ডেনিশ রূপকথার আরেক ছত্র

কোয়ার্টার ফাইনালের দুই অপ্রত্যাশিত দল মুখোমুখি হয়েছিল এদিন আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে। সেই লড়াইয়ে প্রথম দুই ম্যাচ হার দিয়ে শুরু করা ডেনমার্ক ২-১ গোলে চেক প্রজাতন্ত্রকে হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছে শেষ চারে।

টমাস ডেলাইনি ও ক্যাসপার ডলবার্গের গোলে পিছিয়ে পড়ার পর প্যাট্রিক শিক এক গোল ফিরিয়ে দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। নিজেদের রক্ষণ অটুট রেখে শেষ চারে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করেছেন সিমোন কায়েররা। ১৯৯২ সালে পুরো ফুটবলবিশ্বকে চমকে দিয়ে ইউরোর শিরোপা জিতে নিয়েছিল স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটি। এবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তির পথেই এগিয়ে যাচ্ছে দলটি।

সতীর্থ ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের হৃদয়বিদারক ঘটনার পর ডেনমার্কের কাছে ফুটবলটা হয়ে গেছে আবেগের, ভালোবাসার। টুর্নামেন্টটা তারা খেলছে এরিকসেনের জন্য। দলগত ফুটবলের দারুণ প্রদর্শনী দেখিয়ে তারা প্রথম দুই ম্যাচের ধাক্কা সামলে উঠে গেছে সেমিফাইনালে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওয়েলশকে বিধ্বস্ত করার পর এদিন তাদের শিকার চেক রিপাবলিক।

এবারের ইউরোতে ফুটবল দেখেছে অনেক নতুন তারকার আর্বিভাব। ডেনমার্কের লেফট উইংব্যাক জোয়াকিম ম্যাহলের কথাই ধরুন না, ইউরোর আগে তাকে চিনতেন কজন। কিন্তু ইউরোতে তার দারুণ পারফরম্যান্সের সুবাদে এর মাঝেই তাকে দলে ভেড়ানোর আগ্রহ জানিয়েছে বর্তমান ইউসিএল চ্যাম্পিয়ন এবং ইংলিশ জায়ান্ট চেলসি।

এদিনও দর্শকদের বিমোহিত করেছেন নিজের পায়ের জাদুতে, দ্বিতীয় গোলে বুটের বাইরের দিক ব্যবহার ডলবার্গকে যেভাবে বাড়ালেন, সেই পাসটা দর্শকদের চোখে লেগে থাকবে অনেকদিন। পাশাপাশি ডি বক্সের বাইরে থেকে নেয়া তার বুলেটগতির শট ভীতি জাগিয়েছে প্রতিপক্ষের মনে, টুর্নামেন্টে এর মাঝেই নিজের নামে পাশে লেখা আছে দুই গোল।

নকআউট পর্বে ডেনিশ রূপকথার আরেক নায়ক ক্যাসপার ডলবার্গ। ২৩ বছরের এই তরুণের একাদশে থাকারই কথা ছিল না, ওয়েলশের বিপক্ষে পৌলসেনের অনুপস্থিতিতে দলে সুযোগ পান। সুযোগ পেয়েই বাজিমাত, জোড়া গোল করে জানিয়েছেন প্রথম একাদশে থাকার দাবি। ডেনমার্ক কোচ হাজুলমান্ডও হতাশ করেননি তাকে, পৌলসেনকে এদিন বেঞ্চে রেখে ভরসা রেখেছেন তার উপরই। সেই আস্থার প্রতিদান কি দারুণভাবে দিলেন তিনি, এক গোলে পিছিয়ে থাকা চেকরা যখন আক্রমণের ঝড় তুলছে ডেনমার্কের বক্সে ঠিক তখনই গোলে তাদের ম্যাচে ফেরার পথ বন্ধ করে দেন এই স্ট্রাইকার।

কোনো কোনো পরাজয়ে লজ্জা থাকে না, বরং থাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। ২০০৪ সালের সেই স্বপ্নযাত্রার পর আবারো সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখছিল চেকরা। সেবারের যাত্রায় মিলান বারোস করেছিলেন পাঁচ গোল, আজকের ম্যাচে গোল করে তার পাশে বসলেন প্যাট্রিক শিক। কিন্তু বারোস পারলেও শিক পারলেন না দলকে সেমিতে তুলতে। ৫ গোল করে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন এই চেক তরুণ।

পুরো টুর্নামেন্টে দলকে একাই টেনেছেন, এদিনও করেছেন প্রাণান্তকর চেষ্টা। কিন্তু ভাগ্যকে পাশে পাননি। তবে আজকের ম্যাচে চেকদের সেরা খেলোয়াড় ছিলে টমাস সুসেক। মাথায় আঘাত পেয়ে রক্ত ঝড়লেও মাঠ ছাড়েননি, লড়ে গেছেন পুরোটা সময়। কিন্তু তাতেওশেষ রক্ষা হয়নি তার দলের।

সেমিফাইনালে ওয়েম্বলিতে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ডেনমার্ক। স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে ডেনিশ রূপকথার গল্প কি অব্যাহত থাকবে সেটা জানার অপেক্ষা কেবল বুধবারের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link