খেলাধুলার জগতে শুধু যোগ্যতা আর সামর্থ্য থাকলেই চলে না, ভাগ্যের সহায়তাও পেতে হয়। সামর্থ্যের সাথে যথাযথ সুযোগ আর কপালগুণে কেউ কেউ এখানে বড় তারকা হন, আর এর কোনোটার অভাবে অনেকেই পারেন না অমরত্বের ছোয়া।
একাদশে থিতু হতে কি দরকার? বড় ইনিংস? দারুণ কোনো বোলিং কীর্তি? হ্যাঁ, এসব তো দরকারই। তাঁর সাথে অবশ্যই দরকার ভাগ্যের সহায়তা। সেই সহায়তা না পেয়ে অনেকে দাপট দেখানোর ঠিক পরের ম্যাচেই বাদ পড়েছেন। টেস্ট ম্যাচের প্রেক্ষাপটে এমন দুর্ভাগাদের সংখ্যাটা নেহায়েৎ কম নয়।
- জিওফ বয়কট (ইংল্যান্ড)
ইংল্যান্ডের ইতিহাস কাঁপানো ব্যাটসম্যান তিনি, যদিও তিনিও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নিজেকে নিতে পারেননি কোনোদিন। হেডিংলিতে ভারতের বিপক্ষে ১৯৬৭ সালে অপরাজিত এক ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতে ছয় উইকেটে। তবুও, তিনি জায়গা হারান। কেন? কারণ বয়কটের ইনিংসটা ছিল মাত্রাতিরিক্ত স্লথ। ২৪৬ রান করতে ৫৫৫ টি ডেলিভারি খেলেন তিনি।
- করুণ নায়ার (ভারত)
২০১৬ সালের ডিসেম্বর। চেন্নাই টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৩ রানের ইনিংস খেলেন করুণ নায়ার। ভারত জুড়ে বন্দনা হয় তাঁর নামে। অথচ, এরপরই বাংলাদেশ সফরে ভারতের যে একাদশটা খেলতে নামে সেখানে ছিল না করুণ নায়ারের নাম। তিন মাস পরই অবশ্য তিনি সুযোগ পান, এবার আর ভাগ্য সহায় ছিল না। তিন ম্যাচের চার ইনিংসে করেন মোটে ৫৪ রান।
- জেসন গিলেস্পি (অস্ট্রেলিয়া)
তিনি মূলত ফাস্ট বোলার। তবে, কীর্তিটা ছিল ব্যাটসম্যান হিসেবে। ২০০৬ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরে তিনি ২০১ রানের ইনিংস খেলেন। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নেমে তিনি একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে করেন ডাবল সেঞ্চুরি। তবে, বোলিং পারফরম্যান্সের জের ধরে অস্ট্রেলিয়া দল থেকে জায়গা হারান। ভাগ্যের কি নির্মমতা, এরপর আর দলেই ফিরেননি। সেটাই তাঁর শেষ টেস্ট হয়ে রয়েছে!
- আজাজ প্যাটেল (নিউজিল্যান্ড)
মুম্বাই টেস্ট, ২০২১। ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টের এক ইনিংসে সবগুলো উইকেট নিলেন আজাজ প্যাটেল। নিউজিল্যান্ড ম্যাচটায় হারলেও প্যাটেল দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন ১৪ উইকেট। কিন্তু, তাতেও শেষ রক্ষা হল না। নিউজিল্যান্ড সফরে যখন গেছে বাংলাদেশ, তখন টেস্ট দল থেকেই জায়গা হারান প্যাটেল। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিই বা হতে পারে।
- কেভিন পিটারসেন (ইংল্যান্ড)
দক্ষিণ আফ্রিকান বংশদ্ভুত গ্রেট ইংলিশ ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসেন ইংল্যান্ড দল থেকে জায়গা হারান ১৪৯ রানের ইনিংস খেলার পর। সেটা ২০১২ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের কথা। সেবার আসলে ট্রিপল সেঞ্চুরি করলেও জায়গাটা হারাতেই হত পিটারসেনকে। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে স্বদেশি প্রোটিয়া খেলোয়াড়দের সতীর্থ অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস ও কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নামে বিতর্কিত মেসেজ পাঠানোর অভিযোগ ছিল।
- অ্যান্ডি স্যান্ডহ্যাম (ইংল্যান্ড)
তাঁর মত দুর্ভাগা আর কেই বা আছেন! ১৯৩০ সালের কথা। ইংল্যান্ডের দুই কিংবদন্তি ওপেনার জ্যাক হবস আর হারবার্ট সাটক্লিফ ইনজুরিতে। অ্যান্ডি স্যান্ডহ্যামকে সুযোগ দেওয়া হল। তিনি সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুই ইনিংস মিলিয়ে করলেন ৩৭৫ রান! প্রথম ইনিংসে ৩২৫ রান, পরের ইনিংসে ৫০। তবে, এরপর আর কোনোদিনই টেস্ট খেলারই সুযোগ পাননি স্যান্ডহ্যাম। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা সম্ভবত ক্রিকেট ইতিহাসেই আর খুব বেশি নেই।
- শন মার্শ (অস্ট্রেলিয়া)
শন মার্শও কম দুর্ভাগা নন। তিনি হোবার্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৫ সালে ১৮২ রানের ইনিংস খেলেন। পরের ম্যাচেই বাদ পড়েন। সেই ম্যাচে তাঁর জায়গায় খেলা জো বার্নস ও উসমান খাজা – দু’জনই সেঞ্চুরি করেন। শন মার্শের ফেরার পথ আরো কঠিন হয়ে যায়।