে গোল করে আবার এগিয়ে দেয় ডেনমার্ককে। খেলা শেষ হতে তখন মাত্র ১২ মিনিট বাকি। ইউরোর সবথেকে বড় অঘটন ঘটিয়ে প্লাতিনির ফ্রান্সকে গ্রূপ পর্যায় থেকেই বিদায় করে, ‘ন্যাতানো ডিনামাইট’ ডেনমার্ক সেমিফাইনালে জায়গা করে নিলো সবাইকে অবাক করে দিয়ে। দেশে মহাতারকা মুখে কুলুপ আঁটলেন।
সেমিফাইনালে ইউরোর সবথেকে শক্তিশালী দল , আগের ইউরোর চ্যাম্পিয়ন ,গুলীত-বাস্তেন – রাইকার্ডের হল্যান্ডের মুখোমুখি ডেনমার্ক। ফ্রান্স বা ইংল্যান্ডের মতো দল গ্রূপ পর্যায় থেকেই বিদায় নেওয়ায় হল্যান্ড অনেকটাই যেন চাপমুক্ত। গ্রূপ পর্যায় তারা কদিন আগেই হেলায় ৩-১ গোলে হারিয়ে এসেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে। ১৯৯০ বিশ্বকাপের অপ্রত্যাশিত ব্যর্থতার হতাশা ঝেড়ে ফেলে, কমলা ব্রিগেড যেন ইউরো জেতার জন্য মরিয়া। ডেনমার্ককে ধর্তব্যের মধ্যেই না রেখে , হালকা মেজাজেই সেমিফাইনাল খেলতে নামলো গুলিতের দল। খেসারত ও দিতে হলো তাঁর।
খেলার শুরুতেই হেনরিক লারসেন এগিয়ে দেয় ডেনমার্ককে।হোশ ফেরে হল্যান্ডের। খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো আক্রমণে যায় তারা। উঠতি প্রতিভা তরুন স্ট্রাইকার ডেনিস বার্গক্যাম্প গোল শোধ করেন ২৩ মিনিটে , কিন্তু হেনরিক লারসেন আবার এগিয়ে দেন ডেনমার্ককে ৩৩ তম মিনিটে। এরপরেই ডিফেন্স তালা ঝুলিয়েদেন কোচ নিয়েলসেন। গুলীত -বাস্তেন – বার্গক্যাম্পদের একের পর এক আক্রমণ আটকে যেতে থাকে ডেনিস ডিফেন্সে এসে। আবারো অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন স্মাইকেলস।
কিন্তু, শেষ রক্ষা হলো না , খেলা শেষের বাঁশি বাজার মিনিট চারেক আগে সমতা ফেরান রাইকার্ড। এরপর অতিরিক্ত সময়ও গোলশূণ্য থাকার পর , সেই টাইব্রেকার। আর টাইব্রেকারে মহা তারকা মার্কো ভ্যান বাস্তেনের শট আটকে মহানায়ক হয়ে ওঠা স্মাইকেলসের হাত ধরে ডেনমার্ক পৌঁছে যায় ইউরোর ফাইনালে। মহাতারকার কোনো প্রতিক্রিয়া চেয়েও পাননি ড্যানিশ সাংবাদিকরা।
ফাইনালে প্রতিপক্ষ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। নিখুঁত তেল দেওয়া মেশিনের মতো আবেগহীন ফুটবল খেলে জার্মান দল ইউরোর ফাইনালে উঠে এসেছে। সব প্রতিপক্ষই তাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।তাই অঘটনঘটিয়ে হল্যান্ডের পরিবর্তে ডেনমার্ক ফাইনালে উঠলেও, জার্মানরা এক ইঞ্চিও ঢিলে দেবার পক্ষপাতি ছিলোনা। ফাইনালের ফেভারিট ও ছিল জার্মান রাই। কিন্তু ডেনমার্ক যেন সেবার সব হিসাব উলোট পালট করার জন্যই সুইডেনে ইউরো খেলতে এসেছিলো।
খেলার ১৮ তম মিনিটে জন জেনসেন আর ৭৮ তম মিনিটে কিম ভিলফোর্ট দুটি গোল করে জয় সুনিশ্চিত করে ড্যানিশ দের। সারা বিশ্ব স্তম্ভিত ডেনিসদের সেই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনে। আর সারা ডেনমার্ক যেন উল্লাসে ফেটে পড়েছে। রাতারাতি মহানায়ক হয়ে উঠলেন কোচ নিয়েলসন সহ ফুটবলার স্মাইকেলস , ব্রায়ান লাড্র্যাপ, হেনরিক লারসেনরা। মহাতারকার খোঁজ নেবার সময় তখন কারো কাছে নেই।
অধিনায়কের যে আর্ম ব্যান্ড খুলে ফেলে দিয়ে দল ছেড়েছিলেন মহাতারকা, সেই আর্ম ব্যান্ড হাতে পরে ইউরো কাপ তুলে নিলেন লার্স ওলসেন । যে কোচের সমালোচনায় মুখর ছিলেন মহাতারকা, যার ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল সংবাদমাধ্যম, তিনি ডেনমার্ককে শুধুমাত্র ইউরোই নয়, চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপও।
এক মহাতারকার বিনিময়ে ডেনমার্কের ফুটবল পেয়ে গেল এগারো জন দেশের জন্য জান লড়িয়ে দেওয়া তারকা।আসলে দেশের সংবাদমাধ্যম, ইউরোপের ফুটবল বিশেষজ্ঞ এমনকি প্রাক্তন মহাতারকা সতীর্থের ক্রমাগত সমালোচনা ও বিদ্রুপ তাতিয়ে দিয়েছিল তাদের । আর এই তাতানোর ফলেই বিষ্ফোরক হয়ে উঠেছিল ‘ভেজা ডিনামাইট’ ডেনমার্কের সেই ফুটবল দল, যে বিষ্ফোরণে কেঁপে ওঠে সারা ইউরোপ ।