মাঠে নামলেন, গোল করলেন, জানিয়ে দিয়ে গেলেন লিওনেল মেসির উত্তরসূরি হতেই এসেছি। পাওলো দিবালা, আর্জেন্টিনার নতুন ‘নাম্বার টেন’, চিলির বিপক্ষে শেষ ষোল মিনিটে যেন ঝড় তুলে গোটা পৃথিবীকে জানাতে চাইলেন, হারিয়ে যাইনি, দশ নাম্বার জার্সিখানা যোগ্য হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে। আক্রমণ করেছেন, গোলও করেছেন কিন্তু আর্জেন্টিনার সমর্থকদের সবথেকে নিশ্চিন্ত করেছেন বোধয় বাম পায়ের কারিকুরিতেই।
দিবালার ক্যারিয়ারে শুরু থেকেই তুলনা ছিল স্বয়ং লিওনেল মেসির সাথে। বাম পায়ে খেলেন, মেসির মতই মোহনীয় জাদু দেখান, তিনিই তো আর্জেন্টিনার ভবিষ্যৎ হবেন। পালের্মো হয়ে জুভেন্টাস, জুভেন্টাস থেকে রোমা, যেখানেই গিয়েছেন, সাফল্য ধরা দিয়েছে। ভক্তরা আদর করে নাম দিয়েছে ‘লা জোয়া’, যার সরাসরি বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘রত্ন’। আর্জেন্টিনার রত্ন, আর্জেন্টিনার ভবিষ্যৎ।
সীমাহীন চাপের কারণেই কি না কে জানে, আর্জেন্টিনা দলে থিতু হওয়া হয় নি দিবালার। বয়সটা ইতোমধ্যেই পেরিয়ে গেছে ত্রিশ এর কোটা। অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা যদি করতে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের সাথে, জায়গা পাকা না হওয়াই স্বাভাবিক। মেসির জায়গায় ভিন্ন কোন খেলোয়াড়কে খেলোনোর দুঃসাহস করবেন কোন কোচ?
গত ট্রান্সফার উইন্ডোতেই দিবালার জন্য সৌদি প্রো লিগের অফার ছিল, নিশ্চিত ছিল কাড়িকাড়ি টাকা। বিনিময়ে হয়ত হারিয়ে যেতে হত জাতীয় দলের রাডার থেকে। দিবালা ফুটবলকে বেছে নিলেন। এখনও যে প্রমান করার বাকি অনেক কিছুই।
প্রমাণের সুযোগটা এবার চলেই এলো। ডি মারিয়া আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন, লিওনেল মেসিও দলে নেই চোটের কারণে। আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশন ভরসা করেছে দিবালার উপরে। তার হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে গর্বের, সম্মানের, আরাধ্য দশ নাম্বার জার্সি।
প্রথম ম্যাচেই প্রতিদান দিতে ভুল করলেন না ‘লা জোয়া’। ৭৯ মিনিটে লাউতারো মার্টিনেজের বদলী হিসেবে মাঠে নেমেই, ম্যারম্যারে ম্যাচে প্রাণ ফিরিয়েছেন। খেলেছেন, খেলিয়েছেন, বাঁ-পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করেছেন সমর্থকদের। ৯১ মিনিটে পারফর্ম্যান্সের পূর্ণতা দিয়েছেন বাঁ-পায়ের দর্শনীয় গোলে।
লিওনেল মেসি তার ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে পৌঁছে গিয়েছেন। অচিরেই খালি হয়ে যাবে আর্জেন্টিনার সবথেকে বড় ভরসার স্থান। পাওলো দিবালা কি পারবেন এতবড় শূন্যস্থান পূরণ করতে? আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন ভরসা রাখছে দিবালার প্রতি, এবার ‘লা জোয়া’র আলোতে পৃথিবী রাঙিয়ে দেবার পালা।