বেশ কদিন আগেই ইয়ুর্গেন ক্লপ দিয়েছিলেন লিভারপুল ছাড়ার ঘোষণা। সেই ঘোষণার সাথেই ঘটে গেল আরও একটি সুন্দর অধ্যায়ের সমাপ্তি। যে অধ্যায় জুড়ে ছিল শ্রেষ্ঠত্ব। না স্রেফ ইয়ুর্গেন ক্লপের নয়, সে অধ্যায়ের আরেক চরিত্র পেপ গার্দিওলাও।
ভিন্ন দেশের ভিন্ন ফুটবলার গার্দিওলা-ক্লপ। একজন স্পেনের, আরেকজন জার্মানির। তবে আসল পরিচয়টা কোচ হিসেবেই তৈরী করেছেন এই দুই মহারথী। আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা এই দু’জনের দ্বৈরথ চলছিল গত এক যুগ ধরে। এমন এক দ্বৈরথ, যেখানে হারেনি কেউ।
স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন-আর্সেন ওয়েঙ্গারের পর এই কোচ যুগলই ধরে রেখেছেন মাঠ এবং মাঠের বাইরের উত্তেজনা। মাঠে খেলেছে শিষ্যরা, বাইরে থেকে উত্তেজনা ছড়িয়েছন এই দু’জন। কখনো বোতল ছুড়ে, কখনো বা উল্লাস করত করতে হ্যামস্ট্রিং ইঞ্জুরিতে পড়ে।
বায়ার্ন মিউনিখ-বুরুশিয়া ডর্টমুণ্ডের পর ম্যানচেস্টার সিটি-লিভারপুল। গার্দিওলা-ক্লপ প্রতি ম্যাচেই ছড়িয়েছে টানটান উত্তেজনা। এই দুইজনের উর্বর মস্তিষ্কের দারুণ লড়াই উপভোগ করেছেন ফুটবল পাগল দর্শকেরা। গার্দিওলা-ক্লপ তাদের কোচিং ক্যারিয়ারে মুখোমুখী হয়েছেন সর্বমোট ৩০ টি ম্যাচ। যার মধ্যে ক্লপের জয় ১২ টি, গার্দিওলার জয় ১১ টি এবং ড্র হয়েছে ৭ টি। দু’জনই নিজ নিজ জায়গায় সেরা।
বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ অতঃপর ম্যানচেস্টার সিটি, গার্দিওলা রাজত্ব করেছেন সব জায়গায়। অন্য দিকে, বুরুশিয়া ডর্টমুণ্ডের পর লিভারপুলে নিজের জাত চিনিয়েছেন ক্লপ।
আধুনিক ফুটবলের সংজ্ঞা আর কৌশলে দারুণ পরির্বতনের পথিকৃৎ এই দু’জন। কখনো মাঝ মাঠের দখল, কখনো বা হঠাৎ আক্রমণ। এভাবেই বিভিন্ন ট্যাক্টিস দিয়ে পুরো নব্বই মিনিট ধরে রেখেছেন দর্শকের দৃষ্টি। লক্ষণীয় যে, ২০১০ সালের বিশ্বকাপ জয়ী স্পেন, ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ী জার্মান, উভয় দলেই এই দুই কোচের শিষ্যই ছিল বেশি। বর্তমানেও ইংল্যান্ড জাতীয় দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গার্দিওলা-ক্লপের শিষ্যরা।
এই দুই মহারথীর দ্বৈরথের ইতি ঘটেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ দিয়ে। লিভারপুল এবং ম্যানচেস্টার সিটি মানেই হাইভোল্টেজ ম্যাচ। তাদের শেষ মোলাকাতের ফলাফল ১-১ গোলে ড্র। শেষবেলায় তাই পরাজিত হয়ে কেউ ছাড়েননি মাঠ। ৯০ মিনিট নিজেদের মধ্যে লড়াই চললেও, মাঠের বাইরে তাদের সম্পর্কটা জম্পেশ। একজন অপরজনকে সম্মান করে গেছেন পুরোটা সময় জুড়ে।
তাইতো নিজেদের মধ্যে মুখোমুখি হওয়া শেষ ম্যাচ শেষে দু’জন কথা বললেন বেশ অনেকক্ষণ। কে জানে, হয়তো সুযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করছিলেন। এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়ত সহসাই ঘটবে না ফুটবলে। তবে ফুটবল নিশ্চয়ই চমকে দেওয়াতে কখনোই কার্পণ্য করেনি। এই গোলকের ঘূর্ণনে এই দুই মহারথী আবার হবেন মুখোমুখি, সেদিন কি আলাপ করবেন তারা?