দারুণ রূপকথার করুণ সমাপ্তি

১৯৯২ ইউরো রূপকথার পুনরাবৃত্তি করা হলো না ডেনমার্কের। ওয়েম্বলিতে অতিরিক্ত সময়ে হ্যারি কেইনের পেনাল্টির সুবাদে ২-১ গোলে জিতে ফাইনালে ইংল্যান্ড। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোর ফাইনালে উঠলো থ্রি লায়ন্সরা।

আধুনিক ফুটবলের জন্ম ইংল্যান্ডেই। দুনিয়ার সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ফুটবল লিগ তাদের। অথচ ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ ছাড়া কোনো সাফল্য নেই ইংল্যান্ডের। সভেন গোরান এরিকসেন, গ্রাহাম টেইলর, কেভিন কিগান, ফ্যাবিও ক্যাপেলোরা যা করতে পারেনি সেটাই করে দেখালেন গ্যারেথ সাউথগেট।

গ্যারি লিনেকার-অ্যালান শিয়েরার কিংবা ল্যাম্পার্ড-জেরার্ড-রুনিদের অপূর্ণতা পূরণ করার থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে স্টার্লিং-ম্যাগুয়ার-কেইনরা। অথচ গ্যারেথ সাউথগেটের একাদশ নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। একে খেলাচ্ছেন না, এই ফর্মেশনটা ভালো না পুরোটা সময়জুড়ে এমন অভিযোগ করে গেছে ইংরেজ গণমাধ্যম।

কিন্তু, টুর্নামেন্ট যত সামনে এগিয়েছে ‘ইটস কামিং হোম’ সুরে সবাইকে একতাবদ্ধ করতে বাধ্য করেছেন সাউথগেট। প্রায় ৫৫ বছরের শিরোপা খরা দূর করতে পেরোতে হবে কেবল ইতালি বাঁধা।

টুর্নামেন্টে পুরোটা সময় জুড়ে আলো ছড়িয়েছেন রাহিম স্টার্লিং। বাঁ প্রান্ত কিংবা ডান প্রান্ত কোচ যেখানেই খেলার সুযোগ দিয়েছেন, পারফর্ম করেছেন। সেমিফাইনালের সবটুকু আলোও টেনে নিয়েছেন নিজের দিকে, দুর্দান্ত গতির পাশাপাশি চোখধাঁধানো ড্রিবলিং।

তাকে সামলাতে হিমশিম খেয়েছে ড্যানিশ রক্ষণভাগ।  দুটো গোলেই রেখেছেন নিজের ছাপ, প্রথম গোলে তাকে আটকাতে গিয়ে নিজেদের জালে বল জড়ান সিমোন কায়ের। দ্বিতীয় গোলের মূল উৎস পেনাল্টিও আদায় করেছিলেন তিনি।

অথচ টুর্নামেন্টটা তিনি খেলতে এসেছিলেন পাহাড়সম চাপ নিয়ে। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে হারার পর সমালোচনার শূলে বিদ্ধ হয়েছেন সবার। তাই এই ইউরো ছিল তার জন্য আরেকবার নিজেকে জানান দেবার, সেই কাজটা কি দারুণভাবেই না করলেন তিনি।

এবারের ইউরোতে সবচেয়ে বেশি ঝড়টা গেছে ডেনমার্কের উপর দিয়ে, প্রথম ম্যাচেই অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনায় হারাতে হয় তাদের সেরা তারকা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনকে। জীবন যেখানে সংকটাপন্ন ফুটবল খেলা সেখানে বিলাসিতা। কিন্তু বুকে পাথর বেঁধে খেলেছে ডেনমার্ক, লড়ে গেছে বীরের মতো।

প্রতিটা খেলোয়াড় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন মাঠে। এরিকসেনের বদলে সুযোগ পাওয়া মিকেল ডামসগার্ড চিনিয়েছেন নিজেকে। তার পরিপক্বতা দেখে কে বলবে জাতীয় দলের হয়ে এটাই তার প্রথম টুর্নামেন্ট। গতকালও ডিবক্সের বাইরের থেকে অসাধারণ এক ফ্রি কিকে এগিয়ে নিয়েছিলেন দলকে।

তাঁর ফ্রি কিকটি তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না ইংরেজ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডের, এবারের ইউরোতে প্রথমবারের মতো গোল হজম করে থ্রি লায়ন্সরা। ডেনমার্কের ফুটবল নিয়ে যদি বই লেখা হয় তাহলে তার বড় একটা অংশজুড়েই থাকবে স্মাইকেল পরিবারের কথা। দুই প্রজন্ম ধরে ডেনমার্কের গোলপোস্ট রক্ষা করা দায়িত্ব রয়েছে এই পরিবারের কাঁধেই।

বাবা পিটার স্মাইকেল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা গোলরক্ষকদের একজন, পুত্র ক্যাসপার স্মাইকেলও কি দারুণ ভাবেই অনুসরণ করছেন তাকে। গতকালও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন হ্যারি কেইনের পেনাল্টি কিন্তু বলটা গিয়ে পড়ে কেইনের সামনেই। দুর্ভাগ্য বোধহয় একেই বলে, ফিরতি শটটা ঠেকাতে পারেননি তিনি। সব রূপকথার সমাপ্তি সুখকর হয় না। ডেনমার্কও বিদায় নিলো তাই শিরোপা হতে দুই ধাপ আগেই।

ফাইনালে ইতালির মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড। ‘ইটস কামিং হোম’ নাকি ‘ইটস কামিং টু রোম?’ ইতালির নবজাগরণ কারা জয়ের উল্লাসে মাতবে ওয়েম্বলির সবুজ গালিচায়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link