চাহালকে আক্রমণ করাটা খুব সহজ কোনো কাজ নয়। রশিদ খানের মতন ক্রেজ তোলেন না বলে বলে, নারাইন-মুজিবদের মতো রহস্যও লুকিয়ে রাখেন না হাতের পাঁচ আঙুলে।
কিন্তু, মাথাভর্তি দাবা খেলবার বুদ্ধি নিয়ে ঘোরেন বলে বলটা করেন খুব বুঝেশুনে, চিন্নাস্বামীর ছোট মাঠে বল করেও তার আইপিএল ইকোনমিটা তাই ৭.৭৮, চারিপাশে এতজন থাকবার পরেও বিরাট কোহলি তাকে ভরসা করেন।
মহেন্দ্র সিং ধোনি নেমে প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই সেই চাহালকে পেয়েছিলেন; ‘শুরুর ধোনি খুব ধীর’, এমন অপবাদ সঙ্গী যার অনেকদিন ধরেই। এবার অবশ্য শুরুটা দেখেশুনে করলেন না, চাহালকে লং-অন দিয়ে ছয় মারলেন তৃতীয় বলেই।
চেন্নাইয়ের ইনিংসের বাকি তখনো ২৭ বল, চেন্নাইয়ের চাই ৬৬ রান। আপাতঅসাধ্য এ লক্ষ্যে অবশ্য ঘাবড়ে যাবার কারণ দেখছেন না অনেকে; কখনো শেষ ওভারে ১৫, কখনোবা ২৩ তুলে ধোনি যে ভীষণ অসম্ভবে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছেন গোটা এক প্রজন্মকে।
ধোনিকে করা পরের বলটা চাহাল ঝুলিয়ে দিলেন কিছুটা, ধোনি প্রথমে মারতে চেয়েও পরে নিজেকে সামলে নিয়ে পরে খেললেন দুই রানের জন্যে। পরের বলটায় চাহাল গতি কমালেন আরও, এবারে মাত্র ৭৮.৮ কি.মি/ঘণ্টা। ধোনি মারতে চেয়েও লাগাতে পারলেন না। দুই ছক্কা আর হচ্ছে না।
ওভারের শেষ বল। চাহাল জানতেন, ধোনি বলের গতি বাড়িয়ে খেলবার জন্যে সামনে এগুতে চাইবেন। বলটা তাই হাওয়ায় ছুড়ে দিলেন স্ট্রাইক প্রান্তের প্রায় ওয়াইড লাইন তাক করে। যে রিফ্লেক্সের জন্যে ধোনি চিরবিখ্যাত, তা দুবাইতে ফিরে এলো আরেকটিবার। উইকেটে প্রায় বসে পড়া ধোনি বলটা নাগালে আনলেন, বলটা লাগলো প্রায় মাঝব্যাটে।
সেই শটের পরিণতি ছয় ভেবে ফেলেছিলেন কেউ কেউ, অতীত অভিজ্ঞতা তাদের ‘ছয়’ ভেবে নিতেই বাধ্য করেছিল। কিন্তু আজকের দিনটা যে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের তফাতের পাঠ দেবার নিয়ত করেছিল। বলটা মাঝব্যাটে লাগলেও লং-অফ সীমানার দিকে উড়ে গেল ভীষণ নিচু হয়ে, সেখানে তখন গুরকিরাত সিং দাঁড়িয়ে।
দুবাইতে অনেক ক্যাচ পড়লেও এবারে আর গুরকিরাত ক্যাচটা ফেললেন না, ধোনি ৬ বলে ১০-য়ের বেশি করতে পারলেন না। চেন্নাইয়ের শেষ চার ওভারেও ২৬-য়ের বেশি উঠলো না।
ধোনি ব্যর্থ হয়ে সাজঘরে ফেরত এলেন। টিভিপর্দায় উদাস চোখে তাকিয়ে থাকা একটা প্রজন্ম জানলেন, ধোনি বুড়িয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভীষণ অবিশ্বাসে বিশ্বাস করবার দিন ফুরিয়েছেন।