ইডেন উদ্যান একাদশ

ইডেন গার্ডেন্স – বাঙালির প্রিয় শহরের প্রিয় মাঠে অসংখ্য অসামান্য ক্রিকেটীয় স্মৃতি তৈরি হয়েছে। ‘রোমের কোলোসিয়ামকে ক্রিকেটের উত্তর ইডেন’, কথাটা বোধহয় ভুল না। সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র মাঠ যেখানে ফুটবল এবং ক্রিকেট, বাঙালির প্রিয় দুই খেলার দেবতার পায়ের ধুলো পড়েছে।

এহেন ইডেনকে কুর্নিশ জানিয়ে তৈরি করছি ইডেন উদ্যান একাদশ। বয়োজ্যেষ্ঠ দের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে রাখি দলের ভারসাম্যের স্বার্থে রোহান কানহাই, ইয়ান চ্যাপেল, রিচি বেনো, কিথ মিলার (যিনি ইডেনে একটি বেসরকারি টেস্টে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন) দের নিতে না পারার জন্যে। এই দল তৈরি করতে শুধু শুষ্ক পরিসংখ্যানের বাইরেও ক্রিকেটীয় রোমান্স সমান গুরুত্ব পেয়েছে।

  • ওপেনার : মুশতাক আলী ও পঙ্কজ রায়

মুশতাকের ইডেনে রেকর্ড হয়তো আহামরি নয়। কিন্তু যে আবেগ তিনি ইডেন জনতার মনে সঞ্চার করেছিলেন, তেমন সৌরভ ছাড়া আর কোনো খেলোয়াড়ের জন্যে সঞ্চারিত হয়েছিল কিনা সন্দেহ। লিন্ডসে হাসেটের নেতৃত্বে কিথ মিলার সম্বলিত অস্ট্রেলিয়ান সার্ভিসেস একাদশের বিরুদ্ধে বেসরকারি টেস্টে দুলীপসিংজির নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি দল থেকে মুশতাক কে বাদ দেয়।

এরপর ইডেন জনতা নির্বাচক প্রধান কে ঘেরাও থেকে শুরু করে, ‘No Mushtaq, No Test’- এর স্লোগান অব্দি কিছুই বাদ রাখেনি। শেষে মুশতাক কে বাধ্য হয়ে দলে ঢোকাতে হয়। মুশতাক এর সঙ্গী হিসেবে নামবেন পঙ্কজ। রয় গিলক্রিস্ট এর বিরুদ্ধে তাঁর বন্য সাহসিকতায় ভরা জোড়া সেঞ্চুরি আজও ইডেনের লোকগাথা হয়ে রয়ে গেছে।

এছাড়াও তৎকালীন ওপেনিং জুড়ির বিশ্বরেকর্ড করার ঠিক আগের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ বাঁচানো সেঞ্চুরি রায়ের ক্রিকেট জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

  • মিডল অর্ডার: রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষণ, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন

এই তিনজনকে কে নিয়ে কারুর কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। ইডেনে এদের প্রভাব এমনই, যে ২৫৬ খ্যাত কানহাই বাদ পড়েছেন।

  • অল রাউন্ডার: টনি গ্রেগ

দাতু ফাদকার ছাড়া একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ইডেনে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট, এই দুই কীর্তিই করে দেখিয়েছেন। ১৯৭৭ এ বেদি, চন্দ্রশেখর, প্রসন্ন খেলে সেঞ্চুরি করে হাটু মুড়ে বসে জিতে নেন এক লক্ষ লোকের মন।

ইয়ান চ্যাপেলের মতো ‘খারুজ’ ক্রিকেটার যেখানে ইডেনের ব্যারাকিং সহ্য করতে না পেরে ৯৯ তে আউট হন, গ্রেইগ সেখানে এই ধূর্ত গেমসমানশিপের সাহায্যে পুরো জনতাকেই নিজের দিকে করে নেন। যাঁরা সেই দিন মাঠে ছিলেন, আজো তাঁরা মুগ্ধ হয়ে সেই দিনটার কথা বলেন।

  • উইকেটরক্ষক: মহেন্দ্র সিং ধোনি

অনেকেই খোকন সেন বা কিরমানি বা সাহার কথা বলবেন, কিন্তু ধোনির স্থায়িত্ব এবং দারুন ব্যাটিং রেকর্ড (৯১.৪০ গড় ইডেনে ) তাঁকে দলে রাখতে বাধ্য করে।

  • স্পিনার: হরভজন সিং, ভগবত চন্দ্রশেখর

হরভজন নিয়ে সংশয় থাকার কথা না। চন্দ্রশেখর সাদামাঠা রেকর্ড সত্ত্বেও রয়ে যাবেন। কারণ ১৯৭৫ এর প্রথম দিনে তাঁর স্পেল। আগেরদিন কালীচরণের হাতে বেধড়ক মার খাবার পরে মোটামুটি গোটা ইডেনের চক্ষুশূল হয়ে গেছিলেন চন্দ্র। শেষ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ১৫০র আশেপাশে, হাতে সাত উইকেট।

পতৌদি কোনো এক সাংবাদিককে (বোধহয় রাজন বলা) হুইস্কির গ্লাস হাতে বললেন কাল চন্দ্রই জেতাবে। সাংবাদিক ভাবলেন বেদি প্রসন্ন থাকতে চন্দ্র? তাও ওই মার্ খাবার পর? দু পাত্তর পেতে যেতেই কি অধিনায়ক পাতৌদির নেশা ছোড়ে গেলো?

পরেরদিন সকলকে অবাক করে লয়েড, কালীচরণ তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে কে ভাঙলেন চন্দ্রশেখর। ২০০১ এর সেই মায়াবী বিকেলের আগে সেটাই সম্ভবত ইডেনের সবচেয়ে নাটকীয় দিন ছিল।

  • পেসার: ম্যালকম মার্শাল, শোয়েব আখতার

১৯৮৩ তে ম্যাচের প্রথম বলে গাভাস্কারকে আউট করেন প্রথম জন। দ্বিতীয় জন পরপর দুই বলে দ্রাবিড় ও সচিনকে বিষাক্ত ইয়র্কারে তুলে নেন। এই দুজন ছাড়া নতুন বল হাতে আর কাউকে ভাবতে পারলাম না। শোয়াইব অবশ্য রানআউট বিতর্কে ইডেনের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন ১৯৯৯ এর সেই টেস্টেই। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায়, যে মাঠ ফাঁকা করিয়ে শেষ দিনের খেলা করতে হয়।

  • দ্বাদশ ব্যক্তি এবং নন প্লয়িং অধিনায়ক: সৌরভ গাঙ্গুলি

এই ভদ্রলোকটি ছাড়া ইডেনে অন্য কেউ টস করতে যাবেন, সেটা ভাবা সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link